সোমবার, ৭ জুলাই ২০২৫ খ্রীষ্টাব্দ | ২৩ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভিভাটেক-২০২৫: স্টার্টআপ বিশ্বে বাংলাদেশের সাহসী অগ্রযাত্রা




শাহ সুহেল আহমদ, প্যারিস :

বিশ্ব প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের অন্যতম বৃহৎ আন্তর্জাতিক আসর ভিভাটেক–২০২৫ (VivaTech 2025)–এ এবার দ্বিতীয়বারের মতো পূর্ণাঙ্গ জাতীয় প্যাভিলিয়ন নিয়ে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ। “Bangladesh 2.0” শিরোনামে এই প্যাভিলিয়নটি ছিল দেশের তথ্যপ্রযুক্তি ও স্টার্টআপ খাতের অগ্রগতির প্রতীক।

প্যারিসের Porte de Versailles–এ ১১ থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত চারদিনব্যাপী এই সম্মেলনে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে অংশ নেয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান, বিনিয়োগকারী, গবেষক ও নীতিনির্ধারকেরা। এই বিশাল আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশের উপস্থিতি ছিল আত্মবিশ্বাসী, আধুনিক ও ভবিষ্যতমুখী, যা দৃষ্টি কেড়েছে আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণকারীদের।

বাংলাদেশ থেকে এ বছর অংশ নেয় মোট ১৪টি তথ্যপ্রযুক্তি ও স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান। এদের মধ্যে ছিল Codemoly, BDTask, Brain Station 23 PLC, Kaz Software, Bondstein Technologies, Oyolloo, Craftsmen Ltd., Intellier Limited, TiCON System Limited, Enerzyz Inc., Inument Solutions Pte. Ltd., Touristta Bangladesh, Riseup Labs এবং Zantrik Technologies Ltd.

তারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, গভর্ন্যান্স প্রযুক্তি, ক্লাইমেটটেক, এডটেক, সেমিকন্ডাক্টর ও VLSI ডিজাইনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিজেদের উদ্ভাবনী প্রযুক্তি ও সেবা উপস্থাপন করে।

বাংলাদেশি অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে Codemoly বিশেষভাবে দৃষ্টি কাড়ে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-ভিত্তিক সফটওয়্যার অটোমেশন, ওয়েব এবং মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপমেন্টে প্রতিষ্ঠানটির দক্ষতা আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি করে। Codemoly–র একজন প্রতিনিধি জানান, “এই সম্মেলন আমাদের ইউরোপীয় বাজারে প্রবেশ এবং বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব গড়ার এক দুর্লভ সুযোগ এনে দিয়েছে।”

এছাড়া, BDTask ও Oyolloo উপস্থাপন করে সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট ও ডিজাইন সেবা, Touristta Bangladesh তুলে ধরে পরিবেশবান্ধব ট্যুরিজম ও রিলোকেশন প্রযুক্তি, আর Riseup Labs এবং Zantrik নজর কাড়ে গেম ও ট্রান্সপোর্ট প্রযুক্তি খাতে তাদের কাজ দিয়ে।

অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া উদ্যোক্তারা জানান, ভিভাটেক–এর মতো আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে অংশগ্রহণের ফলে তারা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে সংযোগ গড়তে পারছেন, যা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের প্রযুক্তি রপ্তানিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

সার্বিকভাবে “Bangladesh 2.0” প্যাভিলিয়ন বাংলাদেশকে উপস্থাপন করেছে একটি নতুন প্রযুক্তিভিত্তিক অর্থনীতির সম্ভাবনাময় প্রতিচ্ছবি হিসেবে। উদ্যোক্তারা জানান, ভিভাটেক–এর মতো আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে সক্রিয় অংশগ্রহণ ভবিষ্যতে দেশীয় স্টার্টআপ ও প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর জন্য বৈশ্বিক বিনিয়োগের নতুন দরজা খুলে দিতে পারে।

বাংলাদেশি অংশগ্রহণকারীদের উৎসাহ দিতে সম্মেলনে সরাসরি উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়ব।

তিনি বলেন- দেশের প্রযুক্তি খাতের কাঠামোগত উন্নয়নের জন্য ডেটা, ক্লাউড সিস্টেম এবং ইলেকট্রিক ভেহিকেল (ইভি) সংশ্লিষ্ট খাতে নীতিমালার ভিত্তি তৈরির কাজ চলমান রয়েছে। এই ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে ভবিষ্যতের সরকারগুলো আইসিটি খাতকে আরো সমৃদ্ধ করতে পারবে।

উল্লেখ্য, এবারের ভিভাটেক সম্মেলনে অংশ নেয় প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার দর্শক, ১৪ হাজার স্টার্টআপ, এবং ৪ হাজারেরও বেশি বিনিয়োগকারী ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ। এমন একটি বিশাল আন্তর্জাতিক আয়োজনের মধ্যে বাংলাদেশের উপস্থিতি ছিল আত্মবিশ্বাসী, প্রাসঙ্গিক ও ভবিষ্যতপ্রস্তুত।

বাংলাদেশের এই অংশগ্রহণ সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়। আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি অঙ্গনে বাংলাদেশ যে আর পিছিয়ে নেই, বরং আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে—ভিভাটেক ২০২৫ যেন সেই বার্তাই নতুনভাবে পৌঁছে দিলো।

সম্পাদক: শাহ সুহেল আহমদ
প্যারিস ফ্রান্স থেকে প্রচারিত

সার্চ/খুঁজুন: