সোমবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভূমি প্রশাসনের প্রতিটি স্তরে অনিয়ম ও দুর্নীতি




স্টাফ রিপোর্টার,
658
ভূমি প্রশাসনের প্রতিটি স্তরে ব্যাপকহারে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিস্তার ঘটেছে বলে মনে করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশ (টিআইবি)। এ ছাড়া, ভূমি সেবা গ্রহণে প্রতিটি স্তরে সেবা গ্রহীতারা হয়রানি ও আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন বলেও মন্তব্য টিআইবি’র। টিআইবি বলছে, ভূমি প্রশাসনের দুর্নীতির কারণে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে। রাষ্ট্র ও ভূমি মালিকদের ভূমি দখল ও আত্মসাৎ হয়ে যাচ্ছে। টিআইবি’র এক গবেষণায় এমন চিত্র উঠে এসেছে। রোববার রাজধানীর ধানমণ্ডিতে টিআইবি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ‘ভূমি ব্যবস্থাপনা ও সেবা কার্যক্রম: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। টিআইবি’র সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার ড. ওয়াহিদ আলম গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ভূমি প্রশাসনের অব্যবস্থাপনার ফলে ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ ও মামলার সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। বর্তমানে সারা দেশের বিভিন্ন আদালতে শুধু ভূমি নিয়েই ১৮ লাখ মামলার জট বেঁধে আছে। এক্ষেত্রে আইনজীবীদের মামলা পরিচালনায় অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার অভাব রয়েছে বলেও মনে করে টিআইবি। এছাড়া, আইনজীবীদের একাংশ মামলার প্রতিপক্ষের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে সরকারের স্বার্থ বিসর্জন দেয়। গবেষণা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, জিপি নিয়োগে দক্ষতার চেয়ে রাজনৈতিক পরিচয়কে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। বকেয়া ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ে মামলা না করতে প্রভাবশালী ও ক্ষমতাসীন দলের মাধ্যমে চাপ প্রয়োগের মতো ঘটনাও ঘটছে। বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসন হাটবাজার নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করেন না বলেও অভিযোগ করেছে টিআইবি। টিআইবি জানিয়েছে, বিভিন্ন পর্যায়ে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাংশ ও স্বার্থান্বেষী মহলের সঙ্গে যোগসাজশের মাধ্যমে অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রবণতা বেড়েছে। বিধিমালা না মেনে ভূমি মালিকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত কর আদায় করা হচ্ছে। ভূমি জরিপের সময় জরিপকর্মী কর্তৃক জমির পরিমাণ কম দেখানো ও খতিয়ানে ভুল তথ্য সন্নিবেশের ভয় দেখিয়ে ঘুষ আদায় করা হচ্ছে। রয়েছে দালালদের উৎপাতও। এছাড়া, সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের কোন কোন কর্মকর্তা ও দলিল লেখকদের যোগসাজশে ঘুষ নেয়া ও বিভিন্ন অনিয়মের ঘটনা ঘটছে। এ সময় ভূমি সেবায় ও ভূমি সংক্রান্ত মামলা পরিচালনায় ঘুষ লেনদেনের একটা লম্বা ফিরিস্তি তুলে ধরে টিআইবি। এতে বলা হয়, ভূমি উন্নয়ন ‘কর’-এ ঘুষ নেয়া হয় ১০০ টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। নামজারিতে ৩ হাজার টাকা থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত। রেজিস্ট্রেশনে ১ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা। খতিয়ান ও নকশার নকল কপি ওঠাতে ২০০ থেকে ১ হাজার টাকা। দলিলের নকল ওঠাতে ঘুষের পরিমাণ ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা। হাট-বাজার ইজারায় ১০ হাজার থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত। হাট-বাজারের অতিরিক্ত টোল গ্রহণের বিরুদ্ধে যে কোন তদন্ত ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা প্রতিহত করতে ঘুষ লাগে ১০ হাজার টাকা থেকে ২ লাখ পর্যন্ত। প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের টিআইবি পরিচালিত একটি জরিপ বলছে, ভূমি দেশের তৃতীয় শীর্ষ দুর্নীতিগ্রস্ত খাত। জাতীয়ভাবে মোট প্রাক্কলিত ঘুষের পরিমাণ ২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা। এ বছরে ঘুষের পরিমাণ কেমন হবে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, ভূমি ব্যবস্থাপনায় সমন্বয়হীনতা ও জবাবদিহিতার ঘাটতি রয়েছে। জনবল, মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা, আসবাবপত্র, লজিস্টিকস, আধুনিক যন্ত্রপাতি ও যানবাহনেরও ঘাটতি রয়েছে। এছাড়া, তথ্য সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা, ডিজিটালাইজেশন, তথ্য সরবরাহ ও অভিযোগ দায়ের ব্যবস্থায়ও ঘাটতি রয়েছে বলে মত দেয় টিআইবি। টিআইবি মনে করে, রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব ও অপর্যাপ্ত বাজেট ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত করছে ভূমিখাতকে। এর ফলে ভূমিখাতে অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ হয়েছে। এছাড়া, সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকা, সামাজিক কল্যাণ ও নিরাপত্তা ব্যাহত হচ্ছে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ভূমি সংক্রান্ত সকল প্রশাসনিক ও ব্যবস্থাপনা কাঠামোর পরিচালনার জন্য একক অধিদপ্তর গড়ে তোলার সুপারিশ জানিয়েছে টিআইবি। এছাড়া, জাতীয় বাজেটে চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ রাখারও সুপারিশ করা হয় টিআইবি’র পক্ষ থেকে। টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান জানান, কিছুুদিনের মধ্যেই ২০১৫ সালের টিআইবি পরিচালিত জাতীয় খানা জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হবে। এবার বিভিন্ন সেবাখাতে দুর্নীতির পরিমাণ আগের তুলনায় আরও বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।

সম্পাদক: শাহ সুহেল আহমদ
প্যারিস ফ্রান্স থেকে প্রচারিত

সার্চ/খুঁজুন: