বৃহস্পতিবার, ২ অক্টোবর ২০২৫ খ্রীষ্টাব্দ | ১৭ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

Sex Cams

জাপানিদের দীর্ঘ জীবন পাওয়ার পেছনে যে ৬ রহস্য




ডেস্ক রিপোর্ট :

জাপান শত বছর বা তার বেশি বয়সী নাগরিকের সংখ্যায় রেকর্ড গড়েছে। সম্প্রতি দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে শতবর্ষী মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৯ হাজার ৭৬৩ জনে। এর মধ্যে নারীদের সংখ্যা ৮৮ শতাংশ। এটি প্রমাণ করে, জাপানি নারীরা সাধারণত পুরুষদের তুলনায় বেশি দিন বাঁচেন। জাপানের মানুষ যে দীর্ঘ জীবন যাপন করেন, সে খবর প্রায় সবার জানা। বিশ্বে বেশি বয়সী মানুষদের অনেকে দেশটিতে থাকেন।

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়ছে, দেশটির সবচেয়ে বয়সী মানুষ একজন নারী। শিগেকো কাগাওয়া নামের এই নারীর বয়স ১১৪ বছর। তিনি নারা শহরের উপশহর ইয়ামাটোকরিয়ামায় থাকেন। অন্যদিকে সবচেয়ে বয়সী পুরুষ হলেন কিয়োতাকা মিজুনো। ১১১ বছর বয়সী এই ব্যক্তি বাস করেন উপকূলীয় শহর ইওয়াটায়। জাপানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী তাকামারো ফুকোকা সব শতবর্ষী নাগরিককে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, ‘তাদের দীর্ঘায়ু এবং সমাজের উন্নয়নে অসাধারণ অবদানের জন্য আমরা বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ।’

ষাটের দশকে জি৭-ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে জাপানে ১০০ বছরের বেশি বয়সী মানুষের অনুপাত কম ছিল। কিন্তু কয়েক দশক ধরে এই চিত্র উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। ১৯৬৩ সালে যখন সরকার শতবর্ষী ব্যক্তিদের গণনা শুরু করে, তখন দেশটিতে ১০০ বা তার বেশি বয়সী মানুষের সংখ্যা ছিল ১৫৩ জন। এই সংখ্যা ১৯৮১ সালে ১ হাজার এবং ১৯৯৮ সালের মধ্যে ১০ হাজারে পৌঁছায়।

জাপানে প্রতিবছরের ১৫ সেপ্টেম্বর পালিত হয় এলডারলি ডে হিসেবে; প্রধানত বয়সী নাগরিকদের সম্মান জানানোর জন্য। এদিন নতুন শতবর্ষী নাগরিকেরা প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে অভিনন্দনপত্র ও রুপার কাপ পান। চলতি বছরে ৫২ হাজার ৩১০ জন নতুন শতবর্ষী এই অনুষ্ঠানে পুরস্কার পেয়েছেন।

জাপানের মানুষ সাধারণত স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করেন। তারা বেশি মাছ ও শাকসবজি খান এবং লাল মাংস ও চিনি কম খান। দেশটিতে বিশেষ করে নারীদের মধ্যে স্থূলতার হার খুব কম। এ ছাড়া হৃদ্‌রোগের সমস্যা ও সাধারণ ক্যানসারে মৃত্যুর হারও কম। শুধু খাদ্য নয়, জাপানিরা বার্ধক্যেও সক্রিয় থাকেন এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বয়স্কদের তুলনায় বেশি হাঁটেন

ও গণপরিবহন ব্যবহার করেন। এ ছাড়া তারা সমাজের অন্যদের সঙ্গে নিয়মিত মেলামেশা করেন। এর অংশ হিসেবে ১৯২৮ সালে চালু হয়েছে দৈনিক তিন মিনিটের গ্রুপ ব্যায়াম ‘রেডিও তাইসো’। এটি টেলিভিশনে সম্প্রচারিত হয় এবং ছোট ছোট স্থানীয় কমিউনিটিতে সবাই একসঙ্গে এর অনুশীলন করেন।

জাপানিদের দীর্ঘ জীবনের রহস্যগুলো নম্বর আকারে তুলো ধরা হলো।

১️. লবণ ও চিনি নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস

বিশ্বের অনেক দেশে খাবারে চিনি ও লবণের পরিমাণ বাড়ছে, কিন্তু জাপান সরকার ও জনসচেতনতায় সফলভাবে লবণের ব্যবহার কমাতে পেরেছে।

সুষম খাদ্যাভ্যাস, বেশি সবজি ও সামুদ্রিক মাছের গ্রহণ দীর্ঘায়ুতে বড় ভূমিকা রাখে।

২️. সক্রিয় জীবনযাপন ও নিয়মিত ব্যায়াম

জাপানিরা প্রতিদিন হাঁটাচলা করে, গণপরিবহন বেশি ব্যবহার করে।

রেডিও তাইসো নামের মাত্র তিন মিনিটের শরীরচর্চার রুটিন ১৯২৮ সাল থেকে জনপ্রিয়, যা সারা দেশে ছোট ছোট দলে প্রতিদিন করা হয়।

৩️. শক্তিশালী সামাজিক সংযোগ ও সম্প্রদায়ের ভূমিকা

প্রতিবেশী ও বন্ধুদের সঙ্গে নিয়মিত মেলামেশা, সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ এবং পারিবারিক বন্ধন মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য সহায়ক। এই সামাজিক সংস্কৃতি একাকিত্ব কমিয়ে শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা বাড়ায়।

৪. দীর্ঘস্থায়ী জনস্বাস্থ্য নীতি ও চিকিৎসা ব্যবস্থা

স্বাস্থ্য পরীক্ষা, প্রতিরোধমূলক চিকিৎসা, সরকারি স্বাস্থ্যনীতি এবং দীর্ঘদিনের স্বাস্থ্যশিক্ষা মানুষকে সচেতন রাখে। গড়ে আয়ুষ্কাল বাড়াতে সরকার নিয়মিত পরিসংখ্যান, গবেষণা ও সচেতনতামূলক উদ্যোগ নেয়।

৫️. সতর্ক ও সঠিক রেকর্ড–কিপিং (কিন্তু ত্রুটি আছে)

পারিবারিক রেজিস্ট্রি ও জাতীয় পর্যায়ের তথ্য সংরক্ষণ শতবর্ষীদের সংখ্যা নির্ধারণে সহায়ক।

যদিও ২০১০ সালের সরকারি নিরীক্ষায় দেখা গেছে, কিছু পুরনো রেকর্ডে মৃত্যু সঠিকভাবে হালনাগাদ হয়নি—কেউ কেউ পেনশনের জন্য তথ্য গোপনও করেছে।

৬️. জিনগত (Genetic) প্রভাব

গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘায়ুতে বংশগত বৈশিষ্ট্যেরও ভূমিকা রয়েছে। একই ধরনের খাদ্যাভ্যাস থাকা সত্ত্বেও পরিবারের দীর্ঘায়ু প্রবণতা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে দেখা যায়।

সম্পাদক: শাহ সুহেল আহমদ
প্যারিস ফ্রান্স থেকে প্রচারিত

সার্চ/খুঁজুন: