মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ খ্রীষ্টাব্দ | ১ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

Sex Cams

প্যারিসে একাধিক মসজিদে শূকরের মাথা, ফ্রান্সজুড়ে নিন্দার ঝড়




শাহ সুহেল আহমদ:

প্যারিস ও এর আশপাশের ইলদ্যফ্রঁস অঞ্চলে অন্তত নয়টি মসজিদের সামনে শূকরের মাথা রেখে ভয়ঙ্কর ইসলামবিদ্বেষী হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে চারটি মসজিদ প্যারিস শহরের ভেতরে এবং পাঁচটি কাছাকাছি শহরতলিতে (মঁত্রেই, মঁত্রুজ, মালাকফ ও জ্যঁতিই) অবস্থিত। পুলিশ ধারণা করছে, এগুলো পূর্বপরিকল্পিত ও সমন্বিত হামলা।

প্যারিস পুলিশ কমিশনার লরাঁ নিউনেজ মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “এগুলো নিকৃষ্ট, আক্রমণাত্মক এবং প্রকাশ্য ঘৃণা উসকে দেওয়ার কাজ।” তিনি আরও জানান, ঘটনাগুলোকে “ধর্মীয় বিদ্বেষের কারণে ঘৃণা উসকে দেওয়া” অপরাধ হিসেবে তদন্ত করা হচ্ছে এবং বিষয়টি ব্রিগেড ক্রিমিনেলের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

“ম্যাক্রোঁ” লেখা শূকরের মাথা

পুলিশ জানিয়েছে, প্যারিসের ১৮তম অ্যারঁডিসমেন্টে একটি শূকরের মাথায় নীল রঙে ‘Macron’ লেখা ছিল। একই জায়গায় একটি স্যুটকেসে করে শূকরের মাথা ফেলা হয়েছিল। এসব দৃশ্য রাজনৈতিক প্ররোচনা এবং সাম্প্রদায়িক ঘৃণার ইঙ্গিত বহন করছে বলে মনে করা হচ্ছে।

সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

প্যারিসের গ্র্যান্ড মসজিদের রেক্টর শেমস-এদ্দিন হাফিজ এক বিবৃতিতে বলেছেন, “এটি ইসলামবিদ্বেষী ঘৃণার এক নতুন ও দুঃখজনক অধ্যায়। এসব কর্মকাণ্ডের লক্ষ্য জাতীয় ঐক্যকে বিভক্ত করা।” তিনি জাতীয় সংহতি ও সচেতনতার আহ্বান জানান।

প্যারিসের মেয়র আন্নে হিদালগো ঘটনাটিকে “বর্ণবাদী আক্রমণ” আখ্যা দিয়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রুনো রেতাইলে বলেছেন, “উপাসনালয়ে হামলা কখনো সহ্য করা হবে না। অপরাধীদের দ্রুত বিচারের মুখোমুখি করা হবে।”

বামপন্থী নেতা জ্যঁ-লুক মেলঁশো ও সমাজতান্ত্রিক নেতা অলিভিয়ে ফোরেও ইসলামবিদ্বেষ বৃদ্ধির কারণ হিসেবে সরকারের সাম্প্রতিক নীতি ও রাজনৈতিক বক্তব্যকে দায়ী করেছেন। অন্যদিকে ইল-দ্য-ফ্রঁস অঞ্চলের প্রেসিডেন্ট ভ্যালেরি পেক্রেস বলেন, “ফ্রান্সে উপাসনালয়গুলো নিরাপদ আশ্রয়স্থল হওয়া উচিত, এগুলোকে রক্ষা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।”

বাড়ছে ইসলামবিদ্বেষ

ফ্রান্সে ইসলামবিদ্বেষী ঘটনার সংখ্যা গত কয়েক বছরে ক্রমেই বেড়েছে। কেবল ২০২৫ সালের প্রথম পাঁচ মাসেই এ ধরনের ঘটনার সংখ্যা ৭৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর আগে ২০২৪ সালে পা-দ্য-কালে অঞ্চলে একটি মুসলিম সংগঠনের সামনে এবং ২০১৯ সালে দর্দোন এলাকায় মসজিদ নির্মাণস্থলে একইভাবে শূকরের মাথা রেখে অপমান করা হয়েছিল।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ফ্রান্সে মুসলিম জনসংখ্যা প্রায় ৫০ থেকে ৬০ লাখ, যা দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় সম্প্রদায়। সাম্প্রতিক এই হামলা কেবল মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য নয়, বরং সমগ্র ফরাসি সমাজের ঐক্য ও শান্তির জন্যও এক গুরুতর হুমকি।

সম্পাদক: শাহ সুহেল আহমদ
প্যারিস ফ্রান্স থেকে প্রচারিত

সার্চ/খুঁজুন: