সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি :: সুনামগঞ্জে নদী তীরবর্তী এলাকা ও নিম্নাঞ্চর বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পানিতে সুনামগঞ্জ শহরের বিভিন্ন এলাকা ডুবে গেছে। ভারী বৃষ্টিপাত এবং উজানে ভারতের মেঘালয় পাহাড় ও চেরাপুঞ্জিতে টানা বৃষ্টিপাত হওয়ায় পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জে বন্যা দেখা দিয়েছে।
শনিবার সকাল থেকে সুরমা নদী উপচে সুনামগঞ্জ শহরের বিভিন্ন এলাকা ডুবে গেছে যায়। শহরে তেঘরিয়া, আরপিননগর, বড়পাড়া, কাজির পয়েন্ট, ষোলঘর, ওয়েজখালি, মল্লিকপুসহ বিভিন্ন এলাকা তলিয়ে যায়।
এদিকে, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে বন্যা দেখা দেয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন সুনামগঞ্জের বন্যাকবলিত মানুষ। কারো কারো বাড়িতে উঠে গেছে পানি।
শহরের পশ্চিম তেঘরিয়া এলাকার আহমদ হোসেন বলেন, আমার ঘরে প্রায় কোমর পানি। সকালে জিনিসপত্র সরাতে সরাতে পানি ওঠে গেছে। কি করব এখন কিছুই করার নাই। যে কারো বাসায় গিয়ে ওঠতে হবে। আশ্রয়ের জন্য এছাড়া আর উপায় নেই। ঘরে খাবার যা ছিল সব পানিতে ভেসে গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, সুরমা নদীর পানি ষোলঘর পয়েন্ট দিয়ে দুপুর ১২টার দিকে বিপদ সীমার ৫৭ সেন্টিমিটার এবং পাহাড়ী নদী যাদুকাটার পানি বিপদসীমার ৫৬ সেন্টিমিটার
উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। যেহেতেু বৃষ্টি অব্যাহত আছে সে কারণে বন্যার পানি দুই তিন দিনের মধ্যে কমার সম্ভাবনা নেই।
শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া সুরমা ও মেঘালয় থেকে নেমে আসা সীমান্তবর্তী পাহাড়ী নদীগুলোর পাড় উপচে প্রত্যন্ত এলাকায় পানি প্রবেশ করায় নদী তীরবর্তী এলাকা ও জেলার সুনামগঞ্জ সদর, দোয়ারাবাজার, বিশ^ম্ভরপুর এবং তাহিরপুরের নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। নিম্নঞ্চলের অনেক বাড়ি-ঘরে সকালেই পানি ওঠার খবর পাওয়া গেছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডে নির্বাহী প্রকৌশলী সবিবুর রহমান জানিয়েছেন, ভারতের মেঘালয়- চেরাপুঞ্জিতে গত ৭২ ঘণ্টায় ৯০২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। যা এই মৌসুমের সর্বোচ্চ। গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ১৯০ মিলিমিটার বৃষ্টি এবং এর আগের ৭২ ঘণ্টায় ২৯৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। এ কারণে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমা ৫৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া পাহাড়ী নদী যাদুকাটার পানি বিপদসীমা ৮.৫ অতিক্রম করে ৮.৬১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দু’তিন দিনের মধ্যে সুনামগঞ্জে বন্যার পানি কমার কোনও সম্ভাবনা নেই। বরং বৃষ্টিপাত ও ঢল নামা অব্যাহত থাকলে বন্যার অবনতি হতে পারে।
সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত বলেন, শহরের সব জায়গায়ই পানি। পরিস্থিতির আরও অবনিতি হলে প্রশাসনের সহায়তায় উঁচু স্কুলগুলোতে আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হবে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, ইতিমধ্যে বিভিন্ন উপজেলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করার জন্য বলা হয়েছে। সকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে প্রয়োজন হলে দ্রুত আশ্রয় কেন্দ্র খোলার জন্য। বন্যা পরিস্থিতি সার্বিক ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।