শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

Sex Cams

এক্সক্লুসিভঃ করোনা পরিস্থিতি আমেরিকাজুড়ে।। মুসলমানদের লাশ না পুড়ানোর প্রচেস্টা অব্যাহত




এমদাদ চৌধুরী দীপু, নিউইয়র্কঃ
গত ২৩ মার্চ আমেরিকায় আক্রান্ত ছিল ৪২হাজারের উপরে। গত ৩০ মার্চ সেটি দাড়ায় ১,লাখ ৬৪,হাজারের উপরে। বর্তমান সংখ্যা ৪লাখ ৬৮ হাজার,এক সপ্তাহেই বেড়েছে তিনলাখ।
মাত্র দু সপ্তাহে আমেরিকার করোনা চিত্র ভয়ংকর রুপ নিয়েছে । এই সপ্তাহ এবং আগামী সপ্তাহে আকস্মিক কিছু যদি না হয় ,কোন প্রতিষেধক কিংবা আবিস্কার যদি অবনতি আটকাতে না পারে তবে লক্ষাধিক মানুষের প্রাণহানী হতে পারে আমেরিকায়।
বিপুল সংখ্যক মানুষের প্রানহানীর কারনে লাশ পুড়িয়ে ফেলার সিদ্বান্ত নিয়েছে আমেরিকা। ইতিমধ্যে পেন্টাগনের কাছে লাশ পুড়ানোর একলাখ বেগ সরবরাহের অনুরোধ জানিয়েছে আমেরিকা।
মাত্র ৫১৭জনের মৃত্যু ছিল গতমাসের ২৩ তারিখ অর্থাৎ ২৩ মার্চ,সপ্তাহ শেষে সেটি দাড়ায় ৩১৬৫ জনে গত ৩০ মার্চ। আজ ৯এপ্রিল এখানে মৃতের সংখ্যা ১৬ হাজার ৬৯১জন। দুই সপ্তাহে মৃত্যুই বেড়েছে ১৬হাজার। এসবের বিপরীতে আরোগ্য আছে প্রায় ২৬ হাজার। ৩০টি রাজ্যে নেই আরোগ্য হওয়ার সুখবর। নিউইয়র্কসহ বিভিন্ন রাজ্যে বিণিœ সংখ্যায় সুস্থ হচ্ছেন এমন রাজ্য হচ্ছে ২৩টি। সামগ্রিক বিবেচনায় চরম নাজুক এক পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে আমেরিকার করোনা পরিস্থিতি।
এমন বাস্তবতায় মুসলমানদের লাশ না পুড়ানোর আবেদন জানানো হচ্ছে আমেরিকা সরকারের কাছে। এটি বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন ৫০ হাজার নাগরিকের স্বাক্ষর। এটর্নি ইসরাত সামী সবাইকে স্বাক্ষর সংগ্রহ প্রক্রিয়ায় সহযোগীতার আহŸান জানিয়েছেন।
প্রায় মাসখানেক সময় থেকে সৃস্ট করোনা পরিস্থিতিতে এ পর্যন্ত ৮১জন এর উপরে বাংলাদেশী মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। প্রতিদিন মারা যাওয়ার খবর আসছে।এদের মধ্যে আছেন চিকিৎসক,কমিউিনিটি নেতা,রাজনৈতিক নেতা সহ নানা শ্রেনী ও পেশার মানুষ। ২১ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়েছে ইমিগ্রেশনের সব কর্মকান্ড। তবে এটর্নি ইসরাত সামী টাইম টেলিভিশনের সাথে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বলেছেন ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত যাদের এপয়েনমেন্ট ছিল তারা নতুন তারিখ পাবেন।
পাল্টে গেছে নিউইয়র্কসহ আমেরিকার ৫০টি অঙ্গ্রাজ্যের জীবন যাত্রার দৃশ্যপট।এক দুই সপ্তাহে এখানে আক্রান্ত রোগী বেড়েছে প্রায় চারলাখ ২০ হাজার,আর মৃতের সংখ্যা বেড়েছে ১৬ হাজারের উপরে। গত সপ্তাহেই আক্রান্ত রোগী বিবেচনায় বিশ্বের সব দেশকে টপকে শীর্ষ করোনা আক্রান্ত দেশের আখ্যা পেয়েছে আমেরিকা। আমেরিকায় আগামী সপ্তাহে মৃত্যুর সংখা আরো বাড়ার আশংকা থাকলেও আক্রান্ত বিবেচনায় শীর্ষে থাকা রাজ্যে কমে আসবে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা, তবে অন্যান্য রাজ্যে বাড়বে আক্রান্ত এবং মৃত্যু।
