শাবুল আহমেদ, প্যারিস (ফ্রান্স):
সিএনডিএ কর্তৃক ফ্রান্সে বাংলাদেশি আশ্রয় প্রার্থীদের আবেদনের ‘অটো রিজেক্ট’ ঠেকাতে উদ্যোগ নিয়েছেন ফ্রান্স-বাংলাদেশ পার্লামেন্ট ফ্রেন্ডশিপ গ্রুপের সভাপতি ফরাসি সাংসদ দানিয়েল অবনো। এরই অংশ হিসেবে গত ১৯ মে ফরাসি জাতীয় আশ্রয় আদালত (সিএনডিএ)’র প্রেসিডেন্ট বরাবর চিঠি পাঠিয়েছেন তিনি।
চিঠিতে তিনি বলেন- একজন আশ্রয়প্রার্থী অফরা থেকে রিজেক্ট হওয়া্র পর তাকে পুনরায় উচ্চ আদালতে শোনানীর সুযোগ না দেয়া মানে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করার শামিল। তিনি ২০১৬ সালের ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের একটি আর্টিকেল উল্লেখ করে চিঠিতে বলেন- বাংলাদেশীসহ অন্যান্য সকল আশ্রয় প্রার্থী যাতে অফরার পর সিএনডিএ-তে (কমিশনে) পুনরায় তার পটভূমি ব্যাখ্যা করতে পারে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
সাংসদ দানিয়ে অবনি বলেন- ইউরোপীয়ান মানবাধিকার আদালত বিবেচনা করে যে, অফরার সাক্ষাৎকার থেকে ও সিএনডিএ এর সিদ্ধান্ত পর্যন্ত সকল প্রক্রিয়া সঠিক মাপকাঠি দ্বারা পরিমাপ করা আবশ্যক।
দীর্ঘ এই চিঠিতে বাংলাদেশী আশ্রয়প্রার্থীদের ছাড়াও ফ্রান্সে আগত বিশ্বের সকল আশ্রয় প্রার্থী যাতে অফরার পর জাতীয় আদালত সিএনডিএ-তেও তার দেশ ত্যাগের বর্ণনা দিতে পারে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
ফ্রান্সে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের আশ্রয় প্রার্থীদের প্রাথমিক পর্যায় ফরাসি আদালত অফ্রাতে আবেদন করতে হয়। এই নিয়ম ও আইন মোতাবেক প্রতিবছর বাংলাদেশি বিপুল সংখ্যক আশ্রয় প্রার্থী অফ্রাতে আবেদন করে থাকলেও বেশিরভাগ আবেদনকারী সেখান থেকে রিজেক্ট হয়ে যান। পরবর্তী ফরাসি জাতীয় আশ্রয় আদালত সিএনডিএ-তে আপীল করার সুযোগ থাকে এবং সেখানে সবাই আপীল করে থাকেন।
দ্বিতীয় ধাপ তথা আপীল আবেদন করার পর সাধারণত আবেদনকারীদের সেখানে সাক্ষাৎকার গ্রহন করা হয়ে থাকে। সাম্প্রতিক সময় সিএনডিএ-তে অনেক আবেদনকারীকে সাক্ষাতকারে না ডেকে তাদেরকে ‘অটো রিজেক্ট’ করে দেওয়া হয়। আপীল শুনানি না করে আবেদন খারিজ হওয়ার ফলে একজন আশ্রয় প্রার্থীর আর কোনো সুযোগ থাকে না। ফলে অনেক স্বপ্ন নিয়ে আসা অভিবাসীরা বছরের পর বছর কাগজহীন হয়ে পড়ে থাকেন।
এই নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশিদের মাঝে আতংক বিরাজ করছে। বিশেষ করে ২০২১ ও ২০২২ সালে এই ‘অটো রিজেক্ট’ মাত্রাতিরিক্ত হারে বেড়ে গেছে। ফলে দ্রুত অনিয়মিত হয়ে পড়ছেন হাজার হাজার বাংলাদেশি। তথ্যমতে- শুধুমাত্র ২০২১ সালে সিএনডিএ থেকে অটো রিজেক্টের শিকার হয়েছেন প্রায় ১৬ শতাধিক বাংলাদেশি আশ্রয় প্রার্থী।
এই ‘অটো রিজেক্ট’ ঠিকাতে ফরাসি আইনজীবীরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে যাচ্ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশি আশ্রয় প্রার্থীদের ‘অটো রিজেক্ট’ বন্ধ করতে উদ্যোগ নিয়ে ফরাসি সরকার কর্তৃক নিবন্ধনকৃত এসোসিয়েশন ‘সলিডারিতে অ্যাসি ফ্রঁস’ (সাফ)। বিভিন্ন দেশের অনিয়মিতদের কাগজের দাবিতে আন্দোলনকৃত প্রায় ২০০টি সংস্থার সঙ্গে একত্রিত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে যাচ্ছে এই অ্যাসোসিয়েশন।
বাংলাদেশি আশ্রয় প্রার্থীদের অটো রিজেক্ট বন্ধের উদ্যোগ প্রসঙ্গে এ প্রতিবদেকের সাথে আলাপকালে সাফ’র প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট নয়ন এনকে বলেন, ‘সাফ’র উদ্যোগে বাংলাদেশি আশ্রয় প্রার্থীদের অটো রিজেক্টসহ প্রবাসীদের নানাবিধ সমস্যা নিরসনের দাবি জানিয়ে গত ১৩ জানুয়ারি বামধারার রাজনৈতিক সংগঠন ‘লা ফ্রন্সঁ আনসুমিজ’ দলের অন্যতম নেতা ও ফরাসি এমপি দানিয়েল অবোনো-এর সঙ্গে জাতীয় সংসদে অফিস কক্ষে তার সঙ্গে দেখা করি এবং লিখিত একটি আবেদন তাকে প্রদান করি।
এ সময় বাংলাদেশি আশ্রয় প্রার্থীদের প্রতি সিএনডিএ’র বৈষম্যমূলক আচরণের কথা বিশদভাবে তুলে ধরি। আবেদন পত্রের আলোকে তিনি মনোযোগ সহকারে আমাদের কথা শুনেন এবং এই পরিস্থিতিতি থেকে উত্তরণের জন্য তিনি আমাদের সাথে সংহতি প্রকাশ করেন।’
নয়ন এনক বলেন, ‘পরবর্তীতে বাংলাদেশি আশ্রয় প্রার্থীদের যারা অটো রিজেক্টের শিকার হয়েছেন তাদের অনেকের কাছে আবেদন করি যেন তাদের ডকুমেন্টসগুলো আমাদের কাছে পাঠায়। পরে তাদের পাঠানো পরে তাদের পাঠানো ডকুমেন্টসগুলো সামআপ করে এমপি দানিয়েল অবনো’র কাছে পাঠাই।
যার প্রেক্ষিতে সবকিছু পর্যায়লোচনাপূর্বক সমস্যগুলো উল্লেখ করে গত ১৯ মে ২০২২ সিএনডিএ-এর প্রেসিডেন্ট বরাবর চিঠি লিখেন এমপি দানিয়েল অবনো। চিঠিতে একই সঙ্গে দোভাষী সমস্যাসহ বেশ কিছু বিষয়ের আলোকে প্রশ্নের উত্তর জানতে চান এই সাংসদ।’
ইতিবাচক সাড়া পাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করে নয়ন এনকে বলেন, ‘আমাদের বসে থাকলে চলবে না। অটো রিজেক্ট ঠেকাতে উপরোক্ত পদক্ষেপের পাশাপাশি আমাদের সবাইকে একত্রিত হয়ে আরো বেশ কিছু কর্মসূচি নিতে হবে।’