লকডাউন চলাকালে বিয়ে করে জরিমানা গুণতে হয়েছিল ঢাকায় কর্মরত চট্টগ্রামের বোয়ালখালির একজন ব্যাংক কর্মকর্তাকে। বিয়ে হয়ে গেলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী নবদম্পতিকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। ভিন্ন চিত্রও আছে। আংটি বদল হলেও বিয়ে সম্পন্ন না হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন অনেক ভাবি দম্পতি।
সুমন আহমেদ থাকেন ঢাকার খিলগাঁওয়ে। বাবা ইব্রাহিম খলিল সৌদি প্রবাসী। দীর্ঘদিন ধরে থাকছেন সেখানে। প্রায় প্রতিদিনই পরিবারের সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়। পরিবারে তিন ছেলে ও এক মেয়ে। বড় মেয়ের বিয়ে হয়েছে ছয় বছর। ছোট দুই মেয়েও স্বামী নিয়ে পাশের এলাকা গোড়ানে বাস করছেন। তিন ভাইয়ের মধ্যে সুমন সবার বড়।
বছরের শুরু থেকেই পারিবারিকভাবে বিয়ের তোড়জোর চলছিল সুমনের। মার্চের প্রথমদিকে তারা ডেমরা এলাকার ইটখোলার মেয়ে নাদিয়াকে দেখে পছন্দ করেন। কনের বাবাও প্রবাসী। থাকেন ওমানে। অবশেষে দুই পরিবারের আলোচনায় আপাতত আংটি বদলের সিদ্ধান্ত হয়।
বর এবং কনের বাবা রোজার আগে দেশে ফিরে এলে তখন অথবা ঈদের পর ধুমধাম করে নতুন বউ তুলে আনা হবে, এমনটাই সিদ্ধান্ত ছিল তাদের।
আংটি বদল অনুষ্ঠানের আয়োজন শুরুর সময় দেশে জেঁকে বসতে শুরু করেছে কোভিড-১৯ আতঙ্ক। পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে সেই দুশ্চিন্তা পেয়ে বসলো দুই পরিবারের সবাইকে।
অন্যদিকে সৌদি আরব ও ওমানেও ভীষণ কড়াকড়ি শুরু হয়েছে ততদিনে। সব রকম ফ্লাইট দেশে আসা বন্ধ। দুই পরিবারের সবাই মিলে সিদ্ধান্ত হলো, মার্চের কোনো এক সময় সীমিত পরিসরে, স্বল্প আয়োজনে আংটি বদল করা হবে। ১৭ মার্চ মাত্র কয়েকজন মিলে আয়োজন হলো আংটি বদলের।
বর ও কনের পূর্ব পরিচয়কে পরিণতি দিতে পারিবারিকভাবে বিয়ের দিন ঠিক হয়েছিল উত্তর বাসাবোর রিতা ও রাজারবাগ কালীবাড়ি এলাকার বাসিন্দা রিয়েলের। ২৫ মার্চ গায়ে হলুদ ও ২৬ মার্চ বিয়ে।
দেশে কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে মার্চের ওই সময় থেকেই দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়।
নাবিলা পারভীন রিতা বলেন, আংটি বদল হয়েছে গত ২১ ফেব্রুয়ারি। গত বছর বিয়ের কথা চলার সময় তার মা মারা যান।
“এতে করে বিয়ে পিছিয়ে যায়। পরে দুই পরিবার আবার বসে বিয়ের দিন-তারিখ ঠিক করেন। বিয়েকে সামনে রেখে গত জানুয়ারিতে বুকিং নেওয়া হয় বাসাবো সিটি করপোরেশন কমিউনিটি সেন্টার।”
শুধু কমিউনিটি সেন্টারই নয়, বিয়ের নিমন্ত্রণপত্র ছাপা হয়ে গেছে, অগ্রিম টাকা দেওয়া হয়েছে বিউটি পার্লার, ফটোগ্রাফার, ডিজে সংশ্লিষ্টদেরও।
দেশে লকডাউনের বিশেষ পরিস্থিতি শুরুর আগেই রিতা ও রিয়েলের বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন করার প্রস্তুতি চলছিল জোরেশোরে।
“বিয়ে উপলক্ষে তার হবু শাশুড়ি মা যুক্তরাষ্ট্র থেকে গত জানুয়ারিতে বাংলাদেশে আসেন। আগস্টের প্রথম সপ্তাহে তার যুক্তরাষ্ট্র ফিরে যাওয়ার কথা। সবকিছু কেমন যেন ওলট-পালট হয়ে গেল”, বলেন রিতা।
ছোট পরিসরে একেবারে ঘরোয়া পরিবেশে বিয়ের কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু দুই পক্ষই সরকারি নিষেধাজ্ঞা এবং স্বাস্থ্যবিধির কথা চিন্তা করে পিছিয়ে যায়।
রিতার ঘরে এখনো গায়ে হলুদ ও বিয়ের জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখা হয়েছে। অপেক্ষা লকডাউন উঠে যাওয়ার।