এছাড়া আরোগ্য হওয়ার হার বাড়তে পারে বলে মনে করছে সংশ্লিস্ট বিভিন্ন মহল।এদিকে চিকিৎসক এবং নার্সসহ স্বাস্থ্য সেবার লোক কমে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে আমেরিকায় করোনা পরিস্থিতির প্রত্যাশিত উন্নতি হচ্ছেনা বলে মনে করেন অনেক বাংলাদেশী চিকিৎসক। ইতিমধ্যে জেবিট কনভেনশন সেন্টাওে ৩হাজার বেডের হাসপাতাল করোনা সেবা শুরু করেছে।
দুই সপ্তাহে ৮১জন এর বেশী বাংলাদেশীর মৃত্যুতে দেশ এবং সারা বিশ্বে বসবাসরত বাংলাদেশীদের মাঝে বিরাজ করছে শোক আর সমবেদনা। বিভিন্ন ইসলামী সংগঠন,ইসলামিক সেন্টার,ইমামদেও সংগঠন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে মৃতদেও জানাজা,এবং কবওে সমাহিত করার জন্য। এর মধ্যে মুসলিম উম্মাহ নর্থ আমেরিকা মুনা হটলাইন চালু করেছে,ইউনাটেড উলামা পরিষদ জানাজা এবং দাফনে সহায়তা করছে। রোজা পালন,নফল নামাজ,কোরআন খতম,বড়তসবিহ,সহ নানাভাবে এবাদত বন্দেগীর মধ্যদিয়ে বাংলাদেশীসহ বিশ্বের সকল মানুষের করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তির জন্য দোয়া করছেন বাংলাদেশীরা। আমেরিকায় বসবাসরত বাংলাদেশীদের প্রতিটি বাড়ি ঘর এখন একেকটি এবাদতখানায় পরিণত হয়েছে। সবার একটাই আকুতি মহামারী থেকে মুক্তি।
তবে অনেক হতাশার মাঝে আশার কথা হচ্ছে রোগ থেকে মুক্তির সংখ্যাও বাড়ছে। দই সপ্তাহে ২৬ হাজার রোগী করোনা থেকে মুক্তি পেয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
গত দই সপ্তাহে অস্বাভাবিক রোগী বৃদ্বি এবং মৃত্যুর ঘটনা সব অঙ্রাজ্যে ছড়িয়েছে। রাজ্যে রাজ্যে মৃত্যুর মিছিল কোন ভাবেই থামানো যাচ্ছেনা। পুরো আমেরিকাজুড়ে এমন নাজুক পরিস্থিতি বিরাজ করছে যা অতীতে কেউ দেখেনি কিংবা শুনেনি। ৫০ অঙ্গরাজ্যের মধ্যে যে সব অঙ্গরাজ্যে মৃত্যু এবং আক্রান্ত রোগী বেশী সে তালিকায় রয়েছে নিউইয়র্ক,নিউজার্সী,ওয়াশিংটন,কেলিফোর্নিয়া,মেসাজুসেট,ইলিনইস,পেনসেলভেনিয়া,ইন্ডিয়ানা,মিশিগান,ফ্লোরিডা,লুসিয়ানা,জর্জিয়া,টেক্সাস,কানেকটিকা। এছাড়া অন্যান্য অঙ্গরাজ্যগুলো আক্রান্ত এবং মৃত্যু সবই উদ্বেগ এবং আতংক সৃস্টিকারী সকল দেশ,সকল মহল,সকল ধর্ম,বর্নের মানুষের জন্য।
নিউইয়র্কঃ
২৩মার্চ নিউইয়র্কে আক্রান্ত রোগী ছিল ২০৮৭৫ জন,গতসপ্তাহে ৫৯৫১৩ জন। আজ১,৬১,০০০এর উপরে। আজ মৃতের সংখ্যা ৭০৬৭ এর উপওে,গতসপ্তাহে মৃতের সংখ্যা ১৩৪২জন যা ২৩ মার্চ ছিল ১৫৭জন। দু,সপ্তাহ যাবত নিউইয়র্ক লকডাউন ছিল,এবং সেটি ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।
নিউজার্সীঃ
নিউজার্সীতে এখন আক্রান্তের সংখ্যা,৪৭,৪৩৭ এর উপওে,গতসপ্তাহে ১৩৩৮৬জন,যা ২৩মার্চ ছিল ২৮৪৪ জন। মৃতের সংখ্যা আজ১৫০৪জন,গতসপ্তাহে ছিল, ১৯৮জন,দুই সপ্তাহ আগে ছিল ২৭জন।
ওয়াশিংটনঃ
আজকের চিত্র আক্রান্ত ৯০৯৭জন,মৃত ৪২১জন। যা গত সপ্তাহে ছিল ৪৩৯২জন ,মারা গেছেন ২০২জন। দুই সপ্তাহে আগে সে চিত্র ছিল আক্রান্ত ১৯৯৬ জন,মৃত্যু,৯৫ জন।
মিশিগানঃ
মিশিগান অঙ্গরাজ্যে এ যাবত করোনা আক্রান্ত সনাক্ত হয়েছে ২১ হাজার ৫০৪জনের উপরে,মারা গেছেন ১০৭৬জন। এক সপ্তাহ আগে এটি ছিল আক্রান্ত ৬৪৯৮জন,আর মারা গেছেন ১৮৪জন। মাত্র দুই সপ্তাহে নাজুক মিশিগান অঙ্গরাজ্যে করোনা ভাইরাস চিত্র। ২৩মার্চ ছিল মাত্র ১৫জন মারা যাওয়ার খবর। আক্রান্ত ছিল ১৩২৮জন। আক্রান্ত রোগী বেড়েছে ২০ হাজার।
কেলিফোর্নিয়াঃ
কেলিফোর্নিয়ায় মারা গেছেন ৫০৩জন, এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৪৫ জন,এখন আক্রান্ত ১৯হাজারের উপওে,এক সপ্তা আগে ছিল আক্রান্ত রোগী ৫৮৪৬জন। যা দুই সপ্তাহ আগে ছিল মৃত্যু ৩৮জন,আক্রান্ত রোগী ১৯৪৬জন।
মেসাজুসেটঃ
মেসাজুসেট অঙ্গরাজ্য আলোচনায় আক্রান্ত প্রায় ১৭হাজার রোগীর কারনে,যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৪৯৫৫জন রোগীর কারনে,এই অঙ্গরাজ্যে মারা গেছেন,৪৩৩জন,যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৫৬জন। মাত্র দুই সপ্তাহে পরিবর্তন অন্যান্য অঙ্গরাজ্যের মত বিস্ময়কর। ২৩মার্চ রোগী ছিল ৭৭৭জন,আর মৃত্যু ছিল মাত্র ৭জন।
ইলিনইসঃ
এই অঙ্গরাজ্যে এখন রোগী ১৬হাজারের উপরে,মারা গেছেন ৫২৮জন। এক সপ্তাহ আগে আক্রান্ত ছিল ৫০৫৭জন করোনা রোগীর যন্ত্রনায় কাতর, মারা গেছেন ১৯৮জন। অথচ দুই সপ্তাহ আগে ১২৮৫জন রোগী সনাক্ত হয়েছিল,মারা গিয়েছির ২৭জন।
পেনসেলভেনিয়াঃ
পেনসেলভেনিয়া অঙ্গরাজ্যে রোগী ১৬হাজারের উপওে,মারা গেছেন ৩০৯জন। এক সপ্তা আগে ৪১৫৪জন করোনা রোগী সনাক্ত হয়েছে,মারা গেছেন ৫১জন। যা দুই সপ্তাহ আগের রেকর্ডে আছে আক্রান্ত৮৫১জন,মৃত্যু ৭জন।
ইন্ডিয়ানাঃ
ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যে এখন আক্রান্ত রোগী ৬হাজারেরউপওে,মারা গেছেন ২৪৫জন। এক সপ্তাহ আগে আক্রান্ত ছিল,১৭৮৬জন,মারা গেছেন ৩৫জন। তিনগুন বৃদ্বি পেয়েছে মৃত্যু।দুই সপ্তাহ আগে যা ছিল আক্রান্ত ৩৬৫জন মৃত্যু ১২জন।
ফ্লোরিডাঃ
ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যে এখন আক্রান্ত১৬হাজারের উপরে,মারা গেছেন ৩৫৪জন। এক সপ্তাহ আগে আক্রান্ত ৫৭০৪জন,২৩মার্চ যা ছিল ১১৭১জন। দুই সপ্তাহ আগে মারা গেছেন ১৪জন,গত সপ্তাহে সেটি দাড়ায় ৭১জন।

সম্পাদক: শাহ সুহেল আহমদ
প্যারিস ফ্রান্স থেকে প্রচারিত

সার্চ/খুঁজুন: