নিজস্ব প্রতিবেদক:
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে প্যারিসে অনুষ্ঠিত হয়েছে- “বিজয়ের কবিতাপাঠ” অনুষ্ঠান। গতকাল ২৬ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্যারিসের একটি হলে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সাহিত্যের ছোটোকাগজ ‘স্রোত’।
‘স্রোত’ সম্পাদক কবি বদরুজ্জামান জামানের সঞ্চালনায় সমবেত কন্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশন এর মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়।
অনুষ্ঠানের স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন- কবি বদরুজ্জামান জামান, কবি ও ছড়াকার লোকমান আহমেদ আপন,
কবি সোহেল আহমেদ এবং ইসরাত ফ্লোরা।
বিশিষ্ট কবিদের লেখা জনপ্রিয় কবিতা থেকে পাঠ করেন- আবৃত্তিশিল্পী মুনির কাদের, আবৃত্তিশিল্পী সাইফুল ইসলাম,
ফরাসি থিয়েটারকর্মী সোয়েব মোজাম্মেল, খালেদুর রহমান সাগর, কবি নজরুল একাডেমী ফ্রান্সের সদস্য মইনুল হক,
শিশুশিল্পী রামিসা বাতুল এবং কবিতা নিয়ে চমৎকার একক পরিবেশনা ছিল- আবৃত্তিশিল্পী আবু বকর আল আমিনের।
তাছাড়াও অনুষ্ঠানে “স্বাধীনতা তুমি” কবিতার বাংলাসহ ইতালিয়ান ভাষায় স্ব অনুবাদ পাঠ করেন- জিয়াউর রহমানের হৃদয়। ফরাসি ভাষার স্ব অনুবাদ পাঠ করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হাসনাত জাহান।
মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বিজয় দিবস নিয়ে একক আলোচনা করেন- মুক্তিযোদ্ধা সন্তান বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী আরিফ রানা।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে সংগীত পরিবেশন করেন- সঙ্গীত শিল্পী আরিফ রানা ও কুমকুম সাঈদা।
আন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- সেইফ ড্রাইভ অটো স্কুলের পরিচালক- মোহাম্মদ আহমেদ সেলিম, সাংবাদিক রাকিবুল ইসলাম, চয়ন জামান কামরুল ইসলাম, সুমন আহমেদ প্রমূখ।
বাঙালি জাতির হাজার বছরের শৌর্যবীর্য ও বীরত্বের এক অবিস্মরণীয় গৌরবময় দিন ১৬ ডিসেম্বর। বীরের জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশের দিন। পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন ভূখণ্ডের নাম জানান দেওয়ার দিন।
লাখো শহীদের রক্ত দিয়ে যে ভূখণ্ডের সীমানা গড়েছিলেন বীর বাঙালিরা। এত প্রাণ, এত রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার লক্ষ্য আজো অর্জিত হয়নি। স্বাধীন বাংলাদেশে মানবিক মর্যাদা আজও ভূলুণ্ঠিত। মৌলিক অধিকার এখনো পূরণ হয়নি। কর্মসংস্থানের প্রকট সংকটে বেকারত্বের রাহুগ্রাসে শিক্ষিত ২৬ লাখ যুবক। পদে পদে বঞ্চিত-নিষ্পেষিত সাধারণ মানুষ।
বিগত ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে জগদ্দল পাথরের মতো চেপে থাকা স্বৈরাচারী শাসক শেখ হাসিনার সরকারকে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের রাজপথে জন বিস্ফোরণের মধ্যদিয়ে উৎখাত করা হয়। ভিন্নমতাবলম্বীদের ওপর নিপীড়ন, গুলি চালিয়ে আন্দোলন দমন, গুম খুনসহ নির্যাতনের বিরুদ্ধে গণবিস্ফোরণ ও ক্ষুব্ধ জনতার রাজনৈতিক রোষানলের পড়ে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান।
২০২৪-এর জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর থেকে জনগণ নতুন করে বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখছে। আবার বৈষম্যহীন সমাজ-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে প্রকৃত স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের ইতিবাচক প্রত্যাশা এখন সবার মাঝে। যেখানে থাকবে গণতন্ত্র, আইনের শাসন, ন্যায়বিচার, মানবাধিকার এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা। যেখানে দুঃশাসন, বঞ্চনা, বৈষম্য থাকবে না। বেকারত্বের গ্লানি জীবন থেকে দূর হবে।
এই স্বপ্ন যুবসমাজ নতুন করে দেখছে। যেখানে কৃষক-শ্রমিক তার ন্যায্য অধিকার পাবে। তাদের স্বাধীনতার স্বপ্ন পূরণ হবে।
জাতি আজ একাত্তরের মত নতুন করে ঐক্যবদ্ধ। বিভক্তির রাজনীতির মাধ্যমে আমাদের আবারো যেন কেউ অন্ধকারে ঠেলে না দেয় সে ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। তরুণ যুবসমাজের নেতৃত্বে দেশ-জাতি সমৃদ্ধি ও অগ্রগতির পথে এগিয়ে যাবে। এ প্রত্যাশা এ বারের বিজয় দিবসের সমগ্র দেশবাসীর। আমরা চাই ছাত্র জনতার বৈষম্যহীন সমাজ, গণতন্ত্র সুশাসন ফিরিয়ে এনে স্বাধীনতার প্রকৃত সুফল ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে সক্ষম। এবারের বিজয় দিবসে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
অনুষ্ঠান শেষে বিজয়ের কেক কাটা এবং আপ্যায়নের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্ত হয়।
সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন- মোহাম্মদ আহমেদ সেলিম।