শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

Sex Cams

ফ্রান্সবাসি বাংলাদেশীদের মানবিক দৃষ্টান্ত




লোকমান আহম্মদ আপন

করোনাকালীন মহা সংকটে পুরো বিশ্ব আজ অসহায়। অদৃশ্য মহাশক্তি কভিড ১৯ মেকাবেলায় সারা দুনিয়া নাকানি চুবানি খাচ্ছে। এখন পর্যন্ত সারা বিশ্বে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন অর্ধকোটির কাছাকাছি মানুষ। মৃত্যু হয়েছে তিন লক্ষাধিক মানুষের।

করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমিরিকা এবং ইউরোপ। ইউরোপের মধ্যে অন্যতম করোনাক্ষতিগ্রস্ত দেশ হচ্ছে ফ্রান্স। ফ্রান্সে বসবাস করে প্রায় লাখের কাছাকাছি বাংলাদেশি। ফ্রান্সের আপামর জনগণের পাশাপাশি ফ্রান্সবাসী বাংলাদেশীরাও পড়েছেন মহা সংকটে। ফ্রান্সে বাংলাদেশীদের বেশিরভাগের জীবন জীবীকা খুবই সংগ্রামমুখর। কোভিড ১৯ মহা সংকট সংগ্রামমুখর এই জীবনকে আরো কঠিন করে তুলেছে। কিন্তু কঠিন এই মহা দুর্যোগকালীন সংকট মোকাবেলায় ফ্রান্সবাসি বাংলাদেশীরা দেশীয় স্বজনদের পাশে দলমত নির্বিশেষে সকল দ্বন্দ ও ভেদাভেদ ভুলে যেভাবে মানবিক হাত নিয়ে দাঁড়িয়েছেন তা এক বিরল দৃষ্টান্ত তৈরী করেছে।

ফেব্রুয়ারিতে ফ্রান্সে করোনারোগী শনাক্ত হবার পর বাংলাদেশীদের সংগ্রামমুখর জীবনে নেমে আসতে থাকে ঘোর অমানিশা। মার্চে লকডাউন আরোপের পর সেই অমানিশা বাংলাদেশিদের জীবনে তৈরী করে নানামুখি সংকট। এই সংকট সবচেয়ে বেশি সমষ্যায় ফেলে দেয় কর্মহীন অনিয়মিত বাংলাদেশীদের। এদের পাশাপাশি ফ্রান্সে থাকা অনিয়মিত পরিবারগুলো পড়ে যায় (কিছু নিয়মিত কর্মহীন পরিবারও) ভয়াবহ সংকটে। কঠিন সংকটে পড়েন ফ্রান্সে মেসে থাকা অনেকে (যাদের  কাজ নেই, অনিয়মিত কিংবা করোনা আক্রান্ত)। এসব সংকট মোবাবেলায় সাহসিকতার সাথে উদ্যোমী হয়ে স্বদেশী সংকটাপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ান বেশ কিছু বাংলাদেশী তরুণ । নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ি এবং কমিউনিটির বিত্তশালীদের উদার সহযোগিতায় বিপদগ্রস্ত হাজার হাজার দেশীয় স্বজনের পাশে দাঁড়িয়েছেন নিজেদেরই দেশীয় স্বজনেরা। হয়ে উঠেছেন মানবিক আলোকবির্তকা। নাম, যশ, খ্যাতি এবং প্রচারের মোহ ত্যাগ করে শুধুমাত্র মানবিক বোধের তাড়নায় সংকটাপন্ন দেশীয় স্বজনদের পাশে দাঁড়িয়ে ফ্রান্সবাসি বাংলাদেশীরা তৈরী করেছেন এক অনন্য দৃষ্টান্ত। করোনা আক্রান্ত দেশীয় স্বজনের জন্যে হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করা, বাসা থেকে রান্না করা খাবার সরবরাহ, করোনা আক্রান্তদের জন্যে আইসোলেশন সেন্টার তৈরী করা, অভাবগ্রস্ত মানুষের দ্বারে দ্বারে খাবার ও ওষুধ সামগ্রী পৌছে দেয়া, চিকিৎসায় সহায়তা করাসহ নানান মানরবিক কাজে দৃষ্টান্ত তৈরী করেছেন আমাদের বাংলাদেশী স্বজনেরা।

আমরা সবাই জানি, প্রবাসের জীবন অনেক কঠিন আর সংগ্রামের। প্রবাসে অনেকে অনেকের জন্যে কিছু করতে চাইলেও করতে পারেনা সামর্থ্য ও সময়ের অভাবে। কঠিন সংগ্রামময় জীবনে থেকেও এরকম একটি ভয়ংকর মহামারীতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানবতার কাজ করা সত্যিই প্রশংসার দাবীদার। একরকম প্রতিযোগিতার মনোভাব নিয়ে কাজ করছেন মানবতার ফেরিওয়ালা এসব বাংলাদেশীরা। ফ্রান্স সরকার কিংবা বাংলাদেশ দূতাবাসের সাহায্যের আশায় বসে না থেকে সংগঠনের নামে, ফেসবুক গ্রুপের নামে কিংবা নিজ উদ্যোগে মানবিক সহায়তার কাজ করছেন এরা। উদার মনমানসিকতার এসব বাংলাদেশি ফেরিওয়ালা কোনো সেবাগ্রহীতার ছবি কিংবা নাম প্রকাশ করেননি বা করছেননা। যা সত্যিই প্রসংসার দাবীদার।

সেবা দেয়ার কাজে জড়িত কয়েকজনের সাথে কথা হয়েছে আমার। সংকটাপন্ন এই সময়ে স্বদেশী স্বজনের জন্যে তাদের কাজ করার অভিজ্ঞতার কথা শুনে সত্যিই গর্ব অনুভব করেছি। করোনাকালীন চলমান এই মহা সংকটে তাদের মানবিক সহায়তা অব্যাহত আছে এখনো। এ প্রসঙ্গে কথা বলেছিলাম করোনাকালীন সেবাগ্রহীতা কিছু স্বজনের সাথে। তারা সবাই মন খুলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছিলাম বাংলাদেশী কমিউনিটির বেশ কয়েকজনের সাথে। সকলেই এই মানবিক উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং বাংলাদেশী কমিউনিটির জন্যে এক বিরাট সাফল্য হিসেবে দেখছেন।

একদিন এই সংকট থাকবেনা।  থাকবেনা করোনার কালো ছায়া। কিন্তু মানবিকতার ফেরিওয়লা হে বাংলাদেশী স্বজনেরা, থেকে যাবে আপনাদের রেখে যাওয়া মানবিক কাজের দৃষ্টান্ত। সংকটাপন্ন সকল বাংলাদেশীর সব রকমের সংকট সমাধান করা হয়তো সম্ভব নয়। কিন্তু নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী স্বদেশী স্বজনের পাশে মানবিক সহযোগিতার হাত নিয়ে দাঁড়ালে যেকোন সংকট যে সহজে মোকাবেলা করা যায় ফ্রান্সবাসি বাংলাদেশীরা এটা প্রমাণ করে দিয়েছেন করোনাকালীন এই মহা সংকটে। মানবিক সহযোগিতার হাত নিয়ে সামর্থ্যবান বাংলাদেশী স্বজনেরা ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন।  মহৎকাজের ধারা অব্যাহত থাকুক। আপনারা মানরকিতার যে আলো জ্বালিয়েছেন সেটা যেনো নিভে না যায়, শুভ কামনা করছি। মানবিকতার ফেরিওয়ালা হে আমার স্বদেশী স্বজন, আপনাদের প্রতি অনেক কৃতজ্ঞতা শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা ।

লোকমান আহম্মদ আপন : লেখক ও সাংবাদিক। প্যারিস, ফ্রান্স। 

সম্পাদক: শাহ সুহেল আহমদ
প্যারিস ফ্রান্স থেকে প্রচারিত

সার্চ/খুঁজুন: