সোমবার প্রকাশিত ইসলামোফোবিয়ার একটি নতুন প্রতিবেদন অনুসারে, ব্রিটিশ মুসলমানদেরকে যুক্তরাজ্য জুড়ে সবচেয়ে বৈষম্যের শিকার সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে অন্যতম হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে।
ইউনিভার্সিটি অফ বার্মিংহাম এবং ডাটা অ্যানালাইসিস ফার্ম ইউগভ-এর বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে, ব্রিটিশ জনসাধারণ অন্য যে কোনও ধর্মের তুলনায় ইসলামের প্রতি বৈষম্যমূলক এবং নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে এবং এই জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ সংখ্যালঘু ব্রিটিশ মুসলিম সম্প্রদায়ের বিষয়ে ভুল এবং ষড়যন্ত্রমূলক মতামত পোষণ করে। সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, বয়স্ক ব্যক্তিরা, শ্রমজীবী, পুরুষ, যারা ইইউ ছাড়ার পক্ষে ভোট দিয়েছেন এবং সেইসাথে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের অধীনে কনজারভেটিভ পার্টির সমর্থকরাই এই ধরনের ইসলামোফোবিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং বিশ্বাস বেশি পোষণ করেন।
গবেষণার প্রধান লেখক স্টিফেন এইচ জোন্স বলেন, ‘ইসলাম এবং মুসলমানদের প্রতি কুসংস্কার যুক্তরাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে শুধুমাত্র এই কারণেই নয় যে, এটি বেশিরভাগ বর্ণবাদের চেয়ে অনেক বেশি বিস্তৃত। বরং ইসলামের প্রতি কুসংস্কার যারা ধনী এবং সুশিক্ষিত তাদের মধ্যে আরও বেশি।’ তিনি বলেন, ‘কেউ ধর্মের সমালোচনা নিয়ন্ত্রণকারী আইনের জন্য আহ্বান জানায় না, তবে আমাদের স্বীকার করতে হবে যে, ব্রিটিশ জনগণকে পদ্ধতিগতভাবে ইসলামিক ঐতিহ্য সম্পর্কে বিভ্রান্ত করা হয়েছে এবং এর প্রতিকারের জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে।’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অমুসলিম ব্রিটিশ জনসাধারণের মধ্যে অন্যান্য ধর্মের তুলনায় ইসলামের প্রতি কুসংস্কারপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করার আশঙ্কা তিনগুণ বেশি। যুক্তরাজ্যে মুসলিম অভিবাসনে নিষেধাজ্ঞার জন্য সমর্থন অন্যান্য ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর তুলনায় ৪-৫ শতাংশ বেশি এবং ব্রিটিশ জনগণ অন্যান্য অ-খ্রিস্টান ধর্মের তুলনায় ইসলাম সম্পর্কে ভুল রায় দেয়ার ক্ষেত্রে বেশি আত্মবিশ্বাসী। প্রতিবেদনে আরও দেখা যায় যে, প্রতি চারজনের মধ্যে একজন তথাকথিত ‘শরিয়া এলাকা’ নিয়ে ষড়যন্ত্রমূলক মতামত পোষণ করেন। ২৬ দশমিক ৫ শতাংশ লোক একমত যে, যুক্তরাজ্যের এমন কিছু এলাকা রয়েছে যা শরিয়া আইনের অধীনে কাজ করে এবং সেখানে অমুসলিমদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। ৩৬ দশমিক ৩ শতাংশ একমত যে, ইসলাম ব্রিটিশদের জীবন ব্যবস্থাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। তাদের বেশিরভাগই টোরি এবং ব্রেক্সিট সমর্থক।
ব্রিটিশ জনসাধারণের এক চতুর্থাংশ মুসলমানদের প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে এবং ৯ দশমিক ৯ শতাংশ তাদের প্রতি ‘খুব নেতিবাচক’ বোধ করে। তুলনায়, জনসাধারণের মাত্র ৮ দশমিক ৫ শতাংশ ইহুদিদের প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে, ৬ দশমিক ৪ শতাংশ কালো মানুষদের প্রতি এবং ৮ দশমিক ৪ শতাংশ অন্যান্য শ্বেতাঙ্গ বিভিন্ন জাতির প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে। তবে সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তের পেশাগত গোষ্ঠীর লোকেদের মুসলিম ও ইসলামিক বিশ্বাসের বিরুদ্ধে কুসংস্কারপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করার আশঙ্কা বেশি। উচ্চতর সামাজিক গোষ্ঠীর লোকেরা অন্য নিম্নতর সামাজিক গোষ্ঠীর তুলনায় ইসলামকে কোন ব্যাখ্যা ছাড়াই ‘আক্ষরিক’ হিসাবে দেখার আশঙ্কা ৪ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি।
যুক্তরাজ্যে ইসলামোফোবিয়ার ক্রমবর্ধমান হুমকির সম্পর্কে রিপোর্ট করার পাশাপাশি, প্রতিবেদনে সরকার এবং সমানভাবে উচ্চতর সরকারি প্রতিষ্ঠানের দ্বারা ইসলামোফোবিয়া নিয়ে জনসাধারণের স্বীকৃতি সহ মুসলিম-বিরোধী বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই এবং সমাধানের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। কুসংস্কার এবং বৈষম্যের সাথে সংশ্লিষ্ট সুশীল সমাজ সংস্থা এবং সমতা সংস্থাগুলিকে স্বীকার করা উচিত যে, ব্রিটিশ সমাজে ইসলাম সম্পর্কে পদ্ধতিগত অপপ্রচার সাধারণ এবং ইসলামোফোবিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান গঠন করে।
সম্প্রতি ব্রিটেনের সাবেক মুসলিম মন্ত্রী নুসরাত ঘানি শুধুমাত্র ‘মুসলিম’ বলেই তাকে বরখাস্ত করা হয়েছিলো বলে টোরি দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার পরপরই এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। সূত্র : ডন।