শাহ সুহেল আহমদ:
থমকে আছে কর্মচঞ্চল জীবন। কোলাহলহীন নগর বন্দর সব। দেখা নেই প্রতিবেশী কিংবা স্বজনের। ঘরবন্দি একগুয়ে জীবন। আরও কতদিন এভাবে থাকতে হবে, জানে না কেউই।
কিন্তু তাই বলে কি থেমে থাকবে সামাজিক সৌহার্দ্য! পারস্পরিক সম্প্রীতি? সংকটকালীন এসময়ে নিজেদের উজ্জীবিত করতে, মনকে সজীব রাখতে ফরাসিরা বেছে নিয়েছেন অভিনব এক পন্থা।
ঘড়ির কাঁটায় প্রতিদিন সন্ধ্যা ৮টা। সময় মাত্র কয়েক মিনিট। এক অন্যরকম পরিবেশের সৃষ্টি হয় গোটা ফ্রান্স জুড়ে। সন্ধ্যা ৮টার আগমুহূর্তে একে একে জড়ো হন নিজেদের জানালা বা বেলকনিতে। ঠিক ৮টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে মুহুর্মুহু তালি শুরু হয় চারদিকে। হাততালি। প্রত্যেক মানুষ হাততালি দেয় এক তালে। হাততালিরও যে একটা ভাষা আছে তা দেখা যায় ওই সময়।
এসময় কেউ কেউ গান ধরেন জোর গলায়। আবার কেউ ফরাসি বিভিন্ন শ্লোক আওড়ান। বেশিরভাগ জায়গায় হাততালির সময় ২ থেকে ৩ মিনিট থাকে। তবে কোথাও কোথাও ৫ থেকে ১০ মিনিটও চলে এক তালের ওই হাততালি।
এ তালির আওয়াজ বড়ই শক্তিশালী। মাত্র কয়েক মুহূর্তের এ তালিই যেন আরও এক দিন বেঁচে থাকার প্রেরণা দিয়ে যায়। মানসিক বল বৃদ্ধির পাশাপাশি পরস্পরকে কাছে টেনে রেখেছে এখনও। হাততালির ভাষাটা যেন এমন, ‘আমি এখনও ভাল আছি, তুমি কেমন আছো?’
সারাদিনের একগুয়েমি এ কয়েক মিনিটে উড়িয়ে দিতে চান তারা। মনকে চাঙ্গা করতে এ কার্যক্রম বেশ কার্যকর বলে মন্তব্য করেছেন ফরাসিরা। এসময় সবার মুখেই হাসির রেখা ফুটে ওঠে। শুধু যে ফরাসিরাই হাততালি দিচ্ছেন এমনটি নয়। সন্ধ্যা ৮টার এ হাততালি যজ্ঞে যোগ হচ্ছেন ফ্রান্সে বসবাসরত বাংলাদেশিসহ সব অভিবাসী মানুষ।
এ যেন ফ্রান্সের অন্যরকম এক চিত্র। হাততালি শেষে কয়েক মিনিটের জন্য নিজ নিজ জানালা বা বেলকনিতে দাঁড়িয়েই এক বাসার মানুষ আরেক বাসার মানুষের সঙ্গে কথা বলেন আনমনে। ‘আগামিকাল আবার দেখা হবে’ বলে শেষ হয় সন্ধ্যার ওই অভিনব যজ্ঞ।
সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এমন সৌহার্দ্য প্রশংসিত হচ্ছে সবখানেই।
###
লেখক