সংখ্যালঘুর বায়স্কোপ ও সন্ত্রাসের যন্তর-মন্তর
আবু মুসা মো. তারেক
‘উদার গণতান্ত্রীক সভ্যপ্রাণ প্রজাতন্ত্র’ আইন সভার অধিবেশন চলছে। অধিবেশনে সভাপতিত্ব করছেন প্রজাতন্ত্রের প্রধান ‘শিয়াল পা’। তিনি ‘আদর্শ সভ্যপ্ৰাণ ভূমি’ এর ‘আদিহস্তি পা’ সমর্থিত ও তাঁর আশির্বাদপুষ্ট। নিবীরহরিৎ ভুবনে গণতন্ত্র ও সভ্যপ্রাণীদের মধ্যে সমতা প্রতিষ্ঠায় তাঁর নাম বিশেষভাবে বিহীত। প্রাণ স্বতন্ত্র ও সম-অধিকারের প্রশ্নে তার আপোষহীন চরিত্রের খ্যাতি সর্বজন বিধিত। সকল সভ্যপ্রাণ সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে একজন একজন করে প্রতিনিধি সভায় উপস্থিত হয়েছেন। কিন্তু হস্তি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি এসেছেন তিন জন এবং ব্যঘ্র, জিরাফ, ও কুমির সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি দু’জন করে এসেছেন। গণ নির্বাচন বিধি ব্যাবস্থায় তাদের একজন করে প্রতিনিধি এসেছেন এবং গণ লঘু সংখ্যা বিধি ব্যাবস্থায় তাদের আর একজন করে প্রতিনিদি এসেছেন এবং হস্তি উক্ত ভূমির নৃ- গোষ্ঠি বিবেচিত হওয়ায় তার সম্প্রদায় নৃ-গোষ্ঠি বিধি ব্যবস্থায় এক জন অতিরিক্ত প্রতিনিদি প্রেরণের অধিকার সংরক্ষণ করেন বিধায় হস্তি সম্প্রদায়ের মোট সদস্য সংখ্যা তিন। লঘু প্রাণ সংখ্যা ঐক্য অধিকার বিধির আওতায় তারা ‘লঘু প্রাণ ঐক্য মুর্চা’ গঠন করেছেন। ফলে আইন সভায় তাদের ঐক্য সদস্য এগারো জনকে একই পক্ষে অবস্থান নেয়ার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আইন সভার মোট সদ্যস্য সংখ্যা পঁচিশ। ঐক্য মুর্চার বাহিরে ভোট আছে চৌদ্দটি। সে চৌদ্দটির মধ্যে শিয়াল পা পেয়েছেন পাঁচটি। শাসন পর্ষদ গঠনের জন্য ভোট প্রয়োজন ষোলটি। শিয়াল পা আদিহস্তি পা’র দ্বারস্থ হলে দয়াপরবশ হয়ে আদিহস্তি পা একটি চুক্তি- যার নাম ‘মহান সমতা দর্শন বাস্তবায়ন-প্রসঙ্গ গণ লঘু প্রাণ সম্প্রদায়ঃ বাধ্যবাধকতা চুক্তি’ এর ভিত্তিতে ঐক্য মুর্চাকে শিয়াল পা’র পক্ষে সমর্থন দিতে অনুরোধ করলে ঐক্য মুর্চা তা আনন্দিত চিত্তে অনতিবিলম্বে বাস্তবায়ন করেন। ফলে শিয়াল পা সফলতার সাথে শাসন পর্ষদ গঠন করেন ।
আজকের সভায় সকল সদস্য উপস্থিত আছেন। শুধু গাধা প্রতিনিধি ছাড়া । সভাপতির অনুমতি ক্রমে পীপিলিকা প্রতিনিধি দাড়ালেন-
‘মান্যবর শিয়াল পা। আপনার সুনাম জগৎবিধিত। আপনার কথাই আইন। আপনি যখন যা বলেন তাই আইনে পরিণত হয়। যদিও আপনি কখনোই পরামর্শ ছাড়া কিছু বলেন না এবং করেনও না। বিশেষকরে মহান আদিহস্তি পা’র পরামর্শ ছাড়া আপনি কিছুই করেন না। এই সভার মাধ্যমে আমি আপনার কাছে একটি অত্যন্ত প্রাণবাদী আবেদন রাখছি। মান্যবর শিয়াল পা, আমাদের পীপিলিকার প্রাণ প্রতিদিন ঝরছে। আমাদের অবাধ চলাফেরার অধিকার নাই, আমাদের বাসা বাঁধার অধিকার নাই, আমাদের ডিম ফোটানোর অধিকার নাই….অথচ এ-সবই আমাদের মহান ‘সভ্যপ্রাণ আদর্শলিপি’-এর স্পষ্ট লক্সঘন। মহান আদর্শলপির ৩-১২(ক) ধারা মতে প্রতিটা প্রাণের অবাধ ও মুক্ত চলাফেরার অধিকার রয়েছে। গত একমাসে আমাদের সম্প্রদায়ের মোট তিরিশ হাজার সদস্য মারা গেছেন শুধু মাত্র হস্তিপদপীষ্ট হয়ে। জিরাফের তান্ডবে আমাদের এক লক্ষ নবজাতক আলোর মুখ দেখতে পায়নি। এমতা অবস্থায় মান্যবর পা, আমরা এই সভায় ‘পীপিলিকা নিরাপদ বিচরণ’ আইন আপনার অনুমোদনের জন্য এই মহান সভার মাধ্যমে আপনার সম্মুখে উপস্থাপন করলাম’ ।
তীব্র প্রতিবাদে হুংকার করে উঠলেন হাতি প্রতিনিধি, “পিপীলিকার বক্তব্যআন্তঃপ্রাণ সাম্প্রদায়ের সম্প্রীতির উপর সরাসরি আঘাত এবং তা গণ লঘু প্রাণ সম্প্রদায়কে ভয়ভীতি প্রদর্শনেরই নামান্তর। মান্যবর শিয়াল পা’ নিশ্চয়ই আপনার স্মরণ আছে, আমাদের মহান আদর্শলিপি বলছে, গণ গুরু সংখ্যা প্রাণী কখনোই তাদের সংখ্যা আধিক্যের তথ্য গণ সম্মুখে ব্যক্ত করবে না, কেননা এতে লঘু প্রাণ সংখ্যাসম্প্রদায়ের সদস্যগণের মনে ভয়ভীতির সঞ্চার হবে। ফলে তারা এই নীবিরহরিৎ ভূমিতে বসবাস করতে অনিরাপদ বোধ করবে। ইতোমধ্যে আমাদের অনেক সদস্য গুরু সংখ্যা পীপিলিকার ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে নীবিরহরিৎ ভূমি পরিত্যাগকরে ‘আদর্শ সভ্যপ্রাণ ভূম’- এ চলে গেছেন। (এ সময় হস্তি ইমশনাল হয়ে পড়েন এবং বার বার চোখ মুছতে থাকেন। সম্মানিত কুমিরকেও ঐ সময় কাঁদতে দেখা যায়। যদিও দুমুখো প্রাণেরা আড়ালে কিছু অন্যরকম কথাবার্তা বলে থাকে। আবেগের দখল কিছুটা লঘু হয়ে এলে তিনি থেমে থেমে পুনরায় কথা শুরু করেন)। অথচ, আমাদের পিতা, প্রপিতাগণের ত্যাগ তিতিক্ষায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এই মহান নীবির হরিৎ ভূমি। শীতল মহাপ্লাবনের সময় আমাদের মুকুট মহামান্য আদিহস্তি পা’ এই হরিৎ ভূমির সকল প্রাণকে আশ্রয় ও খাদ্য দিয়ে ছিলেন। আর আজ কিনা আমরা শুধুমাত্র লঘু প্রাণ সংখ্যাহওয়ার কারণে পীপিলিকা সম্প্রদায় আমাদেরকে আমাদের এই আদি পিতা-মাতার ভূমিতে নির্যাতন করছে। মন্যবর পা’ আমরা নির্যাতনের শিকার। আমরা বৈষম্যের শিকার যে রাস্তা দিয়ে আমাদের হস্তি সম্প্রদায়ের সদস্য মাত্র এক দু’টা চলাফেরা করে, সে রাস্তা দিয়ে পাপিলিকা সম্প্রদায় লাখে লাখে চলাচল করে।
এ তো সুস্পষ্ট বিধির লঙ্ঘণ। আদর্শলিপি সবাইকে সমান অধিকার দিয়েছে। সেখানে কীভাবে এক হাতির চলার পথে লাখ লাখ পীপিলিকা হাঁটে? এ হতে পারে না। কোন রাস্তা দিয়ে যদি হস্তি সম্প্রদায়ের একটিমাত্র সদস্য চলাচল করে তবে ঐ রাস্তা দিয়ে পীপিলিকা সম্প্রদায়েরও একটিমাত্র সদস্যকে চলতে হবে। এক রাস্তা দুই নীতি হতে পারেনা। এটা যাবন রাজ্য নয়। এ ভূমি হস্তিনী মাতার পবিত্র অঙ্গ । এখানে বসবাস করতে হলে মাতা হস্তিনীকে সম্মান করেই থাকতে হবে। নতুবা চলে যেতে হবে যাবন দেশে। মান্যবর শিয়াল পা, আজ আমাকে অত্যন্ত ব্যথিত হৃদয়ে বলতে হচ্ছে- কে এই পীপিলিকা সম্প্রদায়? কি তাদের আসল পরিচয়? আজকে সভ্যপ্রাণ সমাজের সামনে তা পরিষ্কার হওয়া দরকার। মান্যবর শিয়াল পা’, এই পীপিলিকা সম্প্রদায়ের গতিবিধি খুবই রহস্যজনক। এরা যেদিকে যায় সেদিকেই লম্বা লাইন বেঁধে যায়। কেন? সমাজ জানতে চায়? এরা হরিৎ পাতা নষ্ট করে বাসা বাঁধে। কেন? এই সভ্যপ্রাণ সমাজ তা জানতে চায়। এরা সমাজের গণ সংখ্যার ভারসাম্যকে বিনষ্ট করছে। তাদের সংখ্যা আধিক্ষের কারণে অপরাপর সম্প্রদায়ের সদস্যগণের চলা ফেরায় বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। এমতাবস্থায় আমি ‘পীপিলিকা বংশ বিস্তাররোধ আইন’ প্রণয়নের জন্য মহান সভার মাধ্যমে আপনার নিকট প্রস্তাব রাখছি এবাং এই সাথে আপনাকে এও অবহিত করতে চাই যে মহামান্য আদিহস্তি পা’র ইচ্ছাও অনুরূপ। সুতরাং সভ্যপ্রাণ প্রজাতন্ত্র অনতিবিলম্বে উল্লিখিত আইন পাস করে এই মহান ভূমিকে পীপিলিকা সম্প্রদায়ের আধিক্য বীর্যের অভিশাপ থেকে সভ্যপ্রাণ সমাজকে মুক্ত করবেন বলে আজ সমাজ ও জাতি-সম্প্রদায় আশা করে।
শুধু তাই নয়, গণ গুরু সংখ্যা প্রতিনিধি পিপীলিকা আদর্শলিপির ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছেন। আমাদের মহান আদর্শলিপির ৭-৩(গ) বিশেষ বিধান বলছে ‘এই আদর্শলিপির যেখানে যা কিছুই থাকুক না কেন গণ লঘু প্ৰাণ সংখ্যাসম্প্রদায়কে উপযুক্ত ‘সমান’ অধিকার প্রদান করা থেকে সভ্যপ্রাণ প্রজাতন্ত্রকে এর কোনকিছুই নিবৃত করতে পারবে না’ । সুতরাং তার বিরুদ্ধে আমি আমাদের মহান আদর্শলিপি বিকৃত করার গুরুতর অভিযোগ আনছি এবং এই সভা থেকেই তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যাবস্থা গ্রহনের জোর দাবী জানাচ্ছি।(পিপীলিকা প্রতিনিধিকে শিয়াল পা’র দৃষ্টি আকর্ষন করার জন্য আপ্রাণ চিউমিউ করতে দেখা যাচ্ছে)। সুবিবেচক ও দূরদৃষ্টি শক্তির জন্য জিরাফের যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। জিরাফ প্রতিনিধি তার মস্তক সগর্বে উত্তোলন করে বললেন, “মান্যবর শিয়াল পা, বিষয়টি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এবং গুরুত্বের সাথে আলোচনার দাবি রাখে।
হঠাৎ করে কেন এই অভিযোগ? বিশেষ করে এই সময় যখন শান্তিতে বসবাস করছে প্রাণ সম্প্রদায়ের প্রাণীসকল। নিশ্চয়ই এই পীপিলিকা সম্প্রদায় আমাদের মহান ‘গণতান্ত্রিক সমতা’ আদর্শের বিরোদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এমনটা ভাবার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। এই পিপীলিকা বৃক্ষশীর্ষে কী করে? নিবিড় হরিৎবাসী তা জানতে চায়। তাদের তো ওখানে কোন কাজ নেই । নিশ্চয়ই এ কোন ষড়যন্ত্রের অংশ। এই পীপিলিকা সম্প্রদায় আমাদের আহারের মধ্যে বিচরণ করে, ফলে আমাদের আহারে বিঘ্ন ঘটে। কেন তারা বৃক্ষপাতায় অবস্থান করবে, ওখানে তাদের কী কাজ? নিবিড় হরিৎ ভূমিবাসীর কাছে আমার প্রশ্ন। আমরা যখন বৃক্ষপাতা খেতে যাই তখন প্রায়শই এরা আমাদের মুখে জিহ্বায় কামড়ে দেয়। (পিপীলিকা প্রতিনিধি এ সময় বলার চেষ্ঠা করে যে, জিরাফরা পাতা খেতে গিয়ে পিপীলিকার বাসা ভঙ্গে, পিপীলিকা ও তাদের ডিম, বাচ্চা-কাচ্চাসমেত পাতায় মুড়ানো পীপিলিকার বাসা খেয়ে ফেলে। কিন্তু পিপীলিকার দুর্বল কন্ঠ অন্যান্যদের গর্জনে ঢাকা পড়ে যায়)। এই সব সন্ত্রাসী পিপীলিকার কারণে এই মহান হরিৎভূমি আজ বসবাসারে অযোগ্য হয়ে পড়েছে। আমাদের ভবিষৎ প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য হরিৎ ভূমি গড়ে তোলতে হলে চির শান্তির এই পবিত্র ভূমিকে সন্ত্রাস মুক্ত করতে হবে। তাই আমি জিরাফ সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে এই সব উগ্রবাদী পিপীলিকা সন্ত্রাসীদেরকে নির্মূল করার লক্ষ্যে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মহান সভ্যপ্রাণ জোট’ গঠন করে শান্তির স্বপক্ষে লড়াই শুরু করার জন্য এই সভার মাধ্যমে মান্যবর শিয়াল পা’র প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। এখানে উল্লেখ্য যে, আমাদের পবিত্র ‘আদর্শ পশ্চিম জিরাফ ভূমি’-এর মহান আদি জিরাফ পা’র ইচ্ছাও অনুরূপ। তাই আর কালবিলম্ব না করে উগ্রবাদী পিপীলিকা সন্ত্রাসিদের বিরুদ্ধে এবং শান্তির সপক্ষে এক মহান লাড়াই-এ অবতীর্ণ হওয়ার জন্য এই মহান সভার মাধ্যমে আপনার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। এই অসাম্প্রদায়িক হরিৎভূমি শান্তি, সম্প্রীতি, ঐক্য, প্রগতী, সমতা ও ন্যায়বিচারের পবিত্র মহান ভূমি। প্রতিটা রক্ত বিন্দু দিয়ে এ ভূমির পবিত্রতা আমরা রক্ষা করব। উগ্রবাদী শান্তি বিনষ্টকারী পিপীলিকাকে নির্মূলকরার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে জিরাফ সম্প্রদায়ের পক্ষে আমার বক্তব্য এখানেই শেষ করছি। ধন্যবাদ মান্যবর শিয়াল পা’, ‘জয় হোক শান্তির, জয় হোক অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির । উগ্রবাদী সন্ত্রাসী নিপাত যাক, নিপাত যাক।”
তুমুল করতালি আর হর্ষধ্বনির মধ্যে জিরাফ প্রতিনিধির বক্তব্য শেষ হল। দীর্ঘক্ষণ করতালি চলল। করতালি চলা অবস্থায় গাধা প্রতিনিধি এসে সভায় উপস্থিত হলেন। তিনি কিছু বুঝে উঠতে না পেরে ঘোড়া প্রতিনিধির কাছে কী হচ্ছে জানতে চাইলেন। ঘোড়া ঘাড় ফুলিয়ে বললেন, “সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ডাক এসেছে”।
সঙ্গে সঙ্গে বিজ্ঞ গাধা প্রতিনিধি লাফিয়ে ওঠলেন- “সন্ত্রাসবাদ হল সন্ত্রাসের পদ্ধতিগত ব্যবহার যা প্রায়শই ধ্বংসাত্মক এবং বলপ্রয়োগের মাধ্যমে ঘটানো হয়। যদিও বিস্তৃত প্রাণ সম্প্রদায়ের মধ্যে সন্ত্রাসবাদের কোন বেঁধে দেওয়া সীমারেখা অথবা সজ্ঞা নেই। প্রচলিত সজ্ঞানুযায়ী যে সকল বিধ্বংসী কার্যকলাপ সভ্যপ্রাণে ভীতির উদ্বেগ ঘটায়, ধর্মীয়, রাজনৈতিক অথবা নীতিগত লক্ষ্য অর্জনের জন্য কৃত রুচিবিরুদ্ধকাজ, ইচ্ছাপূর্বক সাধারণ সভ্যপ্রাণের নিরাপত্তার বিষয় উপেক্ষা অথবা হুমকি প্রদান করা প্রভৃতি হল সন্ত্রাস। সন্ত্রাসবাদ একটি জঘন্য অপরাধ, সভ্যতার জন্য হুমকি; সভ্যপ্রাণের অস্তিত্বের সংকট। এ বিষয়ে বিশিষ্ট সভ্যতা গবেষক খচ্চর পা’র উক্তি বিষেশভাবে প্রনিধানযোগ্য। তিনি একটি চমৎকার ব্যবহারিক সংজ্ঞা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদ হল প্রাণীসকলের দেহে রক্ষিত হাতিয়ারের এমনতর ব্যবহার যা কিনা অন্যপ্রাণীকে বিধি বহির্ভূতভাবে আঘাত করে; ফলশ্রুতিতে আঘাতপ্রাপ্ত প্রাণী দেহ আহত বা নিহত হয় অথবা উক্ত প্রাণীর মনে ভীতির সঞ্চার হয়। উল্লেখ্য যে রক্ষিত হাতিয়ার বলতে নোখ, দাঁত, থাবা, বিষাক্ত শূর, শিং ইত্যাকার বিষয়কে বুঝাবে’। তবে এখানে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হল ‘বিধি’। যা কিছু করা হোক না কেন তার সবই সভ্যতাবান্ধব হবে যদি তা বিধিগত প্রক্রিয়ায় হয়ে থাকে। তাই সভ্যতার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হচ্ছে ‘বিধি’। সম্মানিত খচ্চর পা’ আরোও বলেন যে, “বিধি হল সভ্যতার সেই চমৎকার জাদু যা সকল অন্যায়কে ন্যায়ে পরিণত করতে পারে।’ আমরা যারা পন্ডিত খচ্চর পা’ পড়েছি তারা জানি যে, কোন বিশেষ প্রাণীকে উদ্দেশ্যকরে কিছু মন্দ বলা বা হুমকি প্রদান করা হচ্ছে সভ্যতা বিরুদ্ধ কাজ। কিন্তু সভ্যপদ্ধতিতে উক্ত কাজটি করার প্রক্রিয়া হচ্ছে বিধি প্রণয়ন। পদ্ধতিগতভাবে বিশেষ কোন প্রাণ বা প্রাণীকে কিভাবে ক্রমান্বয়ে এবং ক্রমাগতভাবে আক্রমণ করতে হবে তা আমাদের মহান খচ্চর পা’ আমাদেরকে ‘পাঁচ অঙ্ক’ মডেল দ্বারা শিখিয়েছেন। ‘নতুন বিশ্বের মহান স্বপ্নভূমি’র এই পন্ডিত গুরু খচ্চর পা’ প্রণীত ‘পাঁচ অঙ্ক’ মডেলটি
এরূপঃ
প্রথম অঙ্কঃ
দৃশ্য-১। প্রথমে লক্ষ্যবস্তুকে (প্রাণ অর্থে বস্তু অর্থাৎ বস্তু বলতে প্রাণকে বুঝাবে) অভিযুক্ত করতে হবে।সভ্য আইন সভায় আলোচনার মাধ্যমে অভিযোগকে আনুষ্ঠানিকতা দিতে হবে।
দৃশ্য-২। সভ্য সভায় তা’ গুরুত্বের সাথে আলোচনা করতে করতে হবে।
দৃশ্য-৩। লক্ষ্যবস্তুকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগদান অর্থাৎ সভায় বক্তব্য রাখতে দেয়া।
দৃশ্য-৪। লক্ষ্যবস্তুকে দ্বিতীয়বার বলার সুযোগ দেয়া যাবে না। এবার সকল সভ্যপ্রাণ আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন। সবাই ‘লক্ষ্যবস্তুকে ক্রমান্বয়ে ক্রমাগতভাবে অভিযুক্ত করে যাবেন। সভ্য প্রাণীদের এ আলোচনা এত ব্যাপক হবে যে লক্ষ্যবস্তুর কন্ঠস্বর সম্পূর্ণরূপে চাপা পড়ে যাবে। শকুনকে সমস্ত হরিৎ ভূমে তা প্রচারের কাজে নিয়োজিত করতে হবে।
দ্বিতীয় অঙ্কঃ
দৃশ্য-১। সার্বজনীন সভ্যপ্রাণ সাধারণসভা আহ্বান করতে হবে। সভা বসার অনেক দিন পূর্ব হতে উক্ত বিষয়ের গুরুত্ববৃদ্ধি ও গণ প্রাণের মনযোগ আকর্ষনের জন্য উক্ত বিষয় সম্পর্কে ব্যাপক আলোচনা ও প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। উল্লেখ্য যে, এখানে ‘জাবর কাটা পদ্ধতি’ অত্যন্ত কার্যকর। সেজন্য শকুনের তত্ত্বাবধানে লাইভ সম্প্রচারে গাধা এবং গরুকে নিয়োজিত করে ভাল ফল পাওয়া যায়।
দৃশ্য-২। সভায় আর ‘লক্ষ্যবস্তু’ নিয়ে আলোচনা করার প্রয়োজন নেই। আলোচনা হবে ‘লক্ষ্যবস্তু’র উপর উত্থাপিত অভিযোগ নিয়ে। উক্ত অভিযোগকে প্রাণী জগতের এক নম্বর সমস্যা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত না করা পর্যন্ত আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে।
দৃশ্য-৩। অতঃপর বিষয়টিকে পন্ডিত গবেষণাগারে প্রেরণ করতে হবে। ‘উচ্চ যোগ্যতা ও দক্ষতাসম্পন্ন পন্ডিতরা গবেষণা করছেন এবং বিষয়টি বিশেষজ্ঞ মতামতের উপর নির্ভরশীল’ মর্মে বিবৃতি প্রদান করতে হবে এবং তা ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে।
তৃতীয় অঙ্কঃ
দৃশ্য-১। ‘বিশেষজ্ঞ প্রতিবেদন’-কে সমস্ত আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসতে হবে। বিশেষজ্ঞের প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে। প্রতিবেদনে উন্মোচিত হবে যে, ‘লক্ষ্যবস্তু’ সভ্যপ্রাণের জন্য ভয়ংকর হুমকি এবং ‘লক্ষ্যবস্তু’ সভ্যপ্রাণকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন করেছে অর্থাৎ হাতে বেশি সময় নেই।
দৃশ্য-২। অনতিবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সভ্যসভাকে বিশেষজ্ঞ প্রতিবেদনে অবনুরোধ করা হবে। প্রতিবেদনের ব্যাপক প্রচার হবে। সাধারণ প্রাণী মনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়বে। উক্ত অনুরোধের প্রেক্ষিতে সভ্যসভা বসবে এবং গুরুগম্ভীর পরিবেশে ব্যাপক আলোচনা ও টেবিল চাপড়ানো শেষে লক্ষ্যবস্তু নির্মূলে বিধি প্রণয়ন করা হবে।
চতুর্থ অঙ্কঃ
দৃশ্য-১। ‘লক্ষ্যবস্তু’ সম্পর্কে চারদিকে আতংক ছড়িয়ে দিতে হবে। সাধারণ প্রাণ পথে-ঘাটে-মাঠে-গৃহে ‘লক্ষ্যবস্তু’ আতঙ্কে অস্থির হয়েপড়বে।
দৃশ্য-২। এই সুযোগে হাতিকে দিয়ে রাতের আঁধারে কিছু ‘পাদ(পায়ু পথে গন্ধযুক্ত বায়ুর তীব্র বেগে নির্গত হওয়ার দরুণ সৃষ্ট এক প্রকার শব্দ) মারাতে হবে। সাধারণ প্রাণ প্রাণভয়ে ছুটাছুটি করবে। প্রচার করতে হবে এহেন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডেরজন্য নিশ্চিত ‘লক্ষ্যবস্তু’দায়ী। যুক্তিহিসেবে উপস্থাপন করতে হবে যে, ঘটনাস্থালে‘লক্ষ্যবস্তু’র হাগু পাওয়া গেছে। কুমির সাধারণ প্রাণের নিরাপত্তার দুশ্চিন্তায় কান্নাকাটি করবে। লক্ষ্যবস্তু নির্মূলের লক্ষ্যে সাধারণ প্রাণ যুদ্ধ কামনা করবে।
পঞ্চম অঙ্কঃ
দৃশ্য-১। এ পর্যায়ে ‘নতুন বিশ্বের স্বপ্নভূমি’র মহামান্য সমর অধিপতি বীর সৌর্য, ব্যঘ্র পা’র একক নেতৃত্বে জোট গঠন করতে হবে এবং ‘দয়াপরবশ’ হয়ে তিনি সভ্যতা উদ্ধারে সাহসী সত্য যুদ্ধে সর্বময় ক্ষমতা নিয়ে ঝাপিয়ে পরবেন এবং লক্ষ্যবস্তু নির্মূল করবেন’।”
আবারও করতালিতে করতালিতে সভাগৃহ প্রকম্পিত হয়ে উঠল। সকলে গাধার জ্ঞানের প্রশংসা করলেন।
এবার নিবিড় হরিৎ ভূমির অকপট, নির্লোভ ও ভাবলেশহীন ব্যক্তিত্ব, মাননীয় কুমির প্রতিনিধি তার প্রকান্ড লেজ দিয়ে টেবিল চাপড়ে সভাপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন। সভাপতির অনুমতিক্রমে তিনি তার বক্তব্য শুরু করলেন, ‘মান্যবর শিয়াল পা’ আমি আজকে অত্যন্ত আনন্দিত। বিলম্বে হলেও আপনারা সন্ত্রাসীদের স্বরূপ উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছেন। আমি এবং আমার সম্প্রদায় বহুকাল ধরে বলে আসতেছি যে, তৃণভোজী প্রাণই হচ্ছে প্রকৃত সন্ত্রাসী (এ সময় অল্প কিছু তৃণভোজীর মৃদু প্রতিবাদের আওয়াজ শোনা গেল)। শুধু হস্তি আর জিরাফ সম্প্রদায় ব্যতিক্রম। এই হস্তি এবং জিরাফকে আমার সম্প্রদায় শান্তির সপক্ষের শক্তি হিসেবে ইতোমধ্যে ঘোষনা দিয়েছে এবং ‘মহান কুমির শান্তি পুরস্কারের’ জন্য মনোনিত করেছে। (এ সময় হস্তিএবং জিরাফের মুখ বেশ উজ্জ্বল হয়ে উঠতে দেখা
গেল)। আজ আমি দ্ব্যার্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করতে চাই- এই চির শান্তির ভূমিতে কোন ধরণের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড কুমির সম্প্রদায় বরদাস্ত করবে না। তৃণভোজী সন্ত্রাসীদেরকে নির্মূল করতে কুমির সম্প্রদায় একযোগে কাজ করবে। আমি শিয়াল পা’- কে বলতে চাই আমাদের কুমির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে যে সকল সাম্প্রদায়ীক হিংসা নব্য মেষ সম্প্রদায় চালিয়ে থাকে তারও বিহিত করতে হবে। নিরীহ শান্তিপ্রিয় কুমির সম্প্রদায় আশাকরে সভ্যসমাজ বিধি প্রণয়ন করে নব্য মেষ সম্প্রদায়ের এহেন ঘৃণা ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কুমির সম্প্রদায়কে আইনী সুরক্ষা প্রদান করবেন। আমি আরোও আশাকরি ‘সভ্যপ্রাণ’ পরিভাষাকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করা হবে এবং তৃণভোজীরা নতুন সংজ্ঞায় আর ‘সভ্যপ্রাণ’ বলে বিবেচিত হবে না এবং তৃণভোজীদের উপর মাংসাসী সভ্যপ্রাণের ‘অধিকার’ হবে ‘অবাধ’। বিশেষ করে নব্য মেষ সম্প্রদয়ের উপর কুমির সম্প্রদায় পরিপূর্ণ অধিকার ভোগ করবে। শিয়াল পা’, পবিত্র প্রাচীন ভূমির আদি কুমির পা’র ইচ্ছাও অনুরূপ ৷ এখানে উল্লেখ্য যে, কুমির সম্প্রদায় সভ্যপ্রাণীদের মধ্যে আদিমতম ও পবিত্র। জগদ্বিশ্বর মনোনীত। কুমিরের কাছে স্বয়ং জগদ্বিশ্বর অঙ্গীকারাবদ্ধ। সুতরাং কুমির সম্প্রদায় থাকবে সকল আইনের ঊর্ধ্বে। তারা পবিত্রভূমির উত্তরাধীকারী। তারা পবিত্রতম।’
আইন সভা আবারও করতালির শব্দে প্রকম্পিত হল ।
এবার উদার গণতান্ত্রীক সভ্যপ্রাণ প্রজাতণন্ত্রের শক্তিমান সদস্য, সভ্যসমাজের অহংকার, আধুনিক প্রাণ সভ্যতার প্রবক্তা, শান্তির দূত শ্রদ্ধেয় ব্যঘ্র প্রতিনিধি গুরু গম্ভীর ঢঙে তার বক্তব্য শুরু করলে। আইন সভা নীরব নিঃস্তব্ধ ৷
-সম্মানিত শিয়াল পা’, আমার বক্তব্যের শুরুতেই আমি ধন্যবাদ দিতে চাই শান্তির সকল পক্ষ শক্তিকে। বিশেষ করে সম্মানিত কুমির, জিরাফ ও হস্তি প্রতিনিধিকে। তাদের বক্তব্যে শান্তির স্বপক্ষে যে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত হয়েছে তা সত্যি আমাদেরকে আশাবাদী করে তুলে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে এই শান্তির হরিৎভূমিতে ইবলিশের রাজত্ব কায়েম হবে না। ইবলিশের বিরুদ্ধে আমাদের মহান ব্যঘ্র সম্প্রদায় শান্তির স্বপক্ষে যে মহান সংগ্রামের স্বপ্ন দেখে আজ তা বাস্তব রূপ পেতে যাচ্ছে। আজকে একটি বিষয় স্পষ্ট করতে চাই- হয় শান্তির পক্ষে, না হয় শান্তির বিপক্ষে। এই দু’দলে ভাগ হয়ে যেতে হবে। সম্মানিত কুমির প্রতিনিধি যথার্থই বলেছেন যে, এই হরিৎভূমির সকল অশান্তির মূলে ঐ তৃণভোজী শয়তানেরা। সুতারাং শয়তানের বিরুদ্ধে শান্তিকামী মাংসাসীসভ্যপ্রাণ সম্প্রদায় আজ এই সভায় সিদ্ধান্ত নিচ্ছে যে, যতক্ষণপর্যন্ত শয়তান চিরতরে নির্মূল না হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত ‘শয়তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ চলবে। আপনাদেরকে আশ্বস্ত করছি যে, এই বীরত্বপূর্ণ সাহসী যুদ্ধে ব্যঘ্র সম্প্রদায় নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত। (করতালি)। মিস্টার শিয়াল পা’, আজকে সকল শুভ শক্তি ঐক্যবদ্ধ । সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, আতংকবাদের বিরুদ্ধে আমাদের মহৎ অঙ্গীকারের বিজয় সুনিশ্চিত। শান্তির সপক্ষে যে নজিরবিহীন ঐক্য স্থাপিত হল তা আমাদেরকে আগামী প্রজন্মের কাছে অনুসরণীয় করে রাখবে। আগামী প্রজন্মের জন্য নিরাপদ ও বাসযোগ্য হরিৎভূমি প্রতিষ্ঠার মহান সংকল্প থেকে কোন কিছুই আমাদেরকে বিচ্যুত করতে পারবে না। অন্ধকারের সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে শান্তির স্বপক্ষের শুভ শক্তির এই ঐক্য প্রাণসভ্যতা ইতিহাসের এক নজিরবিহীন ঘটনা। এই শান্তির পথ যাত্রায় আমি ব্যঘ্র সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে সবাই কে জানাই অভিবাদন।
আজকের এই মহান সভায় আমি শান্তির সপক্ষে নিম্নোক্ত সাত দফা ঘোষণা করছিঃ
১। ‘সভ্যপ্রাণ’ বলতে শুধুমাত্র মাংসাসী প্রাণীসম্প্রদায় এবং হস্তি ও জিরাফ সম্প্রদায়কে বুঝাবে। ‘সভ্যপন্ডিৎ’ বলতে কেবলমাত্র ‘নতুন বিশ্বের স্বপ্ন ভূমি’ এর মহান পন্ডিৎ খচ্চর পা’ কে বুঝাবে ।
২।‘সভ্যপ্রাণ সার্বজনীন সমতা অধিকার’
কেবলমাত্র মাংসাসী প্রাণীসম্প্রদায়ের সদস্যগণ এবং হস্তি ও জিরাফ সম্প্রদায়ের সদস্যগণ ভোগকরার জন্য বিবেচিত হবেন।
৩। তৃণভোজী সম্প্রদায়ের উপর মাংসাসী প্রাণীদের অধিকার হবে সংবিধিবদ্ধ এবং এই অধিকার অবাধ ও দায়মুক্ত ।
৪। নব্য-মেষ সম্প্রদায়ের স্থাবর ও অস্থাবর, জীবন ও দেহ-এর উপর একক মালিকানা ও ভোগের অধিকার কেবলমাত্র কুমির সম্প্রদায় সংরক্ষণ করবে। এই অধিকার স্বর্গীয় প্রভুকর্তৃক মনোনীত বলে বিবেচিত হবে। এবং কুমির সম্প্রদায়ের সকল কর্মকান্ড সকল আইনের ঊর্ধ্বে- দায়মুক্ত থাকবে। কুমির সম্প্রদায়ের যে কোন কর্মকান্ডের ব্যাপারে সমালোচনা সাম্প্রদায়িক ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ বলে বিবেচিত হবে, এবং এহেন কর্মকান্ড গুরুতর অপরাধ বলে বিবেচিত হবে যার শাস্তিহবে মৃত্যুদন্ড। হস্তি সম্প্রদায়ও সমালোচনার উর্দ্ধে। তাদের সমালোচনাও সাম্প্রদায়িক ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ বলে বিবেচিত হবে।
৫। পিপীলিকার বিষয়ে হস্তির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত ।
৬। অন্যান্য সকল মাংসাসী প্রাণী ব্যঘ্র সম্প্রদায়ের অনুমোদন সাপেক্ষে অবাধ অধিকার ভোগকরবে। সামরিক সার্বভৌমত্বের একক এখতিয়ার ব্যঘ্র সম্প্রদায় সংরক্ষণ করবেন। ‘নতুন বিশ্বের স্বপ্ন ভূমি’-এর মহান সৌর্য ব্যঘ্র পা’র নেতৃত্বে গঠিত হবে শান্তির স্বপক্ষে সামরিক জোট। এই নেতৃত্বই হবে তাবৎ হরিৎভূমির একছত্র ভাগ্যবিধায়ক। এই জোটের নেতৃত্বে শান্তির স্বপক্ষে শয়তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালিত হবে।
৭। ইচ্ছায় হোক কিংবা অনিচ্ছায় হোক উপর্যুক্ত দফাসমূহ তাবৎ হরিৎ ভূমির সকল প্রাণী মেনে চলতে বাধ্য থাকবে।
‘নতুন বিশ্বের স্বপ্ন ভূমি’-এর মহান সৌর্য ব্যঘ্র পা’র ইচ্ছাও অনুরূপ । শান্তির জয় হোক। শয়তান নিপাত যাক। শয়তানের বিরুদ্ধে সভ্যপ্রাণের জয় হোক। সবাইকে ধন্যবাদ ।
তুমুল করতালির মধ্যদিয়ে ব্যঘ্র প্রতিনিধির বক্তব্য শেষ হল। দীর্ঘক্ষণ করতালি আর ব্যঘ্র প্রতিনিধি সমর্থনে স্লোগান হল । অতঃপর মান্যবর শিয়াল পা’র বক্তব্যের পূর্বেই পক্ষিকুল প্রতিনিধি শান্তির বার্তাবাহক সম্মানিত শকুন প্রতিনিধি বললেন,
“আমি আর বিলম্ব না করেই আমাদের মহান মুক্তির ৭ দফা সনদ দিকে দিকে প্রচারের ব্যবস্থা করছি এবং শয়তানের বিরুদ্ধে শান্তির স্বপক্ষে মহান যুদ্ধের সংবাদ চতুর্দিকে ছড়িয়ে দিচ্ছি। জয় হোক শান্তির। শয়তান নিপাত যাক। জয় হোক সভ্যপ্রাণের, সন্ত্রাস নিপাত যাক”। এই বলে শকুন প্রতিনিধি সভা গৃহ থেকে প্রস্থান করলেন ।
অতঃপর মান্যবর শিয়াল পা’ তার বক্তব্য শুরু করলেন,
‘আমি প্রথেই কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি শান্তির ও সভ্যতার লীলাভূমি ‘নতুন বিশ্বের স্বপ্ন ভূমি’-এর মহান সৌর্য ব্যঘ্র পা’, ‘আদর্শ পশ্চিম জিরাফ ভূমি’- এর মহান আদি জিরাফ পা’, পবিত্র প্রাচীন ভূমির আদি কুমির পা’, ‘আদর্শ সভ্যপ্রাণ ভূমি’ এর মহান ‘আদিহস্তি পা’ এর প্রতি যাদের আশির্বাদে আমি আপনাদের প্রজাতন্ত্রের প্রাধান হয়েছি। বিশেষ করে আদি হস্তি পা’ পদে আমার অজস্র ভক্তি সম্মান, কেননা তার আর্শিবাদের ফলেই অন্যসকল মহান পা’বৃন্দ আমাকে সমর্থন দান করেন। জয় আদি হস্তি পা’, জয় আদি হস্তি মাতা। আপনাদের ইচ্ছাই আমার ইচ্ছা। আজ সভ্যপ্রাণ ইতিহাসের এক স্বর্ণালী দিন। আজকে রচিত হতে যাচ্ছে সভ্যতার ইতিহাসের সবচেয়ে উজ্জ্বলতম অধ্যায়। আমি সম্মানিত ব্যঘ্র প্রতিনিধির সাত দফার সনদকে আমাদের মুক্তি তথা ‘সার্বজনীন বিশ্ব শান্তি সনদ’ বলে ঘোষণা করছি, এবং এই সাথে মোরগ সম্প্রদায়ের উপর শিয়াল সম্প্রদায়ের একক অধিকার সংরক্ষিত থাকবে বলে ঘোষণা করছি। সর্বসম্মতিক্রমে এই সাত দফা ও মোরগ সম্প্রদায়ের উপর শিয়াল সম্প্রদায়ের অবাধ অধিকারকে আইনে পরিণত করা হল এবং এই মহান সভা থেকে মহান সৌর্য ব্যঘ্র পা’কে অনতিবিলম্বে শয়তানের বিপক্ষে শান্তির যুদ্ধ শুরু করতে বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।
সভ্যতার জয় হোক।”
লেখক : শিক্ষক, বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজ, সিলেট ।