ইমন শরীফ:
উপমহাদেশে ইফতারের রকমারি আয়োজন থাকলেও তাদের সারাবিশ্বের মুসলমানদের খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করা উচিৎ। সাধারণত পানি, খেজুর, মুড়ি, ফলের রস, চিড়ার পানি, (বা এ দ্বারা তৈরি খাবার), দুধ ইত্যাদি দিয়ে ইফতারের আয়োজন করা যেতে পারে।
রমযানে দুই খাবার গ্রহণের মধ্যবর্তী সময় কম থাকায় পাকস্থলী গুরুপাক খাবার দিয়ে বোঝাই না করাই উত্তম। আসল বিষয় হলো রমযানের উদ্দেশ্য পূরণে রকমারি খাবার আয়োজন রোজার সুফলকে ম্লান করে দেয়।
রোযা রাখার ব্যাপারে বিধি নিষেধ :
—————————— ——————-
রোযা রাখার ব্যাপারে আমরা মাঝে মাঝে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ি। এমন অনেক অসুস্থ্য ব্যক্তি আছেন যাদের রোযা রাখলে আরো অসুস্থ্য হয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। তাদের রোজা রাখার ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করা উচিৎ নয়।
আবার ঠিক ততটা অসুস্থ্য নয় কিন্তু অসুস্থ্যতার উল্লেখ করে রাযা না রাখাও বৈধ নয়। কুরআনে রয়েছে, ‘‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি রোগগ্রস্ত অথবা সফরে থাকে, সে যেন অন্য দিনসমূহে এই সংখ্যা পূর্ণ করে। (সূরা বাকারাহ)
রাসূল (সা.) সফররত রোজাদারদেরকে কখনো কখনো তিরস্কার করেছেন। এক্ষেত্রে স্মরণ রাখা দরকার, প্রয়োজনীয় ও জরুরি ক্ষেত্রে সফর হলে এ নিয়ম প্রযোজ্য হবে। শুধুমাত্র বেড়ানোর উদ্দেশ্যে এই নিয়ম গ্রহণযোগ্য নয়।
বিশেষ কিছু রোগে যেমন-উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ইত্যাদি ক্ষেত্রে সতর্কতার সাথে রোজা রাখতে হবে। কেননা এসব এমন ধরনের অসুস্থতা যা সম্পূর্ণ আরোগ্য হয় না। ফলে রোগী রমযান ছাড়া অন্যসময় এসব রোজা পূর্ণ করতে পারে না।
ডা. ফারাদেই আজিজি এবং ডা. শিয়াকোলা ডায়াবেটিস রোগীদের উপর এক বিশেষ জরিপ চালান। সেখানে কিছু রোগীকে রোজা রাখার ব্যাপারে উৎসাহিত করা হয় এবং কিছু রোগীকে অনুৎসাহিক করা হয়। Šটবটঢটভ এর্ট্রধভথ টভঢ ঊধটঠর্ণণ্র বণফফর্ধল্র’ এ শিারোনামে ওয়েব সাইটে তারা এ রোগীদের জন্য বিস্তারিত তথ্য দিয়েছেন।
যে সব ডায়াবেটিক রোগী ইনসুলিনের উপর নির্ভরশীল নয় অর্থাৎ মুখে ওষুধ এবং পরিমিত খাদ্যাভ্যাস এবং শরীর চর্চা করে থাকেন তাদের রোজা রাখতে তেমন কোন অসুবিধা হয় না, এক্ষেত্রে সাহরীর কিছু সময় পূর্বে ওষুধ সেবন করতে হবে এবং ইফতারের তালিকায় শর্করা ও স্নেহ জাতীয়ত খাদ্যের পরিমাণ কম রাখতে হবে। এছাড়া তাদের নিয়মিত গ্লুকোজ পরীক্ষা করতে হবে যাতে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রার তারতম্য অস্বাভাবিক না হয়ে যায়।
যে সব রোগী শুধুমাত্র ইনসুলিনের উপর নির্ভরশীল অর্থাৎ এ ছাড়া অন্যকোন উপায়ে রক্তের চিনির মাত্র নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে না তাদের খুবই সতর্কতার সাথে রোজা রাখতে হবে। এসব রোগীর চিনির মাত্রা খুব নিচে নেমে গিয়ে রোগী শকে চলে যেতে পারে। সেজন্য শকের যে সব লক্ষণ রয়েছে সেগুলো রোগীকে খুব সাবধানতার সাথে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। যেমন-অনেক ঘামতে থাকা, অস্থিরতা অনুভব করা, মাথা ঘোরা, চোখে ঝাপসা দেখা ইত্যাদি। এসব রোগীর যেকোন সময় এধরনের সমস্যা হতে পারে বিধায় সবসময় ডায়াবেটিক রোগীর অঊ কার্ড বহন করতে হবে। নিয়মিত প্রস্রাব পরীক্ষা করা ও সব সময় একজন ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে। এইসব রোগীকে রোযা রাখতে উৎসাহিত করা হয় না।
যাদের রোজা না রাখাই ভালো
—————————
★শুধুমাত্র ইনসুলিন নির্ভরশীল রোগী।
★ খুব নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় না (রক্তের গ্লুকোজ) এমন রোগীর
★ যে সব ডায়াবেটিক রোগী অন্যকোন জটিল রোগে আক্রান্ত যেমন-বুকে ব্যথা এবং অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ
★ যাদের ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা রয়েছে
★সন্তান সম্ভাবা ডায়াবেটিক মা।
★যাদের ডায়াবেটিসের সাথে ঘন ঘন ইনফেকশনের ইতিহাস রয়েছে
★এমন বয়স্ক রোগী যারা ডায়াবেটিসজনিত অসুস্থতা ব্যাখ্যা করতে পারেন না।
★ রমযান মাসেই যদি দুই থেকে তিনবার রক্তে গ্লুকোজ মাত্রা খুব কম বা বেশি হয়ে থাকে
অনেক রোগী রয়েছে যারা অধিক ওজন সংক্রান্ত বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছে তারাও রোজা রাখার ক্ষেত্রে অনেক সাচ্ছন্দ্যবোধ করছে। রমযান শুধু দৈহিক অসুস্থতাই নয়, যারা অনেকদিন ধরে মানসিক অবসন্নতা বা বিভিন্ন রকম দুশ্চিন্তায় আক্রান্ত তাদের জন্যও চিকিৎসা হিসেবে কাজ করছে। এরকম একটি জরিপে দেখা গেছে রোজা রাখার কারণে যেসব রোগী তাদের কথাবার্তা এবং দৈনন্দিন কাজকর্ম নিময়-শৃক্মখলার মাধ্যমে অতিবাহিত করেছে তাদের ক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য লাভ করা গেছে।
তাই বলা যায়,কুরআনের প্রতিটি বিধানই মানব জাতির জন্যে কল্যাণকর। গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে রোজার মধ্যে প্রভূত কল্যাণ নিহিত রয়েছে। (সমাপ্ত)