মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ খ্রীষ্টাব্দ | ১ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

Sex Cams

চরম দুর্ভিক্ষ গাজায়: ত্রাণ পাঠাল ফ্রান্স




নিজস্ব প্রতিবেদন:

গাজা উপত্যকার ভয়াবহ মানবিক সংকটের মুখে ফ্রান্স জরুরি ভিত্তিতে আকাশপথে ত্রাণ সরবরাহ করেছে। শুক্রবার (১ আগস্ট) ফরাসি বিমানবাহিনী প্রায় ৪০ টন মানবিক সহায়তা গাজায় ফেলে দেয়। এই অভিযানটি পরিচালিত হয় জর্ডান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, জার্মানি এবং জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর সহযোগিতায়।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স (সাবেক টুইটার)-এ এক বার্তায় জানান, “চূড়ান্ত জরুরি পরিস্থিতির মুখে, আমরা গাজায় খাদ্য ফেলার একটি অভিযান সম্পন্ন করেছি। আমাদের সহযোগী জর্ডান, আমিরাত ও জার্মানিকে ধন্যবাদ, এবং আমাদের সামরিক বাহিনীর সদস্যদের প্রতিশ্রুতির জন্য কৃতজ্ঞতা।”

তবে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ আরও বলেন, “এই খাদ্য ফেলা যথেষ্ট নয়। দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি মোকাবিলায় ইসরায়েলকে অবশ্যই গাজায় পূর্ণ মানবিক প্রবেশাধিকার খুলে দিতে হবে।”

জরুরি সহায়তা, কিন্তু অপর্যাপ্ত

ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ-নোয়েল বারো শুক্রবার সকালে ‘ফ্রান্স ইনফো’ রেডিওতে জানান, এই ত্রাণ ফেলা হয়েছে জর্ডান ও জাতিসংঘের সহযোগিতায়। ফরাসি বিমানবাহিনীর চারটি বিমানে প্রতি ফ্লাইটে ১০ টন করে মোট ৪০ টন ত্রাণ পাঠানো হয়।

তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, “এটি এক ধরনের জরুরি সহায়তা হলেও, তা একেবারেই পর্যাপ্ত নয়। গাজা উপত্যকায় পানি, খাদ্য ও ওষুধের স্রোত বইয়ে দিতে হবে। এখন আর এক মিনিটও সময় নষ্ট করার সুযোগ নেই।”

“সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে”

গাজার বর্তমান অবস্থা প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বারো বলেন, “এই পরিস্থিতি এক কথায় বিক্ষোভযোগ্য ও অসহনীয়।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, “ইসরায়েল সরকারকে অবশ্যই গাজার সব প্রবেশপথ—স্থল, আকাশ ও সমুদ্র—খুলে দিতে হবে, যাতে সেখানে ব্যাপকভাবে মানবিক সহায়তা পৌঁছানো সম্ভব হয়।”

তিনি আরও জানান, ৫২ টন ত্রাণ মিশরের আল-আরিশে আটকে আছে, যা গাজা সীমান্ত থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে। এই এলাকা ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর সঙ্গে তিনিও এপ্রিলে পরিদর্শন করেছিলেন।

ত্রাণের লাইনে মৃত্যু, ব্যর্থ বিতরণ ব্যবস্থা

বর্তমান বিতরণ ব্যবস্থার কড়া সমালোচনা করে ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “ইসরায়েলি সামরিক ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত বিতরণ প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে বহু রক্তপাত ঘটিয়েছে। যতক্ষণ না সহায়তা পর্যাপ্তভাবে প্রবেশ করছে, এই ধরনের দুঃখজনক ঘটনা ঘটতেই থাকবে।”

মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, ২০২৪ সালের ২৭ মে থেকে ৩১ জুলাই-এর মধ্যে ৮৫৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন খাবারের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায়। জাতিসংঘের ভাষ্য অনুযায়ী, এদের বেশিরভাগই ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে প্রাণ হারান।

এই হত্যাকাণ্ড ঘটে গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের বিতরণ কেন্দ্রে, যা ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন পেলেও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এতে অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

ফ্রান্সের নেতৃত্বে এই মানবিক সহায়তা গাজার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এক পদক্ষেপ হলেও, প্যারিস থেকে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে—এই সহায়তা যথেষ্ট নয়। গাজার মানুষ যেন খাবার ও পানির জন্য জীবন না হারায়, সেজন্য ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক মানবিক আইন মেনে কাজ করতে হবে। সময় গড়িয়ে যাচ্ছে, কিন্তু মানুষের জীবন থেমে নেই।

সম্পাদক: শাহ সুহেল আহমদ
প্যারিস ফ্রান্স থেকে প্রচারিত

সার্চ/খুঁজুন: