ফিরোজ আহমাদ:
আল্লাহর কুদরতের কোনো সীমা-পরিসীমা নেই। তিনি যেমন অসীম ও অনন্ত, তাঁর নিদর্শনাবলির শেষ বলতে কিছু নেই। আল্লাহর কুদরতের বিস্ময়কর নিদর্শন হলো যমযমের পানি।
পৃথিবীর জমিনের সর্বোৎকৃষ্ট পানি হলো যমযমের পানি। এ পানি যেমন পবিত্র, তেমনি বরকতময় ও সুস্বাদু। যমযমের পানি খাওয়ার স্বাদ কখনো মিটে না। যমযমের পানি পানে শুধু তৃষ্ণাই মিটে না; বরং ক্ষুধা নিবারণ হয়, রোগবালাই থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। হজরত রাসূল (সা.) সব সময় যমযমের পানি সঙ্গে রাখতেন। তিনি নিজে যমযমের পানি পান করতে পছন্দ করতেন।
রোগ-বিমারের দাওয়াই হিসাবে অন্যদের যমযমের পানি পান করতে বলতেন। হজরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, ‘হজরত রাসূল (সা.) যমযমের পানি পান করতেন। সফরে বের হলে যমযমের পানি সঙ্গে রাখতেন। এ পানি অসুস্থদের ওপর ছিটিয়ে দিতেন এবং তাদের পান করাতেন।’ (সুনানে তিরিমিযি ও বায়হাকি)।
পবিত্র কাবা ঘর থেকে মাত্র ২১ মিটার দক্ষিণ পূর্বে যমযম কূপের অবস্থান। আজ থেকে প্রায় ৪০০০ বছর পূর্বে হজরত ইবরাহিম (আ.) আল্লাহর নির্দেশে নিজের স্ত্রী হাজেরা (আ.) এবং শিশুপুত্র ইসমাইল (আ.)কে মক্কার ফারান পাহাড়ের পাদদেশে এক জনমানবহীন স্থানে নির্বাসন দেন।
হজরত ইবরাহিম (আ.) প্রিয়তমা স্ত্রী ও শিশুপুত্রকে বিরান মরুভূমির পাহাড়ের পাদদেশে রেখে সামান্য আহার সামগ্রী সঙ্গে দিয়ে ফেরত চলে আসেন। ওই সময়কালে আল্লাহতায়ালা ছাড়া বিবি হাজেরা (আ.) এবং হজরত ইসমাঈল (আ.)-এর আশপাশে দ্বিতীয় কেউ ছিল না। হজরত ইবরাহিম (আ.) এর রেখে যাওয়া সামান্য আহার সামগ্রী শেষ হয়ে যাওয়ার পর কোনো এক সময় হজরত ইসমাইল (আ.) পানির পিপাসায় কান্নাকাটি করতে থাকেন। বিবি হাজেরা শিশুপুত্রের তৃষ্ণা নিবারণের জন্য পানির খোঁজে চারদিক ছোটাছুটি করতে থাকেন। বিবি হাজেরা (আ.) পানির খোঁজে সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের একপ্রান্ত থেকে অপরপ্রান্তে সাতবার ছোটাছুটি করেছেন। কোথাও কোনো পানির সন্ধান পাননি।
অবশেষে পানির খোঁজে ব্যর্থ হয়ে শিশুপুত্রের কাছে ফিরে আসেন। হঠাৎ করে বিবি হাজেরা দেখতে পান, শিশুপুত্রের পায়ের গোড়ালির ঘষাতে আল্লাহর হুকুমে নিচ থেকে পানি উঠছে। এবং একটি ঝর্ণার সৃষ্টি হচ্ছে। এ ঝর্ণাটি পরে যমযম কূপ হিসাবে পরিচিতি লাভ করে।
যমযম কূপের পানি আল্লাহর কুদরতের এক বিস্ময়কর নিদর্শন। প্রতি বছর বিভিন্ন দেশ থেকে যেসব হাজি সাহেবরা হজ করতে যান, তারা নিজেরা যমযমের পানি পান করে থাকেন এবং দেশে ফেরার পথে পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়স্বজনের জন্য যমযমের পানি নিয়ে আসেন। আল্লাহতায়ালার বিস্ময়কর নিদর্শন এ কূপের পানি উত্তোলন শেষে, মাত্র ১১ মিনিটে কূপটি পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে যায়।
যমযম কূপের সৃষ্টি থেকে আজও পানির স্বাদ, গন্ধ ও গুণাগুণের কোনো পরিবর্তন হয়নি। যমযমের পানিতে ফু¬রাইডের পরিমাণ বেশি থাকায়, এ পানিতে কোনো জীবাণু জন্মাতে পারে না। আজ পর্যন্ত যমযমের পানিতে একটি ছত্রাক কিংবা শৈবালও জন্মায়নি। অলৌকিকভাবে যমযমের পানি পরিশোধন হয়ে যায়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা যমযম কূপের পানি রহস্যে উদঘাটনের জন্য গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু কোনো কূল-কিনারা করতে পারছেন না।
যমযমের পানি সম্পর্কে বিভিন্ন হাদিস এবং বর্ণনায় এসেছে, যে উদ্দেশ্যে নিয়ে যমযমের পানি পান করবে, আল্লাহতায়ালা ওই ব্যক্তির ইচ্ছা পূরণ করে দেন। হাজি সাহেবদের অনেকে যমযমের পানি রোগ-বিমার থেকে আরোগ্য উদ্দেশ্যে পান করে থাকেন। আল্লাহতায়ালা হাজি সাহেবদের অনেকেরই শেফা দান করেছেন। তাদের ইচ্ছা পূরণ করে দিয়েছেন। আল্লাহ আমাদের যমযমের পানি পানের তৌফিক দান করুক। আমিন।
লেখক : ইসলামিক চিন্তাবিদ ও গবেষক