মিজান মোহাম্মদ:
নেহা ও আমির (ছদ্মনাম, নগরীর বাসিন্দা) চার বছরের রিলেশনের পরিণতি দেয় বিয়ের মাধ্যমে। বিয়েরও দুই হয়ে গেল। দুইজনেই চাকুরি করছে প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে। বেতনও ভালো। সুখেই চলছিল টোনাটুনির সংসারটি। কিন্তু বাধ সাধে করোনা। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে দেশে ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি। তাই দুজনই সারাদিন বাসায় থাকছে। অবসরে বসে থাকতে থাকতে সারাদিনই মোবাইল টিপছে। এতেই শুরু হয় সন্দেহের। নেহা চেক দেখতে চায় আমিরের ফোন। আমির দেখায়। কিন্তু যখনই আমির নেহার ফোন চেক করতে চায়, নেহা দেখাবেই না। আমির রাগে ফুসতে থাকে। শুরু হয় কথা কাটাকাটি, ঝগড়া, শেষে হাতাহাতি। অবশেষে সিদ্ধান্ত হয় লকডাউন শেষ হলেই কোর্টে ওঠবে, ডিভোর্সের জন্য।
এমন নেহা ও আমিরের সংখ্যা নগরীতে দিন দিন বেড়েই চলছে। কারণ ব্যাংক, গণমাধ্যম ও স্বাস্হ্য খাতের চাকুরিজীবী ছাড়া অন্যদের হাতে সময় কাটানোর তেমন কোন উপায় নেই। তাই টিভি দেখে ও মোবাইল টিপে সময় ব্যয় করেছেন তারা। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জোকের কারণে বাড়ছে সন্দেহ ও দাম্পত্য কলহ, বাড়ছে পারিবারিক সহিংসতাও।
রিনা ও আশরাফের চার বছরের সংসারে টুকাটাক অভিমান হলেও ঝগড়া হয়নি কখনো। কিছুদিন আগে রিনা আশরাফকে মোরগ কাটার অনুরোধ করলে আশরাফ শরীর খারাপের অজুহাতে মোরগ কাটতে চায়নি। এতেই রিনা রেগে মেগে আগুন। শুরু হয় ঝগড়া। শেষ পর্যন্ত তা গড়ায় ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কাছে।
মশারী টানানো, বাচ্চাকে কোলে রাখা, বুয়ার সাথে হেসেহেসে কথা বলা, থালাবাসন ধোঁয়া এমনকি বিছানা ঠিক করা নিয়েও ঝগড়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে এমন মনে হচ্ছে যে মানুষ সময় কাটানোর জন্য ঝগড়া করছে। কাজেও ঝগড়া হচ্ছে, অকাজেও ঝগড়া হচ্ছে। ঝগড়া হচ্ছে স্বামী-স্ত্রীতে, ঝগড়া হচ্ছে ভাইয়ে-ভাইয়ে, ঝগড়া হচ্ছে ঝা’য়ে ঝা’য়ে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডা: আলী আকবর জানান- কাজের মানুষ যখন বেশি সময় ধরে বেকার থাকে, তখন তার মধ্যে এক ধরণের অস্থিরতা বা বিষণ্ণতা কাজ করে, ফলে অহেতুক ঝগড়ার সৃষ্টি হয়। অথচ কাজে ব্যস্ত থাকলে এসব ছোটখাটো বিষয় সবাই এড়িয়ে যেতে চায়।
লকডাউনে ঝগড়া ও বিবাহ বিচ্ছেদ প্রবণতা নিয়ে জানতে চাইলে কাজী শাহেদ বিন জাফর জানান -‘অধিকাংশের হাতেই এখন অখন্ড অবসর। আর সময় কাটাতে মানুষ ফেসবুকে আসক্ত হচ্ছে। অবসর সময় পেয়ে কেউ যদি স্ত্রী সন্তানকে না দিয়ে ফেসবুকে আসক্ত হয় তখন ঝগড়া তো হবেই। তাই সবার উচিত হবে ফেসবুকে নয়, পরিবারকে সময় দেওয়া।’