বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

Sex Cams

গবেষক দেওয়ান নূরুল আনোয়ার হোসেন চৌধুরীর ইন্তেকাল




আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন গবেষক দেওয়ান নূরুল আনোয়ার হোসেন চৌধুরীর ইন্তেকাল
এম.শহিদুজ্জামান চৌধুরী
————————————-

বাংলাদেশ সরকারের অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ন সচিব, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সাবেক মহপরিচালক আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন লেখক, গবেষক ও ইসলামী চিন্তাবিদ দেওয়ান নূরুল আনোয়ার হোসেন চৌধুরী আর জীবিত নেই আজ সকাল দশটায় ৮৫ বছর বয়সে তিনি ঢাকায় ইন্তেকাল করেন ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মরহুমের জানাজা আজ বাদ আসর ঢাকার জিগাতলা জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত হওয়ার পর তাঁকে স্ত্রীর কবরের পাশে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হবে।

সাহিত্যের যে কটি শাখা প্রশাখা রয়েছে এর মধ্যে সবচেয়ে কঠিনতম হচ্ছে গবেষণা। যে কোনো বিষয়ের উপর গবেষণা সম্পন্ন বা সম্পাদন করতে অসীম ধ্যর্য্য, অঢেল অর্থ, সহ জীবনের অধিক মূল্যবান সময় ব্যয় করতে হয়। আর এই অসীম পরিশ্রমের ফলাফলে মানব সমাজে ইতিহাসের অন্তরালে হারিয়ে যাওয়া অনেক ইতিহাসের স্বরূপ নতুন প্রজন্মের সম্মুখে উন্মোচিত হয়।সমৃদ্ধ হয় ইতিহাস ঐতিহ্য। সে জন্য গবেষকদের মর্যাদা অনন্য। তারা তাদের অনবদ্য কর্মের জন্য যুগযুগান্তর ইতিহাসে বেঁচে থাকেন। গবেষণা কর্মের নন্দিত এক ইতিহাস লেখক ছিলেন দেওয়ান নুরুল আনোয়ার হোসেন চৌধুরী। যার অক্লান্ত তপস্যার ফসল আমাদের বাংলা সাহিত্য কে করেছে সমৃদ্ধ। কিংবদন্তি তুল্য এই লেখক গবেষক ২৮ শে ফেব্রুয়ারি ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দে হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার দিনারপুর পরগনার সদরঘাট গ্রামে এক ঐতিহ্যবাহী মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। উনার পূর্ব-পুরুষ হযরত শাহজালাল ইয়ামনি (রহঃ)- এর অন্যতম সফরসঙ্গী হযরত হযরত শাহ তাজ উদ্দিন কুরায়শী(রহঃ)। দেওয়ান নূরুল আনোয়ার হোসেন চৌধুরীর পিতা-দেওয়ান আলী গওহর চৌধুরী (মৃত্যু ৭ জানুয়ারি, মাতা কুলসুম আখতার চৌধুরী (মৃত্যু ২৬ জানুয়ারি ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে)। পারিবারিক শিক্ষায় বেড়ে উঠা এই লেখক নিজ গ্রামের পাঠশালায় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে তৃতীয়মান পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে তিনি দিনারপুর এম,ই মাদ্রাসায় ভর্তি হন। ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে দিনারপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ক্লাস সেভেনে ভর্তি হয়ে ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে এসএসসি উত্তীর্ণ হন। ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে মৌলভীবাজার কলেজ থেকে আই কম ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা সলিমুল্লাহ কলেজ (ঢা :বি:) অধীনে বি.এ. পাস করেন। ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এল এল বি সম্পন্ন করে কর্মজীবনের দ্বার উন্মোচন করেন। ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা জর্জ কোর্টে যোগ দানের মাধ্যমে আইন পেশায় তাঁর অভিষেক ঘটে। পরবর্তীতে সিলেট জেলা দায়রা জর্জ আদালত সহ অন্যান্য আদালতে ১৯৬৭ পর্যন্ত তিনি বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট এন্ড ডেপুটি কালেক্টার (ল’ইয়ার ম্যাজিস্ট্রেট থেকে) চট্রগ্রাম (সদর উত্তর) ৩১-১২-১৯৬৯ থেকে ০২-১০-১৯৭৩ খৃষ্টাব্দে (প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট, কলাবরেটার আইন ও অন্যান্য বিশেষ আইনে ক্ষমতাপ্রাপ্ত) । এভাবে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করে শেষ দিকে যুগ্ম-সচিব, সংস্থাপন মন্ত্রণালয়, ১০-১০-১৯৯৫ থেকে ২৬-০২-১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দ। ০৮-০২-১৯৯২ থেকে সিনিয়রিটি দান। অবসর গ্রহণ ২৭-০২-১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দ। এডমিনিস্ট্রেটিব ডাইরেক্টার, গ্রামীণ কোর্ট প্রজেক্ট, আইন মন্ত্রণালয়, ১১-০৬-১৯৯৭ থেকে ৩০-০৪-১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দ।

স্কুল জীবনে পদার্পণের সাথে সাথে দেওয়ান নূরুল আনোয়ার হোসেন চৌধুরী লেখালেখির ভূবনে প্রবেশ করেন। ০৭ ই মে ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর প্রথম লেখা প্রবন্ধ সিলেটের তৎকালীন সাড়াজাগানো সাপ্তাহিক আওয়াজ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এসময় বিভিন্ন সংবাদপত্রে তিনি অবিরাম লিখতে থাকেন সমসাময়িক বিষয় নিয়ে। প্রাচীনতম সাপ্তাহিক যুগভেরী ও নওবেলাল পত্রিকার তিনি কোর্ট প্রতিনিধি ছিলেন। ষাটের দশকে বিভিন্ন জাতীয় ও আঞ্চলিক পত্রিকা ম্যাগাজিনে গণদাবি নিয়ে তিনি প্রচুর কলাম ও নিবন্ধ লিখেন ; বিশেষ করে মনু নদীর ভাঙ্গন রোধে বাঁধ নির্মাণ, শেরপুর -মিরপুর সড়ক প্রসঙ্গ সহ প্রবাসীদের সমস্যা ইত্যাদি। এছাড়াও ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কর্তৃক প্রকাশিত তাঁর অনুবাদকৃত মহাগ্রন্থ আল কোরআনের বঙ্গানুবাদ ও শবেবরাতের বেদাত দুরীকরণ প্রভৃতি বিষয়গুলো পাঠকমহলে ব্যাপক সমাদৃত হয়। ১৯৭৯ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম গ্রন্থ “কাশফুল আসরার” এটি তাসাউফ জগতের অন্যতম বুজুর্গ হযরত দাতা গঞ্জে বখস আলী হুজুরী ইবনে জালালী(রহঃ) প্রণিত গ্রন্থ এর বঙ্গানুবাদ। তিনি ইংরেজি থেকে এর অনুবাদ করেন।১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় তাঁর দ্বিতীয় গ্রন্থ “সীরাতুন্নবী ও আন্তর্জাতিক ইসলামী সম্মেলন”। ১৯৮১ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর অনবদ্য মৌলিক গবেষণা গ্রন্থ ওলিকুল শিরোমণি হযরত শাহ জালাল ইয়ামনী(রহঃ)-এর জীবনী গ্রন্থ “হযরত শাহজালাল(রহঃ)” ১৭১ টি গ্রন্থের রেফারেন্সে সমৃদ্ধ একটি তথ্যবহুল গ্রন্থ। যেটি রচনা করতে তাঁর অনেক বছর কঠোর সাধনা করতে হয়েছে। ঐতিহাসিক দৃষ্টিভংগি নিয়ে লেখা গ্রন্থটিতে তিনি হযরত শাহজালালের জন্ম, সিলেট আগমনের তারিখ নির্ণয়, তাঁর সংগ্রাম, তাসাউফ সাধনা থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত ঐতিহাসিক তথ্যের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। গ্রন্থটিতে তিনি অকাট্য দলিলের মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন, হযরত শাহজালাল (রহঃ) ও তাঁর সঙ্গে আসা ৩৬০ আউলিয়াগণ শুধু সিলেটেই ইসলাম প্রচার করেন নি সমগ্র বাংলাদেশ জুড়েই তারা ইসলামের মশাল জ্বালিয়েছেন। তাঁর উক্ত গ্রন্থটি ইউরোপ আমেরিকা সহ প্রায় বিশটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার জন্য সিলেক্ট হয়েছে। গবেষকগণ অভিমত ব্যক্ত করেছেন, হযরত শাহ জালাল (রহঃ)-এর জীবনী সম্পর্কে বাংলা ভাষায় এর চেয়ে তথ্যনির্ভর আর কোনো গ্রন্থ নেই। ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় তাঁর সাড়াজাগানো মৌলিক আরেকটি গবেষণা গ্রন্থ “জালালাবাদের কথা” গ্রন্থ টির প্রথম খন্ডে সিলেটের প্রাচীন ইতিহাস এবং দ্বিতীয় খন্ডে সিলেটের ভৌগলিক বিবরণ, প্রাকৃতিক বিবরণ, সিলেটের ইতিহাস, শিক্ষা, ভাষা ও সংস্কৃতি, লোক সাহিত্যে সিলেটের অবদান, সংবাদপত্রে মুসলিম অবদান, মুসলিম আমলে সিলেটের ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা, বিচার ও প্রশাসন বিভাগ ইত্যাদি বিষয় স্থান লাভ করেছে। তাঁর প্রকাশিত অন্যান্য

সম্পাদক: শাহ সুহেল আহমদ
প্যারিস ফ্রান্স থেকে প্রচারিত

সার্চ/খুঁজুন: