নিজস্ব প্রতিবেদক:
‘দীপ্ত প্রাণে হর্ষ’ শিরোনামে এক উষ্ণ ও হৃদয়গ্রাহী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক সংগঠক, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং একুশে পদকপ্রাপ্ত লেখক নাজমুন নেসা পিয়ারিকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়েছে প্যারিসে। সাহিত্য সংগঠন “অক্ষর” গতকাল শনিবার (২৫ অক্টোবর) সন্ধ্যায় প্যারিসের একটি স্থানীয় হলে এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
বিশিষ্ট আবৃত্তিশিল্পী মুনির কাদেরের প্রাণবন্ত উপস্থাপনায় অনুষ্ঠান শুরু হয়। শুরুতেই উপস্থাপক সংবর্ধিত অতিথির সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরেন এবং তার কথামালা ও কবিতা পাঠের মধ্য দিয়ে মূল পর্বের সূচনা হয়।
অনুষ্ঠানে কবি ও সম্পাদক বদরুজ্জামান জামান নাজমুন নেসা পিয়ারিকে নিবেদিত তিনটি কবিতা পাঠ করেন। এছাড়া আবৃত্তি, ছড়া ও সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে পুরো অনুষ্ঠানটি এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক আবহ তৈরি করে।
কবিতা, ছড়া ও সংগীত পরিবেশন করেন—আবৃত্তিশিল্পী শর্মিষ্ঠা বড়ুয়া, সঙ্গীতশিল্পী পলাশ গাঙ্গুলী, ছড়াকার লোকমান আহমেদ আপন, রোমেনা আফরোজ, ফরাসি থিয়েটার কর্মী সোয়েব মোজাম্মেল, সঙ্গীতশিল্পী রোজি মজুমদার, আবৃত্তিশিল্পী সাইফুল ইসলাম, মেরি হাওলাদার, সঙ্গীতশিল্পী কুমকুম সাঈদা, আবৃত্তিশিল্পী আবু বকর আল আমিন ও বীনা প্রমুখ। তবলায় সহযোগিতা করেন প্লাসিড শিপন। অনুষ্ঠানের সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন হাসনাত জাহান।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ—সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হাসনাত জাহান, উদীচি ফ্রান্সের সভাপতি কিরণময় মন্ডল, বিশিষ্ট অনুবাদক খান আনোয়ার, ফরাসি নাট্যপরিচালক জেরেমি, নৃত্যশিল্পী শরীফ আহমেদ, সেইফ অটোস্কুলের পরিচালক মোহাম্মদ আহমদ সেলিম, উদীচি ফ্রান্সের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন, সংগঠক রাকিবুল ইসলাম ও বাপন কুরি প্রমুখ।
উল্লেখ্য, নাজমুন নেসা পিয়ারি বাংলাদেশের একজন খ্যাতনামা সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক সংগঠক ও লেখক। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাণরসায়নে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর শিক্ষকতা জীবনের পাশাপাশি লেখালেখিতে যুক্ত হন। ১৯৭৬ সালে তিনি জার্মানির আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলের বাংলা বিভাগে সাংবাদিক হিসেবে যোগ দেন। পরবর্তীতে জার্মান ও ইংরেজি বিভাগেও কাজ করেন এবং ১৯৯০ সালে প্রথম বিদেশি হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির মার্কেটিং ও গণসংযোগ বিভাগের সম্পাদক নিযুক্ত হন।
২০০৫ সালে প্রকাশিত তার প্রথম অনুবাদ গ্রন্থ ‘পিয়ানো টিচার’ আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক প্রশংসা পায়। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘সত্তার অসীম আকাশ: জার্মানবাসী বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ’ (২০০৯), ‘প্রেমে-অপ্রেমে’ এবং ‘শহীদ কাদরীর একশ কবিতা’ (২০১৮)।
সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ সাহিত্য পুরস্কার, একুশে পদকসহ একাধিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, “নাজমুন নেসা পিয়ারি শুধু একুশে পদকপ্রাপ্ত একজন লেখকই নন, তিনি বাংলাদেশের নারী সাংবাদিকতার ইতিহাসে এক উজ্জ্বল অধ্যায়।”
সাহিত্য, সাংবাদিকতা ও সংস্কৃতির মেলবন্ধনে সাজানো এই সন্ধ্যায় প্রবাসী বাঙালি কমিউনিটি অনুভব করে এক গভীর অনুপ্রেরণার মুহূর্ত—‘দীপ্ত প্রাণে হর্ষ’-এর সার্থক প্রতিফলন ঘটেছিল প্যারিসের মঞ্চে।






