বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫ খ্রীষ্টাব্দ | ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

Sex Cams

ভূমিকম্পসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় যেসব আমল করবেন




ভূমিকম্প ও নানান প্রাকৃতিক দুর্যোগ মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে এক প্রকার সতর্কবার্তা। এমন পরিস্থিতিতে একজন মুসলমানের কর্তব্য হলো আতঙ্কিত না হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা, তাঁর কাছে আশ্রয় চাওয়া এবং ধৈর্য ধারণ করা। ভূমিকম্প, মেঘের গর্জন, ঝড়-তুফান, শিলাবৃষ্টি—প্রকৃতির এসব পরিবর্তন মহান আল্লাহ তাআলার অসীম ক্ষমতা ও মহাশক্তির (Almighty Power) ক্ষুদ্র নিদর্শন মাত্র। এসব প্রাকৃতিক ঘটনা সমগ্র সৃষ্টির ওপর আল্লাহর পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণকে স্মরণ করিয়ে দেয়। আল্লাহ তাআলা বলেন—
یُذِیۡقَ بَعۡضَكُمۡ بَاۡسَ بَعۡضٍ ؕ اُنۡظُرۡ كَیۡفَ نُصَرِّفُ الۡاٰیٰتِ لَعَلَّهُمۡ یَفۡقَهُوۡنَ

‘বলুন, তিনি তোমাদের উপর থেকে অথবা পদতল থেকে আজাব পাঠাতে (সক্ষম) অথবা তোমাদেরকে দলে দলে বিভক্ত করার মাধ্যমে একদলকে অন্যদলের সংঘাত সংঘর্ষ ও হিংসা হানাহানির আস্বাদ গ্রহণ করাতে সক্ষম। লক্ষ্য কর, আমি নিদর্শনাবলী কেমন বিস্তারিত বর্ণনা করছি যাতে তারা উপলব্ধি করতে পারে।’ (সুরা আন’আম: আয়াত ৬৫)

আল্লাহ তাআলা অন্য আয়াতে বলেন—

وَ مَا نُرۡسِلُ بِالۡاٰیٰتِ اِلَّا تَخۡوِیۡفًا

‘আমি ভয় দেখানোর জন্যই (তাদের কাছে আজাবের) নিদর্শনগুলো পাঠাই।’ (সুরা বনি ইসরাইল: আয়াত ৫৯)

এ আয়াতগুলো থেকে স্পষ্ট যে, আল্লাহ তাআলা আকাশ (যেমন—শিলাবৃষ্টি, ঝড়) অথবা জমিন (যেমন—ভূমিকম্প) উভয় দিক থেকেই মানবজাতির ওপর বিপর্যয় পাঠাতে সক্ষম। প্রকৃতির বুকে ঘটে যাওয়া যেকোনো ভয়াবহ ঘটনা, যেমন—ভূমিকম্প, তা আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের জন্য একটি সতর্কতা ও ভীতি প্রদর্শন। এ নিদর্শনগুলোর উদ্দেশ্য হলো বান্দারা যেন পাপ কাজ থেকে বিরত থাকে, আল্লাহর দিকে ফিরে আসে এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে।

সরাসরি ভূমিকম্পের জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে বিশেষ কোনো দোয়া বর্ণিত হয়নি, তাই বিশেষজ্ঞরা এ সময় সর্বাধিক শক্তিশালী কয়েকটি দোয়া পড়ার পরামর্শ দেন। যে দোয়া ও ছোট ছোট আমলগুলো সর্বাবস্থায় আল্লাহর রহমত, সাহায্য ও বিপদ থেকে মুক্তি নিশ্চিত করে। আর তাহলো—

১. اللَّهُمَّ لَا تُؤَاخِذْنَا بِذُنُوبِنَا، وَلَا تُهْلِكْنَا بِغَضَبِكَ

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লা তুআখিজনা বিজুনুবিনা, ওয়া তুহলিকনা বিগাদাবিকা।’

অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমাদের গুনাহের কারণে আমাদের পাকড়াও করো না এবং তোমার গজবে আমাদের ধ্বংস করো না।’

২. হজরত ইউনুস (আ.)-এর দোয়া

لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ

উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জলিমিন।

অর্থ: ‘তুমি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তুমি পবিত্র সুমহান; আমি জালিমদের দলভুক্ত।’ (সুরা আম্বিয়া: আয়াত ৮৭)

৩. বিপদ থেকে সার্বক্ষণিক সুরক্ষার দোয়া

بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الأَرْضِ وَلاَ فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ

উচ্চারণ: ‘বিসমিল্লাহিল্লাজি লা ইয়াদুররু মাআসমিহি শাইয়ুন ফিল আরদি, ওয়ালা ফিস সামায়ি ওয়া হুয়াস সামিউল আলিম।’

অর্থ: ‘আল্লাহ তাআলার নামে, যার নামের বরকতে আকাশ ও মাটির কোনো কিছুই কোনো অনিষ্টতা করতে পারে না। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী।’ (আবু দাউদ, তিরমিজি)

৪. অনাকাঙ্ক্ষিত বিপদ থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা—

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَدْمِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ التَّرَدِّي وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الْغَرَقِ وَالْحَرَقِ وَالْهَرَمِ وَأَعُوذُ بِكَ أَنْ يَتَخَبَّطَنِي الشَّيْطَانُ عِنْدَ الْمَوْتِ وَأَعُوذُ بِكَ أَنْ أَمُوتَ فِي سَبِيلِكَ مُدْبِرًا وَأَعُوذُ بِكَ أَنْ أَمُوتَ لَدِيغًا

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হাদমি ওয়া-আউজুবিকা মিনাত তারাদ্দি, ওয়া-আউজুবিকা মিনাল গারাকি ওয়াল-হারাকি ওয়াল-হারাম, ওয়া-আউজুবিকা আন-ইয়াতাখব্বাতানিশ শাইতনু ইনদাল মাওতি, ওয়া-আউজুবিকা আন আমুতা ফি সাবিলিকা মুদবিরান ওয়া-আউজুবিকা আন-আমুতা লাদি-গান।

অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে চাপা পড়ে বা গহ্বরে পতিত হয়ে মৃত্যুবরণ করা থেকে আশ্রয় চাই, পানিতে ডুবে ও আগুনে পুড়ে মৃত্যুবরণ করা থেকে আশ্রয় চাই। আমি আপনার কাছে শয়তানের প্ররোচনায় মৃত্যু থেকে আশ্রয় চাই এবং আপনার পথে পৃষ্ঠপ্রদর্শনকারী হয়ে মৃত্যুবরণ করা থেকে আশ্রয় চাই এবং আমার যেন শেষ বয়সেও (বৃদ্ধাবস্থায়) মৃত্যু না হয়, সে বিষয়েও আশ্রয় চাই।’ (আবু দাউদ ১৫৫২)

সম্পাদক: শাহ সুহেল আহমদ
প্যারিস ফ্রান্স থেকে প্রচারিত

সার্চ/খুঁজুন: