বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কর্মকর্তার ‘বৈশাখী ইলিশ আনতে’ লকডাউন ভেঙে স্পেশাল ট্রেন




রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার জন্য ‘পয়লা বৈশাখের ইলিশ’ আনতে একটি স্পেশাল ট্রেন চট্টগ্রাম থেকে চাঁদপুর গিয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রায় ২৫ কেজি ইলিশ মাছ আনতে ট্রেনে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ২৫ কর্মকর্তা-কর্মচারীও ছিল বলে জানা গেছে।

রেলওয়ের বাণিজ্যিক ও পরিবহন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, রেলমন্ত্রীর নির্দেশে ১৩ এপ্রিল বিভিন্ন স্টেশনে জরুরি ভিত্তিতে কিছু বেতন ও রেলের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেনশন ভাতা দিতে চট্টগ্রাম রেলস্টেশন একটি স্পেশাল ট্রেন ছেড়ে যায়।

ওই ট্রেনে থাকা একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী জানিয়েছেন, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় দেশে লকডাউন চলছে। এর মধ্যেও বেতন, পেনশনের টাকা দিতে গিয়েছি। তবে ডিআরএম (বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার) এর জন্য ইলিশ মাছ আনতে চাঁদপুর স্টেশনে পাঠানোটা সত্যিই কষ্টের।

ট্রেনে থাকা একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী জানান, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সহকারী বাণিজ্যিক কর্মকর্তাসহ জিআরপি, আরএনবিসহ মোট ২৫ রেল কর্মকর্তা-কর্মচারী ছিলেন স্পেশাল ট্রেনটিতে। সকালে ট্রেনটি চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে প্রথমে ফেনী স্টেশন মাস্টারকে টাকা দেয়। এরপর লাঙ্গলকোট হয়ে লাকসাম গিয়ে লাকসামের স্টেশন মাস্টারকে টাকা দেওয়া হয়।

জানা গেছে, এ সময় লাকসামের স্টেশন মাস্টার ট্রেন আবার আবার উল্টো পথে চাঁদপুর না গিয়ে চাঁদপুরের স্টেশন মাস্টারের টাকাগুলো তাকে দিয়ে যেতে বলেন। তিনি পরদিন এ টাকা চাঁদপুরের স্টেশন মাস্টারের কাছে পৌঁছে দেবেন বলে জানান। এ সময় চাঁদপুরের স্টেশন মাস্টারের সঙ্গে ফোনে কথা বলে সমন্বয় করে নেন তিনি। তখন ট্রেনে থাকা সহকারী বাণিজ্যিক কর্মকর্তা ওমর ফারুক রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা আনসার আলীর অনুমতি নিয়ে চাঁদপুরের টাকা লাকসামের স্টেশন মাস্টারকে বুঝিয়ে দিয়ে লাকসাম থেকে কুমিল্লা হয়ে চৌমুহনী-নোয়াখালীর স্টেশন মাস্টারকে টাকা বুঝিয়ে দিয়ে ফের চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দেন।

রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, এসব শেষ করে ট্রেনটি সন্ধ্যা ৭টায় লাকসাম আসলে ডিআরএম সাদেকুর রহমান ট্রেনটি যে কোনোভাবে চাঁদপুর যাওয়ার নির্দেশ দেন। তখন ট্রেনে থাকা প্রায় সবাই বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ দেখান। চাঁদপুরের বিষয়টি সমন্বয় করার পরও চাঁদপুর যেতে বাধ্য হওয়ায় তারা ক্ষোভ জানান। তবে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশ মেনে ট্রেনটি চাঁদপুর নিয়ে যান চালক বখতিয়ার। পথিমধ্যে লাকসাম স্টেশন থেকে চাঁদপুরের টাকাও নেয়া হয়। ট্রেন চাঁদপুরে পৌঁছে সেখানকার স্টেশনে গিয়ে স্টেশন মাস্টারকে টাকাগুলো বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এরপর ট্রেনটি দাঁড়িয়ে থাকে।

তারা আরো জানান, এ সময় চাঁদপুর স্টেশনের টিটিই মহিউদ্দীন এসে বলেন ট্রেন এখন যাবে না। এই ট্রেনে করে ডিআরএম স্যারের ইলিশ মাছ যাবে। গাড়ি কিছুক্ষণ থামান। এরপর বৈশাখী ইলিশ মাছ তোলার জন্য চাঁদপুর স্টেশনে প্রায় ৪০ মিনিট গাড়ি অপেক্ষায় থাকে।

ওই কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অভিযোগে জানান, পয়লা বৈশাখে ডিআরএমকে ইলিশ উপহার দিতে চাঁদপুর স্টেশনের টিটিই মো. মহিউদ্দিন বারবার ফোন দিচ্ছিলেন। এরপর টিটিই মহিউদ্দিন ২৫ কেজির মতো ইলিশ মাছ ইঞ্জিন রুমে তুলে দিলে চাঁদপুর স্টেশন থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে ট্রেনটি। তখন রাত সাড়ে ৯টা। পরবর্তীতে পুনরায় লাকসাম হয়ে ট্রেনটি রাত ১২টার দিকে চট্টগ্রাম পৌঁছায়।

শুধু ইলিশ মাছ আনতে সরকারি তেল অপচয় করে ২৫ কর্মকর্তা-কর্মচারীর হয়রানি ও সময় অপচয় করায় ট্রেনে থাকা প্রায় সবাই ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

নাম প্রকাশ করা শর্তে জিআরপি  ও আরএনবির দুই কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘করোনাভাইরাস সংক্রমণ মোকবিলায় প্রায় সারা দেশে লকডাউন চলছে। কুমিল্লা, লাকসাম, চাঁদপুরও লকডাউন চলছে। এর মধ্যে সরকারি নির্দেশনায় ডিউটি করতে গেছি। কিন্তু সেখানে সামান্য কিছুর জন্য ২৫ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অপ্রয়োজনে চাঁদপুর যেতে হয়েছে। যেটা সত্যিই দুঃখজনক। আমাদেরও পরিবার-পরিজন আছে। আমাদের ইচ্ছে আছে। এ ঘটনা সত্যি আমাদের ব্যথিত করেছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক’।

এ প্রসঙ্গে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা আনসার আলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেতন ও পেনশনের টাকা দিতে স্পেশাল ট্রেনটি চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে ছাড়া হয়েছিল। এ ট্রেনে করে ইলিশ মাছ আনার বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে ফোনে ডিআরএম স্যার আমাকে ট্রেন অবশ্যই যাতে চাঁদপুর যায়, সে বিষয়ে বলেছিলেন’।

এ সব বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার (ডিআরএম) সাদেকুর  রহমানকে ফোন করলে তিনি ব্যস্ততা দেখিয়ে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।

 

সম্পাদক: শাহ সুহেল আহমদ
প্যারিস ফ্রান্স থেকে প্রচারিত

সার্চ/খুঁজুন: