ঢাকা অফিস:
হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে খোলা আকাশের নিচে নিম্ন মানের খাবার খেয়ে বিদেশগামী কর্মীরা পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। বিদেশে গিয়ে এসব প্রবাসী কর্মী অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। এতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত পেটের পীড়ায় আক্রান্ত প্রবাসী কর্মীদের অসুস্থতার বিষয়টি দেখভাল করার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জরুরি চিঠি দিয়ে অবহিত করেছে।
করোনা মহামারির বিধি নিষেধসহ নানা আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্নের জন্য প্রায় ৬ ঘণ্টা আগে বিমানবন্দরে আসতে হয় প্রবাসীকর্মীদের। আর মধ্যপ্রাচ্যের সংযুক্ত আরব আমিরাতগামী যাত্রীদের আসতে হয় অন্তত ৮ ঘণ্টা আগে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এসে একটা লম্বা সময় প্রবাসীকর্মীদের কাটাতে হয় বিমানবন্দরেই। এ সময়ে তারা বিমানবন্দর ও আশপাশের দোকান ও ক্যান্টিন থেকে খাবার ও পানি কিনে যেমন খান, আবার অনেকেই খান বাড়ি থেকে সঙ্গে নিয়ে আসা খাবার। অনেকে খরচ বাঁচাতে না খেয়েও থাকেন। দীর্ঘসময় অভুক্ত থাকা, অস্বাস্থ্যকর খাবার ও পানি গ্রহণ, পর্যাপ্ত বিশ্রাম না নেয়ায় অনেকেই সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাতারে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। যাদের অনেকেই কলেরাসহ নানা রকমের পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। এরইমধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে বাংলাদেশিদের সেদেশে কলেরায় আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
চিঠি পেয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় বসে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বৈঠকে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, সিটি করপোরেশন, বিএসটিআইসহ সংশ্লিষ্ট ১৬টি সংস্থার প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
সভায় সিদ্ধান্ত হয় বাংলাদেশি বিদেশযাত্রীদের মাঝে কলেরা ব্যাকটেরিয়ার বিস্তার রোধে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হবে। বিমানবন্দর ও আশপাশের এলাকার রেস্তোরাঁগুলোতে পানি ও খাবারের মান যাচাই করতে বিভিন্ন সংস্থা চালাবে অভিযান। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে গিয়ে ১৮০ জন বাংলাদেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তারা ডায়রিয়া, পেট ব্যাথা, বমি ও কলেরায় আক্রান্ত। বাংলাদেশে ডায়রিয়া, কলেরা সাধারণ স্বাস্থ্যগত অসুস্থতা বিবেচনা করা হলেও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে গুরুতর রোগ বিবেচনা করা হয়। যক্ষ্মা ও কলেরাকে ভয়ানক হিসেবেই বিবেচনা করা হয় মধ্যপ্রাচ্যে। এ কারণে দেশ দুটি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) মাশফি বিনতে শামস সাংবাদিকদের বলেছেন, মূলত বিমানবন্দর ও আশকোনা এলাকার পানি পান করার কারণেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন প্রবাসী শ্রমিকেরা। তবে এ নিয়ে বেশি উদ্বেগের কিছু নেই। শত শত যাত্রী ফ্লাইটের ১০-১২ ঘণ্টা আগেই বিমানবন্দরে এসে বিভিন্ন স্থানে অপেক্ষা করছেন। কেউ বিমানবন্দরের পার্কিংয়ে খোলা আকাশের নিচে, কেউ সামনের বাগানে বসে অপেক্ষা করছেন। বিমানবন্দরের বহুতল কার পার্কিং ভবনের ২য় তলায় আরব আমিরাতগামী যাত্রীদের জন্য করোনা পরীক্ষার ল্যাব করা হয়েছে। সেখানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে খাবারের দোকান, বসা ও টয়লেটের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে আরব আমিরাতগামী যাত্রীদের ফ্লাইটের নির্ধারিত সময়ের আগের ৬ ঘণ্টা হিসাব করেই সেখানে প্রবেশ করতে দেয়া হয়। কেউ ৬ ঘণ্টার আগে বিমানবন্দরে আসলে ল্যাব জোনে গিয়ে বসে বিশ্রাম করা, খাবার কিনে খাওয়া কিংবা সেখানের টয়লেট ব্যবহারের কোনও সুযোগ তারা পায় না। ফলে ওই ৬ ঘণ্টা সময়ের আগে আসা যাত্রীদের আশ্রয় নিতে হয় খোলা আকাশের নিচে বিমানবন্দরের পার্কিং কিংবা রাস্তায়। অন্যদিকে, বিমানবন্দরের মূল টার্মিনাল ভবনে প্রবেশের আগে যাত্রীরা নিজের সঙ্গে আনা খাবার ছাড়াও বিমানবন্দরের সামনের দোকান, পার্কিং ভবন, করোনা ল্যাব জোনে থাকা দোকান থেকে খাবার কিনে খান। তাছাড়া অনেকে এর আশপাশের রেস্তোরাঁ থেকেও খাবার কিনেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রবাসীকর্মীরা অতিরিক্ত তেল ও মশলাযুক্ত গোশত, বিরিয়ানি, তেহারি ও খিচুড়ি খান। পানি কিনে খাওয়া ও সহজলভ্য না হওয়ায় অনেকেই পর্যাপ্ত পানি পান করেন না।
হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ এইচ এম তৌহিদুউল আহসান জানান, বিমানবন্দরের ভেতরে যেসব রেস্তোরাঁ আছে, সেগুলো আমরা নিয়মিত চেক করছি। স্যানিটারি ইনস্পেক্টরের আলাদা শাখা আছে এগুলো দেখভালের জন্য। পাশাপাশি করোনার পিসিআর পরীক্ষাগারে যে চারটি খাবারের দোকান আছে সেগুলোও তদারকির মধ্যে আছে। বিমানবন্দরের আশপাশের রেস্তোরাঁ, সড়কের পাশের দোকান ও রেলস্টেশনে যাত্রীরা বিভিন্ন খাবার খাচ্ছেন। এই খাবারগুলোর গুণগত মানের কোনও নিশ্চয়তা নেই। তাই বিমানবন্দরের ভেতরে বাইরের খাবার নিতে দেয়া হচ্ছে না। এদিকে, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশন (বিএসটিআই) বিমানবন্দর ও আশপাশের এলাকার খাবারের কয়েকটি দোকানে অভিযান চালিয়ে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছে। বৃহস্পতিবার বিএসটিআই’য়ের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নাফিসা নাজ নীরার নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানকালে বিএসটিআই’র গুণগত মান সনদ (সিএম লাইসেন্স) গ্রহণ ব্যতীত বিক্রয়, বিতরণ, প্রদর্শন ও বাজারজাত করার অপরাধে এয়ারপোর্ট রেস্তোরাকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।