বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

Sex Cams

উপনির্বাচনের ফলাফলে বিজেপির কপালে চিন্তার ভাঁজ




সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়, নয়াদিল্লি

দেশের ১৩টি রাজ্যের ২৯টি বিধানসভা ও ৩টি লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের ফল ভারতের শাসক দল বিজেপির চিন্তা বাড়াল। আগামী বছরের গোড়ায় পাঁচ রাজ্য বিধানসভার ভোটের আগে এই ফল নিশ্চিতভাবেই যেমন তাদের দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করবে, তেমনই কিছুটা আশ্বস্ত করবে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসকে। পাশাপাশি বিজেপিকে নতুন করে ভাবতে হবে পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে। সেখানে চার বিধানসভা কেন্দ্রে শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের দাপটে তারা দাঁড়াতে তো পারেইনি, উল্টো প্রাপ্ত ভোটের হার নেমে দাঁড়িয়েছে ১৫ শতাংশের কম। শুধু তা–ই নয়, পশ্চিমবঙ্গে তিনটি কেন্দ্রে বিজেপির জামানত পর্যন্ত জব্দ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্ব নিয়ে এই নির্বাচনী ফল বড়সড় প্রশ্ন তুলে দিল।
বিজেপির পক্ষে হতাশার বড় কারণ হিমাচল প্রদেশে কংগ্রেসের জয়জয়কার। বিজেপি–শাসিত এই রাজ্যে মান্ডি লোকসভা আসনও কংগ্রেস তাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে। বাকি তিনটি বিধানসভা আসনেও বিজেপিকে পর্যুদস্ত করেছে শতবর্ষী কংগ্রেস। নির্বাচন কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী এই রাজ্যে কংগ্রেসের প্রাপ্ত ভোট পৌঁছেছে প্রায় ৪৯ শতাংশে, শাসক বিজেপি পেয়েছে মাত্র ২৮ শতাংশ। আগামী বছর এই রাজ্যে বিধানসভার ভোট বিজেপির কাছে যে সুখকর হবে না, এই উপনির্বাচন তার স্পষ্ট বার্তা বয়ে আনল। রাজ্যের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী জয়রাম ঠাকুর পরাজয় মেনে বলেছেন, জনতার রায় মাথা পেতে নিলাম। বিজেপিতে ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী বদলের চিন্তা ঢুকে গেছে।
উত্তর ভারতের অন্য রাজ্য হরিয়ানাও বিজেপি–শাসিত। কৃষক আন্দোলনে তোলপাড় এই রাজ্যে ভারতীয় লোকদলের কাছে বিজেপি পর্যুদস্ত হয়েছে। ভারতীয় লোক দল প্রার্থী অভয় চৌটালা এই জয়কে আন্দোলনরত কৃষকদের জিত বলে অভিহিত করেছেন। শুধু তা–ই নয়, এই ফলের পর তিনি বিজেপি সরকারের পদত্যাগও দাবি করেছেন।

সাত বছর ধরে ভোট রাজনীতির ধারাবাহিকতা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ভোটাররা সচেতনভাবে বিধানসভা ও লোকসভা নির্বাচনকে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করেছেন। রাজ্য ও কেন্দ্রের স্বার্থ আলাদাভাবে বিবেচনায় নিয়েছেন। কেন্দ্রের জন্য বেছে নিয়েছেন বিজেপি প্রার্থীদের, যাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হাত শক্ত হয়। এবার কিন্তু সেই বিবেচনা বোধ কাজে দেয়নি। তিনটি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে হিমাচল প্রদেশের মান্ডি আসনটি তারা হারিয়েছে কংগ্রেসের কাছে, কেন্দ্রশাসিত দাদরা ও নগর হাভেলি এবং দমন ও দিউ কেন্দ্রে বিজেপি হেরেছে শিবসেনার কাছে। জিতেছে মধ্যপ্রদেশের খান্ডোয়া লোকসভা আসনটি। কিন্তু সেই আসনেও ৪৩ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে বিজেপির ঘাড়ের ওপর নিশ্বাস ফেলেছে কংগ্রেস। বিজেপি বুঝতে পারছে, অনুগামীদের নিয়ে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার দলত্যাগ কংগ্রেসকে হীনবল করতে পারেনি।
নানাভাবে দীর্ণ কংগ্রেস এবারও কিন্তু প্রমাণ করল, বিজেপির প্রবল প্রতিপক্ষ এখনো তারাই। হিমাচল প্রদেশের সব কেন্দ্র ছাড়াও রাজস্থানে দুটি উপনির্বাচনেই জয় হয়েছে তাদের। বিজেপি–শাসিত মধ্যপ্রদেশে তিনটি উপনির্বাচনে বিজেপি দুটিতে জিতলেও একটি জিতেছে কংগ্রেস। একইভাবে বিজেপি–শাসিত কর্ণাটকের দুটি আসনের মধ্যে একটি ছিনিয়ে নিয়েছে কংগ্রেস। দাক্ষিণাত্যের এই রাজ্যের নতুন বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্মাইয়ের এটাই ছিল প্রথম নির্বাচন। লিঙ্গায়েত নেতা ইয়েদুরাপ্পার অপসারণের পর এটা ছিল বিজেপিরও প্রথম পরীক্ষা। সেই পরীক্ষার ফল এই রাজ্যেও তাদের চিন্তায় রাখল।

শাসক বিজেপির শরিক সংযুক্ত জনতা দলের চিন্তা বিহারে কিছুটা বাড়িয়েছে রাষ্ট্রীয় জনতা দল। এই রাজ্যে দুটি আসনের মধ্যে জেডি (ইউ) ও আরজেডি একটি করে আসন পেয়েছে। মহারাষ্ট্রের একমাত্র আসন কংগ্রেস শুধু জেতেনি, প্রাপ্ত ভোটের হার বাড়িয়ে করেছে ৫৭ শতাংশ।

বিজেপি ও তার শরিকেরা খুব ভালো করেছে আসাম ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে। এই বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে কংগ্রেস ক্রমশ পিছু হটছে। আসামে মোট পাঁচটি আসনের তিনটি পেয়েছে বিজেপি, বাকি দুটি তার সহযোগী দল ইউপিপিএল। নাগাল্যান্ড, মিজোরাম ও মেঘালয়ের আসনগুলো জিতেছে স্থানীয় দলেরা। বিজেপি অন্ধ্র প্রদেশে ওয়াইএসআর কংগ্রেসকে হারাতে না পারলেও তেলেঙ্গানার শাসক দল টিআরএসের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে একটি আসন।

এই উপনির্বাচনের একটিও আসন ছিল না উত্তর প্রদেশে। কিন্তু দেশের এই বৃহত্তম রাজ্যে বিজেপি যে স্বস্তিতে নেই, তার বড় প্রমাণ মঙ্গলবারই পাওয়া গেল মীরাটে দলের শীর্ষ নেতা সুনীল ভারালার চিঠিতে। উত্তর প্রদেশের লেবার ওয়েলফেয়ার কাউন্সিলের এই চেয়ারম্যান কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়ামমন্ত্রী হরদীপ পুরীকে এক চিঠিতে জানিয়েছেন, অবিলম্বে পেট্রল-ডিজেলের দাম না কমালে দলকে মারাত্মক ক্ষতির মুখোমুখি হতে হবে। তিনি বলেছেন, এমনিতেই কৃষি আইন নিয়ে কৃষকের অসন্তোষ তীব্র; তার ওপর নিত্য পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি মানুষকে জর্জরিত করছে, অথচ সরকার উদাসীন।

উত্তর প্রদেশে প্রচারে গিয়ে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ নির্বাচনী জনসভায় বলেছেন, রাজ্য দখল না হলে দিল্লিতে মোদি সরকারের চিন্তা বাড়বে। শাহর এই মন্তব্য বিজেপির অস্বস্তি বাড়িয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি উত্তর প্রদেশে বিজেপির হাল নড়বড়ে? বিজেপির দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব জোটের ঘোষণা করেছেন রাষ্ট্রীয় লোকদলের সঙ্গে। জাটপ্রধান উত্তর প্রদেশে কৃষক ক্ষোভে ভর দিয়ে ইদানীং নতুন করে প্রাসঙ্গিকতা ফিরে পেতে চাইছেন। আরএলডি নেতা জয়ন্ত চৌধুরীর সঙ্গে গত সোমবার দীর্ঘ বৈঠক করেছেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্রও। উত্তর প্রদেশের নয়া রাজনৈতিক মেরুকরণের সম্ভাবনার মাঝে দেশজোড়া উপনির্বাচনের ফল বিজেপির বলিরেখা গভীর করতে বাধ্য। দলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, ‘আমরা এই ফল আশা করিনি।

সম্পাদক: শাহ সুহেল আহমদ
প্যারিস ফ্রান্স থেকে প্রচারিত

সার্চ/খুঁজুন: