স্টাফ রিপোর্টার,
পাকুন্দিয়ায় রহস্যজনকভাবে অপহৃত অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী নুর মোহাম্মদ আপেলকে (১৪) পুলিশ চট্টগ্রাম থেকে উদ্ধার করেছে। কিন্তু ওই ছাত্রকে অপহরণ করার অভিযোগে ৪ সহপাঠী শিক্ষার্থীর দিন কাটছে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে। সদর পাইলট আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র আপেল মিয়া (১৪) ১৫ই আগস্ট ভোরে নিখোঁজ হয়। এ ঘটনায় তার মা লাভলী আক্তার থানায় জিডি করেন। আপেলের সন্ধান জানতে পুলিশ ১৫/২০ জন সহপাঠীকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদের পর নাদিম, সম্রাট, নাছির ও কাঁকনকে অপহরণের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। নিখোঁজের ঘটনা, মামলার অভিযোগ, সংশ্লিষ্টদের ভাষ্যে গরমিল। পুলিশ প্রথমে নাদিম ও রাব্বিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এছাড়াও আরও ১৫-২০ জন সহপাঠীকে থানায় এনে জিজ্ঞাবাদের পর সম্রাট, নাছির ও কাঁকনকে আটক রেখে অন্যদের ছেড়ে দেয়। অপহরণ মামলার আগে ভগ্নিপতির কাছে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করে মর্মে সাংবাদিকদের তথ্য দেয়া হয়। সেই সূত্রে অনলাইন ও প্রিন্ট মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশ হয়। ১৬ই আগস্ট সময়ের কণ্ঠস্বর অনলাইনের খবর থেকে জানা যায়, ঘটনার রাতেই আপেলের ভগ্নিপতি মো. জাহাঙ্গীরের কাছে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছিল। ১৭ই আগস্ট অপহরণের মামলাটি হলেও মুক্তিপণ দাবির অভিযোগ করা হয়নি। মুঠোফোনে আপেলের ভগ্নিপতি জাহাঙ্গীর জানান, ঘটনার দিন রাতে ০১৭১৮৯০৪৩৭১ নাম্বার থেকে আপেলের সন্ধান পাই। পরদিন সকাল ৭টার দিকে আমার ০১৭৩৪৯২৬০৩৬ নাম্বার থেকে ওই নাম্বারে ফোন করলে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।
আপেলের মা লাভলী আক্তার বাদী হয়ে দায়ের করা অপহরণ মামলায় সহপাঠী নাদিমকে আসামি ও রাব্বিকে সাক্ষী করা হয়েছে।
একই মামলায় অপহরণে জড়িত সন্দেহে আসামি করা হয়েছে সহপাঠী সম্রাট, নাছির ও কাঁকনকে। মামলার আরজিতে বলা হয়েছে, নাদিম ভোর ৬টায় পাকুন্দিয়া সদরে ভিক্টোরিয়া কোচিং সেন্টারে প্রাইভেট পড়তে আসে। সাড়ে ৬টার দিকে সহপাঠী রাব্বির কাছে বই-খাতা দিয়ে আপেল বাড়ির কাছেই অনন্যা বাস কাউন্টারে অপেক্ষা করতে থাকে। সেই থেকে সে নিখোঁজ। আপেলের পরিবার মুক্তিপণের বিষয়টি গোপন রেখে আসামি করার ভয় দেখিয়ে আপেলের বন্ধু নাদিমের সঙ্গে সাক্ষাতের কথা বলে গেছে, মর্মে রাব্বির ভাষ্যে অপহরণ মামলার সূত্র তৈরি করা হয়। অতঃপর মুক্তিপণের বিষয়টি গোপন রেখে সহপাঠীদের বিরুদ্ধে অপহরণের মামলাটি রহস্যের সৃষ্টি করে। নিখোঁজ, অপহরণ মামলা, সহপাঠী, অভিভাবকদের গ্রেপ্তার আতঙ্ক প্রসঙ্গে ‘৮ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী নিখোঁজ সহপাঠীরা গ্রেপ্তার আতঙ্কে’ শিরোনামে ১৯শে আগস্ট মানবজমিন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয়। ওই সংবাদ প্রকাশের পর আর কোন শিক্ষার্থী হয়রানির শিকার না হলেও আতঙ্কে ছিল শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। আপেলের সন্ধানে সে আতঙ্ক কেটে গেলে আসন্ন জেএসসি ফাইনাল পরীক্ষায় ছেলে শিক্ষার্থীদের রেজাল্ট খারাপের আশঙ্কা করছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
শুক্রবার রাত ১০টার দিকে নিখোঁজ আপেলের সন্ধান মিলেছে এমন সংবাদে হৈচৈ পড়ে যায় চারদিকে। সংবাদ পেয়ে কারাবন্দি থাকা শিক্ষার্থীদের স্বজনরা পাকুন্দিয়া থানা প্রাঙ্গণে সমবেত হয়। ওই সূত্রে আহুতিয়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ ও পাকুন্দিয়া থানার এসআই সজল সরকারের নেতৃত্বে পুলিশ সদস্যরা শনিবার বিকালে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা দেয়। কয়েকটি মোবাইলের নির্দেশনা অনুযায়ী গতকাল ভোরে চট্টগ্রামের বটতলী রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন এলাকা থেকে আপেলকে অর্ধঅচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয় বলে জানান এসআই সজল সরকার। মামলাটি গোপনীয়তার স্বার্থে বিস্তারিত জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন এ পুলিশ কর্মকর্তা।