করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারী দেশজুড়ে ক্রমবর্ধমানহারে ছড়িয়ে পড়ার কারণে এটি সাধারণ জনগণ তথা প্রাপ্তবয়স্ক, পেশাদার ও সম্মুখ সেবাদানকারী ব্যক্তি এবং অন্যান্য রোগাক্রান্ত মানুষের মাঝে এক ধরনের আশঙ্কা ও উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) রংপুর ও অস্ট্রেলিয়ার ওয়েস্টার্ন সিডনি ইউনিভার্সিটির এক যৌথ সমীক্ষায় এই চিত্র উঠে এসেছে। বৃহষ্পতিবার (১৪ মে) রাজধানীর শ্যামলীর খিলজি রোডে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের লিয়াজোঁ অফিসে এক সংবাদ সম্মেলনে এই গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়।
প্রতিষ্ঠান দুটির গবেষণার মূল উদ্দেশ্য করোনাভাইরাসকালীন সময়ে বাংলাদেশের মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য এবং মনস্তাত্ত্বিক প্রভাবের বিভিন্ন স্তর অনুসন্ধান করা। যেটি করতে গিয়ে দেখা গেছে ক্রমবর্ধমান লকডাউনের ফলে মানুষের মধ্যে নানা ধরনের মানসিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। যারমধ্যে অনিদ্রা, মানসিকভাবে ভেঙে পড়া ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। তবে এসব বিষয়ে স্পষ্ট কোনো পরিসংখ্যান না থাকায় সংখ্যাতাত্তিক উপস্থাপন ও নির্দিষ্টকরণ করে এই গবেষণায় আলোকপাত করা হয়েছে।
এ গবেষণাটি অনলাইন প্লাটফর্ম ব্যবহার করার মাধ্যমে একটি ক্রস সেকশনাল সমীক্ষা পরিচালনা করে। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ড. ওয়াজেদ রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইন্সটিটিউট’ ও অস্ট্রেলিয়ার ওয়েস্টার্ন সিডনি ইউনিভার্সিটির ‘স্কুল অব সায়েন্স অ্যান্ড হেলথ বিভাগের উদ্যোগে সমীক্ষাটি পরিচালিত হয়। ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে লক-ডাউন চলাকালীন সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে সংমিশ্রিত এবং স্বপ্রণোদিত অনলাইন জরিপ পরিচালনা করা হয়। যেখানে ১০ হাজার ৯০০ জন উত্তরদাতাদের মধ্যে ১০ হাজার ৬৬০ জন উত্তরদাতা প্রশ্নপত্র যথাযথভাবে সম্পন্ন করে।
গবেষণা ফলাফলে দেখা যায়, ১০ হাজার ৬৬০ জন উত্তরদাতাদের মধ্যে পুরুষ ৪ দশমিক ৯১ শতাংশ, মহিলা ৫০ দশমিক ৪ শতাংশ এবং অন্যান্য ০ দশমিক ৫ শতাংশ। ৬১ দশমিক ৬ শতাংশ অংশগ্রহণকারীর বয়স ১৮ থেকে ২৮ বছর এবং ৫৬ দশমিক ৪ শতাংশ উত্তরদাতা পূর্ণকালীন বা খন্ডকালীন কর্মে নিযুক্ত ছিলেন। বেশিরভাগ উত্তরদাতা (৩৩ দশমিক ৯) শতাংশ ছিলেন ঢাকার বাসিন্দা। সামগ্রিকভাবে দেখা গেছে, উত্তরদাতাদের ৮০ দশমিক ২ শতাংশ পরিবারের সঙ্গে থাকছেন এবং তাদের মতে সংকটকালে পরিবারের সঙ্গে বসবাস করার কারণে তারা কিছুটা হলেও স্বস্তিবোধ করছেন। এছাড়া উত্তরদাতাদের মধ্যে ১ হাজার ১৮৫ জন উত্তরদাতা জানিয়েছেন যে তারা ইতোমধ্যে কোভিড ১৯ পরীক্ষা করাতে সক্ষম হয়েছেন এবং এরমধ্যে ২৯ দশমিক ২০ শতাংশ এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন।
এ গবেষণায় দেখা গেছে, উত্তরদাতাদের ৯১ দশমিক ৪ শতাংশ এ মহামারী পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাদের মধ্যে ৭২ দশমিক ৮ শতাংশ উত্তরদাতা অনিদ্রায় ভুগছেন, ৭১ দশমিক ৬ শতাংশ উত্তরদাতা এ মহামারী পরিস্থিতিতে বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ এবং ৬৩ দশমিক ৫ শতাংশ উত্তরদাতা ভবিষ্যত নিয়ে হতাশা ও শঙ্কার কথা উল্লেখ করেন। ৬৮ দশমিক ২ শতাংশ উত্তরদাতাদের মতে এ মহামারী পরিস্থিতিতে সামগ্রিকভাবে তারা আতঙ্কিত এবং বেশিরভাগ (৫৯ দশমিক ৪ শতাংশ) উত্তরদাতা বলেছেন যে তাদের কাছে জীবন অর্থহীন হয়ে পড়েছে। উল্লেখ্য, অনিদ্রা, বিরক্তি, বিমলতা, উদ্বিগ্ন অবস্থা, নেতিবাচক চিন্তা আতঙ্ক এবং উত্তরদাতাদের হতাশা থেকে সহজেই দাবি করা যায় যে করোনাভাইরাস মহামারী বাংলাদেশের মানুষের মানসিক অবস্থার উপর ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলেছে।
এ গবেষণার চিফ ইনভেস্টিগেটর ছিলেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. ওয়াজেদ রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইন্সটিউটের পরিচালক প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ (বিএনসিসিও), সহযোগী ইনভেস্টিগেটর ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি’র সহযোগী অধ্যাপক ড. তানভীর আবির ও অস্ট্রেলিয়ার ওয়েস্টার্ন সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব সায়েন্স অ্যান্ড হেলথ বিভাগের সিনিয়র লেকচারার ড. কিংসলে এগো, সহকারী গবেষক হিসেবে ছিলেন যথাক্রমে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি’র জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক দেওয়ান মুহাম্মদ নূর-এ ইয়াজদানি, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক ত্বহা হুসাইন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. ওয়াজেদ রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইন্সটিটিউটের এম ফিল রিসার্চ ফেলো মো. হাবিবুর রহমান প্রমুখ।