করোনাভাইরাসের মহামারীর কারণে টানা ৬৬ দিনের সাধারণ ছুটি শেষে অফিস খোলার পর সবাইকে বাধ্যতামূলক মাস্ক পরে অফিস করার নির্দেশ দিয়েছে সরকার।
বৃহস্পতিবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এ নির্দেশনা দেয়া হয়।
৩১ মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত সীমিত পরিসরে অফিস খোলা রাখার আদেশ জারি করে একই সঙ্গে তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ থেকে জারি করা ১৩ দফা নির্দেশনাও কঠোরভাবে অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।
আদেশে বলা হয়েছে, “করোনাভাইরাসজনিত রোগ কোভিড-১৯ এর বিস্তার রোধ এবং পরিস্থিতির উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার আগামী ৩১ মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত শর্তসাপেক্ষে দেশের সার্বিক কার্যাবলি এবং জনসাধারণের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ বা সীমিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ৫, ৬, ১২ ও ১৩ জুনের সাপ্তাহিক ছুটি এ নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত থাকবে।”
এই নিষেধাজ্ঞা চলাচালে সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত অফিস নিজ ব্যবস্থাপনায় সীমিত পরিসরে খোলা থাকবে। ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তি, অসুস্থ কর্মচারী এবং অন্তঃস্বত্ত্বা নারীদের কর্মস্থলে উপস্থিত হওয়া থেকে বিরত থাকার কথা উল্লেখ করা হয় ওই আদেশে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আদেশে জানানো হয়েছে, আগামী ৩১ মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মস্থল ত্যাগ করতে পারবেন না।
এদিকে করোনাভাইরাসের কারণে দুই মাস ধরে চলা লকডাউন আর না বাড়িয়ে আগামী ৩১ মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত সীমিত পরিসরে অফিস চালুর পাশাপাশি নির্দিষ্ট সংখ্যক যাত্রী নিয়ে বাস, ট্রেন ও লঞ্চ চলাচলের অনুমতি দিয়েছে সরকার।
এই সময়ে গণপরিবহণগুলো কীভাবে চলবে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ নির্দেশনা জারি করবে বলে বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক আদেশে জানানো হয়েছে।
সেখানে বলা হয়, “উক্ত সময়ে সীমিত পরিসরে নির্দিষ্ট সংখ্যক যাত্রী নিয়ে স্বাস্থ্যসম্মত বিধি নিশ্চিত করে গণপরিবহণ, যাত্রীবাহী নৌযান ও রেল চলাচল করতে পারে।
“তবে সব অবস্থায় মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের জারি করা নির্দেশনা কঠোরভাবে মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে।”
কেউ মাস্ক ছাড়া বাইরে বের হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ার করছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
“সর্বাবস্থায় বাইরে চলাচলের সময় মাস্ক পরিধানসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। অন্যথায় নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।”
স্বাস্থ্য সুরক্ষার ১৩ নির্দেশনা
>> দপ্তরের বাইরে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ‘জীবাণুমুক্তকরণ টানেল’ স্থাপনের ব্যবস্থা নিতে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেওয়া যেতে পারে।
>> অফিস চালু করার আগে অবশ্যই প্রতিটি অফিস কক্ষ, আঙ্গিনা, রাস্তাঘাট জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
>> প্রত্যেক মন্ত্রণালয়/ বিভাগের প্রবেশ পথে থার্মাল স্ক্যানার, থার্মোমিটার দিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করে অফিসে প্রবেশ করাতে হবে।
>> অফিস পরিবহনগুলো অবশ্যই জীবাণুনাশক দিয়ে ‘শতভাগ জীবাণুমুক্ত’ করতে হবে। যানবাহনে বসার সময় ন্যূনতম তিন ফুট শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে এবং সবাইকে মাস্ক (সার্জিক্যাল মাস্ক অথবা তিন স্তর বিশিষ্ট কাপড়ের মাস্ক, যা নাক ও মুখ ভালোভাবে ঢেকে রাখবে) ব্যবহার করতে হবে।
>> সার্জিক্যাল মাস্ক শুধু একবার ব্যবহার করা যাবে। কাপড়ের মাস্ক সাবান দিয়ে পরিষ্কার করে আবার ব্যবহার করা যাবে।
>> যাত্রার আগে এবং যাত্রাকালে পথে বার বার হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করতে হবে।
>> খাওয়ার সময় শারীরিক দূরত্ব (ন্যূনতম তিন ফুট) বজায় রাখতে হবে।
>> প্রতিবার টয়লেট ব্যবহারের পরে সাবান দিয়ে জীবাণুমুক্তকরণ নিশ্চিত করতে হবে।
>> অফিসে কাজ করার সময় শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
>> কর্মস্থলে সবাইকে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে এবং ঘন ঘন সাবান পানি বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করতে হবে।
>> কর্মকর্তা/কর্মচারীদের করোনাভাইরাস প্রতিরোধের সাধারণ নির্দেশনাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি নিয়মিত মনে করে দিতে হবে এবং তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন কিনা তা পর্যবেক্ষণ করতে হবে। ভিজিলেন্স টিমের মাধ্যমে মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
>> দৃশ্যমান একাধিক স্থানে ছবিসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষার নির্দেশনা ঝুলিয়ে রাখতে হবে।
>> কোনো কর্মচারী অসুস্থ হলে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে আইসোলেশন বা কোয়ারেন্টাইনে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।