নিজস্ব প্রতিবেদক:
আগামী বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ফ্রান্সজুড়ে এক বৃহত্তর সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন। সরকারের নতুন ব্যয়সংকোচন নীতি ও বাজেট ঘাটতি মোকাবেলায় ঘোষিত সংস্কারের বিরুদ্ধে এই কর্মসূচি পালিত হবে। ধর্মঘটে পরিবহন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ডাক ও প্রশাসনিক খাতসহ একাধিক সেক্টরে ব্যাপক অচলাবস্থার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কেন এই ধর্মঘট?
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে সরকার বাজেট ঘাটতি কাটাতে বিভিন্ন খাতে ব্যয় হ্রাসের ঘোষণা দিয়েছে। বিশেষ করে জনসেবামূলক খাত—পরিবহন, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা—এ ব্যয় সংকোচনের পরিকল্পনা জনমনে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। শ্রমিক ইউনিয়নগুলো বলছে, এর ফলে সাধারণ মানুষই সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হবে।
“আমরা সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে চাই, কিন্তু যদি বাজেট সংকোচনের নামে জনগণের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়, তাহলে রাস্তায় নামা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না,” এক শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানান।
কোন কোন খাতে প্রভাব পড়তে পারে
ধর্মঘটের ফলে বিশেষ করে পরিবহন খাতে বিপর্যয় নামতে পারে।
- রেলওয়ে (SNCF): আন্তঃনগর ও আঞ্চলিক ট্রেন চলাচল গুরুতরভাবে ব্যাহত হবে।
- মেট্রো ও বাস: প্যারিস ও আশপাশের এলাকায় মেট্রো ও বাস সার্ভিস সীমিত থাকবে।
- বিমান চলাচল: বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ আগেই যাত্রীদের ভ্রমণ পরিকল্পনা পরিবর্তনের পরামর্শ দিয়েছে।
- বিদ্যালয় ও সরকারি দপ্তর: শিক্ষক ও সরকারি কর্মচারীদের একটি বড় অংশ ধর্মঘটে অংশ নিতে পারে।
সরকারের অবস্থান
সরকার বলছে, ব্যয়সংকোচন জরুরি; নইলে ঋণের বোঝা আরও বাড়বে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে ফ্রান্সের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ইতোমধ্যে ক্রেডিট রেটিং সংস্থা ফ্রান্সের অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে সতর্কতা জারি করেছে। প্রধানমন্ত্রী লেকর্নু এক বিবৃতিতে বলেন, “অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়া ছাড়া বিকল্প নেই।”
ধর্মঘটের কারণে সাধারণ মানুষ ভোগান্তির শিকার হবেন, তা নিয়ে ইতোমধ্যেই উদ্বেগ বাড়ছে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে অফিসগামী কর্মীরা বিকল্প পরিবহন ব্যবস্থা খুঁজছেন। ব্যবসায়িক মহল আশঙ্কা করছে, লাগাতার ধর্মঘট বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ট করতে পারে।
ফ্রান্সে শ্রমিক আন্দোলনের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। তবে এবারের সাধারণ ধর্মঘটের বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে, কারণ এটি এক রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার প্রেক্ষাপটে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নতুন সরকার যেভাবে অর্থনৈতিক সংস্কার বাস্তবায়ন করতে চাইছে, তাতে সামাজিক সংঘাত আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
