বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ২৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ডুবুরির মুখে উদ্ধার অভিযানের গল্প




থাইল্যান্ডের গুহায় আটকে থাকা ১২ কিশোর ফুটবলার ও তাদের কোচকে নিরাপদে উদ্ধার করা হয়েছে। তিন দিনের শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানের মধ্য দিয়ে মৃত্যুকূপ থেকে সবাইকে নিরাপদে উদ্ধার করেছেন উদ্ধারকারীরা। তিনটি দলে ভাগ করে ফুটবলার ও কোচ উদ্ধার অভিযানে ৯০ জনের একটি ডুবুরি দল কাজ করে। তাঁদের মধ্যে ৪০ জন থাইল্যান্ডের। অন্যরা বিদেশি।

উদ্ধারকারী দলের একজন ডেনিস ডাইভিং প্রশিক্ষক ইভান কারাদজিক। আটকে পড়া ফুটবল দলকে উদ্ধার অভিযানে ডুবুরিদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দুর্গম পাহাড়ের গুহায় অভিযানে অংশ নিয়েছে ইভান। রোববার, সোমবার ও মঙ্গলবার—এই তিন দিনে ১৩ জনকে থাম লুয়াং গুহা থেকে উদ্ধার করা হয়। আজ মঙ্গলবার তৃতীয় দিনে শ্বাসরুদ্ধকর উদ্ধার অভিযানের পর নিজের অভিজ্ঞতার কথা তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানান।

বিবিসি ও ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবরে বলা হয়েছে, ইভান কারাদজিক বলেছেন, আটকে পড়া কিশোরদের এমন একটি কাজ করতে বলা হয়েছিল, যা তারা কোনো দিন করেনি। ১১ বছর বয়সের যেকোনো কিশোরের জন্য গুহা থেকে ডুবসাঁতারে বের হয়ে আসা স্বাভাবিক ঘটনা নয়।

ইভান কারাদজিক বলেন, ‘শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আমরা গুহায় ঢুকি। ডুব দিয়ে শিশুদের আমরা বের করে এনেছি। এতে যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। গুহায় আটকে থাকা পানির নিচে কোনো কিছুই দৃশ্যমান নয়, সঙ্গে থাকা টর্চ লাইটের আলোই একমাত্র ভরসা ছিল। উদ্ধার অভিযানে অনেক সময় লেগে যাওয়ায় আমরা ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছিলাম। তাই সব ধরনের আতঙ্ক নিয়েই আমরা শঙ্কিত ছিলাম। উদ্ধার সরঞ্জামাদির যেকোনো সময় ত্রুটিপূর্ণ হওয়ারও আশঙ্কা ছিল। আর তাই ভয়ও ছিল।’

আটকে পড়া কিশোরেরা ছিল মানসিকভাবে শক্ত। তাদের মানসিকতার প্রশংসা করে ইভান জানান, এই শিশুরা শক্ত মনের অধিকারী। তারা অবিশ্বাস্যভাবে শক্ত। তারা শান্ত ও বুদ্ধিমান। তারা জীবিত আছে দেখে প্রশান্তি অনুভব করি।

ইভান ডেনমার্কের একটি ডাইভিং প্রশিক্ষণ কোম্পানির মালিক। খো তাও দ্বীপে তিনি আগ্রহী ব্যক্তিদের ডুবুরি হওয়ার প্রশিক্ষণ দেন। গত সপ্তাহ থেকে তিনি স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে থাইল্যান্ডের গুহার উদ্ধার অভিযানে অংশ নিয়েছেন।

পাথর রেজরের মতো ধারালো
কিশোর ফুটবলারদের উদ্ধার অভিযানে নেভি সিলের সদস্যদের কাছে অক্সিজেন পৌঁছে দেওয়ার কাজ করেছেন ডুবুরি নারংসুক কেয়াসুব। সিএনএনের সঙ্গে কথা বলেছেন নারংসুক কেয়াসুব। তিনি বলেন, কোনো কোনো জায়গার পাথর রেজরের মতো ধারালো। আর শেষকথা হলো, কিছু কিছু জায়গার পথ খুব সংকীর্ণ!’

নারংসুক কেয়াসুব বলেন, তিনি যতগুলো উদ্ধার অভিযানে অংশ নিয়েছেন, এর মধ্যে এটা ছিল সবচেয়ে কঠিনতম। তিনি বলেন, ‘আমরা কেবল আমাদের হাত আর অল্প একটু দূরের জায়গা দেখতে পেতাম। দ্বিতীয়ত, কোনো কোনো জায়গার পাথর রেজরের মতো ধারালো। আর শেষ কথা হলো, কিছু কিছু জায়গার পথ খুব সংকীর্ণ!’

থাইল্যান্ডের বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মী কেয়াসুব বলেন, ‘একজন বাবা হিসেবে এ ঘটনায় আমি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ি। সবাই এমনটাই অনুভব করেছেন যে গুহায় আটকে আছে আমাদের সন্তানেরাই। সবাই তাদের নিয়ে চিন্তিত। সবাই তাদের ভালোর জন্য প্রার্থনা করছেন।’

গত ২৩ জুন থাইল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলীয় চিয়াং রাই এলাকার থাম লুয়াং গুহায় বেড়াতে গিয়ে নিখোঁজ হয় ১২ খুদে ফুটবলার ও তাদের কোচ। ১২ কিশোরের বয়স ১১ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে। তাদের সহকারী কোচ এক্কাপোল জানথাওংয়ের বয়স ২৫ বছর। তারা ওয়াইল্ড বিয়ার্স বা মু পা নামের একটি ফুটবল দলের সদস্য। নয় দিন গুহার ভেতরে আটকে থাকার পর ২ জুলাই ব্রিটিশ ডুবুরি রিচার্ড স্ট্যানটন ও জন ভলানথেন তাদের সন্ধান পান। অবস্থান জানার পর ১২ কিশোর ও তাদের কোচের জন্য গুহার ভেতরে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ করার পাশাপাশি পাঠানো হয় খাবার ও চিকিৎসা সরঞ্জাম। তবে গত বৃহস্পতিবার রাতে কিশোরদের কাছে অক্সিজেনের সরঞ্জাম পৌঁছে দিয়ে ফেরার পথে প্রাণ হারান থাই নৌবাহিনীর সাবেক ডুবুরি সামান কুনান। ৭ জুলাই অস্ট্রেলিয়ার এক চিকিৎসক গুহায় ঢুকে কোচ ও কিশোরদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে উদ্ধার অভিযান শুরুর সবুজসংকেত দেন। তাদের অবস্থানস্থলে যাওয়ার জন্য ওই পাহাড়ে শতাধিক গর্ত করা হয়। তবে সেখানে কিশোরদের না পেয়ে আগের পরিকল্পনামতো ডুবসাঁতার দিয়ে তাদের উদ্ধারে চূড়ান্ত অভিযান শুরু হয় ৮ জুলাই। প্রথম দিন চারজন ও দ্বিতীয় দিন চারজন আর মঙ্গলবার চার কিশোরসহ তাদের কোচকে উদ্ধার করা হয়।

সম্পাদক: শাহ সুহেল আহমদ
প্যারিস ফ্রান্স থেকে প্রচারিত

সার্চ/খুঁজুন: