শাবুল আহমেদ, প্যারিস (ফ্রান্স) :
প্যারিসে বাংলাদেশি প্রবাসী ও উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণে আনন্দ, উচ্ছ্বাস আর উৎসবমুখর পরিবেশে ‘বাণিজ্য মেলা ও ঈদবাজার’ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রবিবার (১১ জুন) সলিডারিতে আঁজি ফ্রান্স (সাফ)র উদ্যোগে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের ঐতিহাসিক রিপাবলিক চত্বরে এ মেলার আয়োজন করা হয়।
এতে বাংলাদেশি পণ্যের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের হরেক রকমের পণ্যের ৬৩ টি স্টল নিয়ে বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা অংশ নেন। এদের বেশিরভাগই নারী উদ্যোক্তা। মেলায় শিশু-কিশোর, নারী, পুরুষের পোশাকের পাশাপাশি ছিল গয়না, প্রসাধনী, খাবার ও রকমারি পণ্য। এছাড়া বিদেশি ৫ টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এ মেলায় অংশগ্রহণ করে।
সকালে মেলার উদ্বোধনকালে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ দূতাবাস ফ্রান্সের বাণিজ্য বিষয়ক কর্মকর্তা মিজানুর রহমান, সাফ’র প্রেসিডেন্ট নয়ন এনকেসহ বাংলাদেশি কমিউনিটির বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ।
আয়োজক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট নয়ন এনক জানান, মূলতঃ উদ্যোক্তা সৃষ্টি একইসঙ্গে প্রবাসে ঈদের আমেজ ছড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি ভিনদেশীদের কাছে আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি তুলে ধরার প্রয়াস নিয়ে মেলার আয়োজন। তিনি জানান, এবারের মেলায় যথেষ্ট সাড়া পেয়েছেন। বিক্রি নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন উদ্যোক্তারা। তারা জানান, মেলায় নিয়ে আসা পণ্যের ৭০ শতাংশ বিক্রি হয়েছে।
মেলার সমন্বয়ক ও সাফ’র সদস্য সোনিয়া বলেন, ‘ঈদ আনন্দ উপভোগের পাশাপাশি নারীদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের পথ সুগম করার লক্ষ্য নিয়ে আমাদের এই উদ্যোগ। বিশেষ করে নারীদের আত্মবিশ্বাস বাড়ানো এবং তাদের নিজেদেরকে উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত তুলে ধরা ও অন্যদের উদ্ধুদ্ধ করার প্রয়াস নিয়েই এ মেলার আয়োজন।
নারী উদ্যোক্তা পাপিয়া বলেন, ‘যথেষ্ট সাড়া পেয়েছি। প্রবাসীরা মেলায় এসে দেশীয় পণ্য খুঁজে নিয়েছেন। তার স্টল সাজিয়েছিলেন বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানি পণ্যের পাশাপাশি ফরাসিদের বিভিন্ন রকমের কাপড়। তিনি বলেন, ‘পোশাকের মিশ্রণ নিয়ে মেলায় হাজির হয়েছি। তবে লক্ষ্য করেছি, মেয়েদের শাড়ি ও ছোটদের কাপড় বেশি বিক্রি হচ্ছে। ঈদ উপলক্ষে এমন একটি মেলার প্রয়োজন ছিল। এই মেলার আয়োজনের মাধ্যমে আমাদের মতো নারী উদ্যোক্তারা আরও উৎসাহিত হবেন।’
মেলা আয়োজকদের ভূয়সী প্রশংসা করে বাংলাদেশ দূতাবাস ফ্রান্সের বাণিজ্য বিষয়ক কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, এ মেলার মাধ্যমে বাংলাদেশের শিল্প-সংস্কৃতি ও পরিচিতি আরো বৃদ্ধি পাবে। তিনি বলেন, আমাদের এক্সপোর্ট এখানে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ মেলার মাধ্যমে যে বাংলাদেশি উৎপাদিত পণ্য সেটা শুধু বাংলাদেশি কমিউনিটির না সেটা এখানকার কমিউনিটির মাঝে আলাদা একটি পরিচিতি লাভ করবে। ফলে এর মাধ্যমে বাণিজ্যের বাজারটা আরো বড় হবে।
মেলায় নারী উদ্যোক্তাদের প্রচেষ্টা ও অংশগ্রহণ দেখে মুগ্ধতা প্রকাশ করে এস্যাইলাম এন্ড ইমিগ্র্যান্ট সলিউশম সংস্থা (আইছা)’র প্রেসিডেন্ট উবায়দুল্লাহ কয়েস বলেন, দেশীয় সংস্কৃতিকে তুলে ধরার পাশাপাশি ক্ষুদ্র ব্যবসার মাধ্যমে আর্থিক স্বাবলম্বী অর্জনের চেষ্টা করছেন নারী উদ্যোক্তারা। তাঁদের এই মেধা, মনোবল এবং পরিশ্রম সত্যিই প্রসংশনীয়। তিনি বলেন, বিশেষ করে জামদানী ও নকশীকাঁথা নিপুণ কারুকাজ দেখে সত্যিই আমি অভিভূত এবং মুগ্ধ। উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা ও অনুপ্রাণিত করতে এ ধরণের আয়োজন অব্যাহত থাকা একান্ত জরুরি।
মেলায় আগত দর্শনার্থী তনিমা মাহমুদ তার উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, পরবাসের যান্রিক জীবনে আমরা আমাদের শেকড়কে অনেক সময় ভুলে যেতে থাকি। মেলার সুবাদে পরিচিতজনদের সঙ্গে বহু বছর দেখা করতে পেরেছি। মনে হচ্ছে- এ যেন বিদেশের মাটিতে একখণ্ড বাংলাদেশ।