নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণের দাবিতে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনে বিশাল মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশী নাগরিক পরিষদ, ফ্রান্সের উদ্যোগে আয়োজিত এ সমাবেশে বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, প্রায় দেড় কোটি প্রবাসী বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাস করছেন। তারা দেশের অর্থনীতিতে অমূল্য অবদান রাখলেও এতদিন ভোটাধিকারের বাইরে রাখা হয়েছে, যা অযৌক্তিক এবং মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করার সামিল। বক্তাদের মতে, অতীতের কোনো সরকারই এ দাবিকে বাস্তবায়নে আন্তরিকতা দেখায়নি, বরং ৫৪ বছর ধরে কেবল প্রতিশ্রুতির নামে প্রবাসীদের “মুলা ঝুলিয়ে” রাখা হয়েছে।
এছাড়া ফরাসি ভাষায় বক্তব্য রাখেন শুভেচ্ছা শেখ এবং দেশাত্মবোধক সংগীত পরিবেশন করেন প্যারিস শিল্পীগোষ্ঠীর সদস্যরা।
বাংলাদেশ নাগরিক পরিষদের সভাপতি আবুল খায়ের লস্কর এর সভাপতিত্বে ওসেক্রেটারী ইমরান আহমদের পরিচালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সংগঠনের উপদেষ্টা কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, বক্তব্য রাখেন ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক ভূঁইয়া, অনলাইন একটিভিস্ট মীর জাহান, সাংবাদিক নেতা ও ইউরো বার্তা সম্পাদক মুহাম্মদ নূরুল ইসলাম , আইসা পরিচালক ওবায়দুল্লাহ কয়েছ, বরিশাল কমিউনিটির সেক্রেটারী মনিরুল ইসলাম, সাংবাদিক নেতা ও এটিন বাংলা রিপোর্টার রাবেয়া আক্তার সুবর্না , সাংবাদিক নেতা নয়ন মামুন, লন্ডন ইউনিভার্সিটি আইন বিভাগের ছাত্রী ও ব্রান্ড এম্বেসেডর ইডনি মুসলিম উদ্দিন, সাংবাদিক মোঃ আব্দুল মালিক হিমু , সাংবাদিক এনায়েত হুসেন সুহেল, কার্যনির্বাহী সদস্য ফারিয়া মাহবুবা আলম, বন্ধন পরিচালক শিউলি গিয়াস, পরিষদ ট্রেজারার আরিফুর রহমান, কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব জিয়া উদ্দিন চৌধুরী, প্রবাসের আলো সম্পাদক ওমর ফারুক,এ ছাড়া ফরাসি ভাষায় বক্তব্য রাখেন শুভেচ্ছা শেখ ও দেশত্ববোধক গান পরিবেশন করে প্যারিস শিল্পীর গোষ্ঠীর সদস্যবৃন্দ।
বক্তারা বলেন, ফ্যাসিবাদ-বিরোধী গণঅভ্যুত্থানে বিদেশে থাকা বাংলাদেশিরা নিজেদের জীবন ও নিরাপত্তার ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছিলেন। ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটের সময়ে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স বন্ধ আন্দোলনের মতো সাহসী উদ্যোগ নিয়েছিলেন, যা সরকার পতনে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিল। ফ্রান্সে প্রবাসী বাংলাদেশিরা প্লাস দ্য লা বাস্তিল, প্লাস দ্য লা নেশন এবং প্লাস দ্য লা রিপাবলিকসহ ঐতিহাসিক স্থানে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছেন, যেখানে হাজারো মানুষ অংশ নেন।
বক্তারা আরও বলেন, এবার যদি প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত না করা হয়, তাহলে আর কখনোই এ দাবি বাস্তবায়িত হবে না। তাই আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রবাসীদের ভোটদানের সুযোগ অবিলম্বে নিশ্চিত করতে হবে।
সমাবেশ শেষে রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর একটি স্মারকলিপি হস্তান্তর করা হয়। স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়—
• মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসীদের অবদান;
• স্বাধীনতার পর থেকে রেমিট্যান্স ও বিনিয়োগের মাধ্যমে অর্থনীতিকে সচল রাখা;
• প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও সংকটে সর্বাগ্রে এগিয়ে আসা;
• সংস্কৃতি ও ভাষা চর্চার মাধ্যমে জাতীয় পরিচয় বহির্বিশ্বে তুলে ধরা—এসবই প্রমাণ করে প্রবাসীরা দেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
স্মারকলিপিতে প্রবাসীদের ভোটাধিকারের দাবিকে বৈধ ও ন্যায্য অভিহিত করে বলা হয়, প্রতিবেশী ভারত, তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বহু দেশ তাদের প্রবাসীদের ভোটাধিকার দিয়েছে, বাংলাদেশও চাইলে তা করতে পারে। এজন্য সরকার, প্রবাসী প্রতিনিধি ও প্রাসঙ্গিক মহলকে নিয়ে একটি কার্যকরী দল গঠন এবং দূতাবাসে একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিয়োগের প্রস্তাব দেওয়া হয়।
বক্তারা আশা প্রকাশ করেন, বর্তমান সরকার ইতিহাস তৈরির সুযোগ কাজে লাগাবে এবং প্রবাসীদের দীর্ঘদিনের বঞ্চনার অবসান ঘটাবে। ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠিত হলে বিদেশে বসবাসকারী দেড় কোটি বাংলাদেশি বিশ্বে দেশের “রাষ্ট্রদূত” হিসেবে আরও শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে পারবেন।