এই যুগে মোবাইল ব্যবহার করেন না এমন মানুষ যেমন পাওয়া যাবে না ঠিক তেমনি অ্যান্ড্রয়েড নামটির সাথে পরিচিত নয় এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। ৭৪.৬৩ শতাংশ মার্কেট শেয়ার নিয়ে অ্যান্ড্রয়েড খুব ভালো গতিতেই এগিয়ে যাচ্ছে জনপ্রিয়তার চরম শেকড়ে। যদি লক্ষ্য করা যায় সারা বিশ্বে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের মধ্যে অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারী সংখ্যা ৮৫.৪০ শতাংশ।
এই থেকেই বোঝা যাচ্ছে অ্যান্ড্রয়েড ফোনগুলো ব্যবহারকারীদের মাঝে কতটা জনপ্রিয়। আর জনপ্রিয় হবে নাই বা কেন যেখানে গুগোল প্লে-স্টোরে অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারকারীদের সুবিধার্থে ও বিনোদনের জন্য রয়েছে ৩ মিলিয়নেরও বেশি অ্যাপ্লিকেশন, যা ব্যবহারকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। বাংলাদেশের হিসাবে অ্যান্ড্রয়েড ফোনের জনপ্রিয়তা বয়স ভেদে ১০ থেকে ৮০ সবার কাছেই পরিচিত ও চাহিদার শীর্ষে।
যে অপারেটিং সিস্টেমের এত চাহিদা তার দিকে হ্যাকারদের নজর থাকবে না এটাও ভাবা যায় না। আমাদের ইন্টারনেট জগতে বিভিন্ন জায়গায় হ্যাকাররা তাদের হ্যাকিংয়ের বিভিন্ন রকমের লোভনীয় ফাঁদ পেতে রেখেছে। যার থেকে আমরা কেউই নিরাপদ নই। ইন্টারনেটের বেশিরভাগ স্থানেই হ্যাকারদের ফাঁদ পাতা আছে। আর আমরা যারা সাধারণ মানুষ আমরা না বুঝে এসব ফাঁদে পা দিয়ে নিজেদের বিপদ ডেকে নিয়ে আসি।
হ্যাকাররা প্রথমেই টার্গেট করে মানুষকে তাদের ফাঁদে, তারপর তারা বিভিন্নভাবে মানুষের বিভিন্ন রকমের ক্ষতি করে। যেমন- ব্লাকমেইল করে থাকে, টাকা চাওয়া, থ্রেড দেয়া, সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট হ্যাক করা, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও বিভিন্ন প্রয়োজনীয় ইনফরমেশন হাতিয়ে নেয়া ইত্যাদি অপকর্ম করে থাকে হ্যাকাররা। এগুলো থেকে বাঁচতে হলে প্রথমেই আমাদের জানতে হবে কিভাবে সতর্ক থাকা যায় অনলাইন জগতে।
অনলাইনে সতর্ক থাকার বিষয়ে ক্রাইম রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস ফাউন্ডেশনের (ক্র্যাফ) সভাপতি জেনিফার আলম বলেন, এখন সব বয়সের মানুষের কাছেই একটি স্মার্টফোন থাকে আর তাদের মধ্যে অ্যান্ড্রয়েড ইউজাররাই বেশি। কিন্তু ইউজারদের মধ্যে অনেকেই সতর্কতা অবলম্বন করেন না, সচেতনও না। হ্যাকিং থেকে বাঁচতে প্রথমেই আমাদের সচেতন হতে হবে। আমরা থার্ড পার্টি অ্যাপস কখনই ইউজ করবো না। আর যেসব অ্যাপস ইউজ করবো সেগুলোর পারমিশনগুলো দেয়ার সময় একটু পড়ে তারপর পারমিশনগুলো দিবো। হুট হাট করে পারমিশন দিলে ডেটা লিক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে অনেক বেশি।
তিনি বলেন, বর্তমানে হ্যাকাররা একটি লিংক দিয়ে বলছে এখানে আপনার খারাপ ছবি আছে, এখানে আপনার ফ্যামিলির ছবি আছে। এছাড়া এখন এমনও বলছে, এখানে রেজিস্ট্রেশন করলে বিকাশ থেকে টাকা পাওয়া যাবে ইত্যাদি। এসব লিংকে কখনই ক্লিক করবেন না। এসব ফিশিং লিংক। আপনার মোবাইল থেকে শুরু করে সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট সব কিছুই হ্যাকারদের কন্ট্রোলে চলে যেতে পারে এসব লিংকে ক্লিক করা মাত্রই।
এখন মোবাইল ফোন আমাদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মোবাইল ছাড়া এক মুহূর্ত ভাবতে পারি না। ছবি তোলা, গান শোনা ছাড়াও অনলাইন কেনাকাটা থেকে শুরু করে আজ প্রায় অনেক কাজই আমরা মোবাইলের মাধ্যমেই করছি। একটি বার ভাবুন, যদি কখনও আপনার মোবাইলটি হ্যাক করে নেয় কোন হ্যাকার তাহলে কী হবে?
আসুন জেনে নেই আপনার মোবাইলটি হ্যাক হলে কী হবে। প্রথমত হ্যাক হওয়া মোবাইলের অ্যাকাউন্টের ডিটেইলস ও পাসওয়ার্ড পেয়ে যাবে হ্যাকার। মোবাইলের সব ডিটেইলস চলে যাবে হ্যাকারের কাছে। এতে করে আপনার মোবাইলটি রিমোটলি পরিচালনা করতে সুবিধা হবে হ্যাকারের। আপনি মোবাইলে যা টাইপ করবেন সব কিছুর কপি হ্যাকারের কাছে যেতে থাকবে। আপনার মোবাইলের ও ম্যামরি কার্ডে যা স্টোর করা থাকবে সব পেয়ে যাবে হ্যাকার। হ্যাকার চাইলে আপনার মোবাইলের সামনের ও পিছনের ক্যামেরা অন করে আপনাকে লাইভ দেখতে পারবে ও মাইক্রোফোন অন করে আপনি কি বলছেন শুনতে পারবে। ট্র্যাকিং করে আপনি কোথায় আছেন ও কোথায় যাচ্ছেন সব লাইভ দেখতে পারবে। তাহলে একবার ভাবুন কতটা ভয়ংকর হতে পারে আপনার মোবাইলটি যদি হ্যাক হয়। হ্যাকিং থেকে কিভাবে বাঁচা যায় এগুলো আমাদের জানতে হবে।
অনলাইন নিরাপত্তার ব্যাপারে কারিগরি সহায়তাদানকারী প্রতিষ্ঠান ক্র্যাফের আইটি অ্যানালিস্ট রাইয়ান মালিক বলেন, বর্তমানে হ্যাকার থেকে শুরু করে স্ক্রিপ্টক্রিডি সবার টার্গেট থাকে অ্যান্ড্রয়েড ফোন ব্যবহারকারীদের ওপর। কারণ অ্যান্ড্রয়েড ওপেন সোর্স হওয়ার কারণে এর সব কিছুই ওপেন সোর্স। সুতরাং চাইলে একটু কৌশলের মাধ্যমেই অ্যাটাক করা সম্ভব। অ্যান্ড্রয়েড ফোনে এমন কোন অ্যাপ ইন্সটল করা যাবে না যা বাস্তবে কোন কাজের না।
যেমন ভার্চুয়াল হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মশা মারার অ্যাপ ও ইত্যাদি এমন অনেক কিছু রয়েছে। অবশ্যই গুগোল প্লে-স্টোরের বাইরে থেকে কোন অ্যাপ ইন্সটল করা যাবে না। অ্যাডভান্স ইউজার জানা ছাড়া অ্যান্ড্রয়েড ফোন রুট করা যাবে না। অ্যাপ পারমিশন দেয়ার আগে অবশ্যই একবার পড়ে নিবেন। অনাকাঙ্ক্ষিত কোন অ্যাপ ইন্সটল করার জন্য কখনই প্লে-প্রোটেকশন অফ করবেন না ও নিরাপত্তার জন্য ভালো মানের অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করা যেতে পারে। ইন্টারনেটের বেশিরভাগ স্থানেই হ্যাকারদের ফাঁদ পাতা আছে। সুতরাং সচেতনতা ও সতর্কতাই হ্যাকারদের থেকে বাঁচার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার।
মোবাইল ফোন সিকিউর রাখার ১৫টি উপায়-
১। কারো দেয়া কোন লিংকে ক্লিক করা যাবে না।
২। অ্যাপ ইন্সটলেশনের ক্ষেত্রে অবশ্যই গুগোল প্লে-স্টোর থেকে অ্যাপ ডাউনলোড ও ইন্সটল করতে হবে।
৩। তৃতীয় পক্ষের দেয়া বা থার্ডপার্টি কোন ওয়েবসাইট থেকে অ্যাপ ডাউনলোড ও ইন্সটল করা যাবে না।
৪। গুগোল প্লে-প্রোটেকশন সবসময় অন রাখতে হবে।
৫। অ্যাপ ইন্সটলের আগে অ্যাপ পারমিশনগুলো চেক করতে হবে।
৬। অ্যাপলিকেশনের সাথে যায় না বা দরকার নেই এমন কোন পারমিশন দেয়া যাবে না।
৭। ভালো মানের একটি অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করতে হবে।
৮। খুব প্রয়োজন ছাড়া পাবলিক ওয়াইফাই ইউজ করা যাবে না। আর খুব প্রয়োজনে ব্যবহার করতে হলে ভিপিএন কানেক্ট করে ব্যবহার করুন।
৯। অ্যাডভান্স ইউজার ছাড়া জাস্ট কোন পারটিকুলার অ্যাপ ইন্সটল করার জন্য ফোন রুট করা যাবে না।
১০। অন্য কারো হাতে নিজের ফোন না দেয়াই ভালো।
১১। লোভনীয় কোন অ্যাড বা লিংকে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকুন।
১২। লোভনীয় অ্যাপ ইন্সটল করা থেকে বিরত থাকুন।
১৩। অফিশিয়াল ও ট্রাস্টেড সাইট ছাড়া কোথাও থেকে কিছু ডাউনলোড করা থেকে বিরত থাকুন।
১৪। অ্যান্ড্রয়েড ফোনে গুগোল অ্যাকাউন্ট যুক্ত ও সিনক্রোনাইজেশন অন রাখুন, যাতে করে ডেটা হারালে ফেরত পাওয়া যায়।
১৫। সর্বোপরি সতর্কতা ও সচেতন থাকতে হবে।
যে কোন সাইবার ক্রাইম, অনলাইন প্রতারণা ও হ্যারেজমেন্টের শিকার হলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে জানান ও জরুরী প্রয়োজনে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নাম্বারে ফ্রি কল করুন।