শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

Sex Cams

২১শে ফেব্রুয়ারি ও মধূসুদন দত্ত




কামরুল ইসলাম, ফ্রান্স থেকে

এক.
ফ্রান্সে আসার পর একটা বিষয় লক্ষ করছি খুব করে, সেটা ভাষা। একটা জাতি কি করে নিজেদের অস্তিত্বের সবটুকু জোড়ে ভাষাকে ধারণ করে তা ইউরোপে না আসলে বোধগম্য হতো না। গান, গল্প -কবিতা, গবেষণা, ইউনিভার্সটির পড়ালেখা, অফিস-আদালত,সেমিনার, আন্তঃজাতিক সম্পর্ক, সবকিছুই চলে নিজেদের ভাষায়। আপনি যদি এদেশে নতুন আসেন, তাহলে লক্ষ করবেন কেউই ইংরেজী ভাষা ব্যবহার করেন না। এমন নয় যে, ফরাসীরা ইংরেজী জানেন না। প্রত্যেকেই কম বেশি পারেন ইংরেজীতে কথা বলতে। কিন্তু ‘বোয়োজু’ শব্দটি যতবার শুনবেন তার একশ ভাগের এক ভাগও ‘গুড মর্নিং’ শুনবেন না।

দুই.
বাংলা সাহিত্যের মহাকবি মাইকেল মধূসুদন দত্ত মারা যান ১৮৭৩ সালের ২৯ জুন মাত্র ৪৯ বছর বয়সে। কবি ১৮৬০ সালে ফ্রান্সের ভার্সাই নগরীতে আসেন। এখানে বসেই কবি লিখেন তাঁর বিখ্যাত ‘চতুদশী কবিতাবলি’ কাব্য! অনেকই হয়তো ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতাটির জন্য এই কাব্যটিকে চিনে থাকবেন।
‘সতত, হে নদ তুমি পড় মোর মনে…
……
শেষ দু’টি লাইন ছিলো এমন।

‘নাম তার এ প্রবাসে মজি প্রেমভাবে/
লইছে যে নাম তব বঙ্গের সঙ্গীতে।’

এই দু’টি লাইন যখন কবি লিখেন তখনো কিন্তু বাংলা ভাষার জন্য সালাম -রফিক -জব্বার রক্ত দিয়ে শহিদ হন নি! কিন্তু কবি ভার্সাই নগরীতে বসে ঠিকই নিজ ভাষার গুরুত্ব বুঝতে শিখেছেন। ‘ক্যাপটিভ লেডি’ লেখার পরও তিনি নিজের ভাষায় সনেট লিখে আজ অমর হয়ে আছেন। বাংলাকে ধারণ করেই মাইকেল মহাকবি হয়ে উঠেছেন।

তিন.

আমাদের দেশে আজো উচ্চ আদালতের রায় লেখা হয় ইংরেজীতে। বাবা-মা ছেলেমেয়েদের ইংরেজী শিক্ষার জন্য যে সময় ও টাকা খরচ করেন তার শিকিভাগও শুদ্ধ বাংলার জন্য করেন না। এটি আসলে পরিবেশ হয়ে উঠেনি বলেও ১৯৫২ সালে রক্ত দিয়ে ভাষার মান বাঁচিয়েছেন ঠিকই, আন্তঃজাতিক ভাষা দিবসের মর্যাদা পেয়েছে বাংলা বটেই কিন্তু আন্তঃজাতিক ভাষা হয়ে উঠেনি আজো!
যে উর্দুর বিরুদ্ধে লড়তে হয়েছে, রক্ত ঝরেছে আমাদের পূর্বসূরিদের। সেটা কিন্তু ‘হিন্দি ‘ বড্ড অনায়াসে ঘরে ঘরে আসন পেতে রয়েছে! অতি শিক্ষত ঘর থেকে গ্রামে-গঞ্জে হিন্দি সিরিয়ালের প্রভাবে বাংলা নাটক, সিনেমা কিংবা চ্যানেল আজকাল মা-বোন, ভাবি, চাচিরা দেখা ভুলে যাচ্ছেন!
মাইকেল শতবছর আগে ভাষার প্রতি যে প্রেম শিখেছেন, তা কবিতার মাধ্যমে আমাদের বলতে চেয়েছেন এভাবে-
‘হে বঙ্গ, ভান্ডারে তব বিবিধ রতন,
তা সবে (অবোধ আমি!) অবহেলা করি,
পর-ধন-লোভে মত্ত, করিনু ভ্রমণ
পরদেশে, ভিক্ষাবৃত্তি কুক্ষণে আচরি।’
(বঙ্গভাষা)

করোনার মহামারির সময়ের মধ্যে ২০২১ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি পালিত হতে যাচ্ছে। এই সংকটময় সময়ে বাংলা ভাষাও আগ্রাসনের মধ্যে পড়ে সংকটে আছে! সে আগ্রাসন থেকে মানুষ ও ভাষা মুক্তি পাক কবির কথায় ‘ বঙ্গের সঙ্গীতে’!

সম্পাদক: শাহ সুহেল আহমদ
প্যারিস ফ্রান্স থেকে প্রচারিত

সার্চ/খুঁজুন: