মেয়র পরিবর্তনশীল উন্নয়ন থাকুক গতিশীল
মোহাম্মদ আব্দুল হক
বৃটিশ শাসন আমল থেকে সিলেট ভূমি ধর্মীয় সামাজিক অর্থনৈতিক রাজনৈতিক আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ। এই সিলেট বহু গুণী মানুষের পদচারণায় সবসময় মুখরিত। সিলেটের উন্নয়ন ভাবনায় জড়িয়ে আছেন রাজনৈতিক ও সামাজিক বহুজন। উন্নয়নের ক্ষেত্রে আজকে সারা বাংলাদেশের আলোচিত সিলেট একসময় ছিলো পৌরসভা। ১৮৮৭ খ্রীষ্টিয় সালে রায় বাহাদুর দুলাল চন্দ্র দেব ছিলেন সিলেট পৌরসভার প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান। প্রায় দুই শতো বছরের পুরনো হাজার ইতিহাসের সাক্ষী সিলেট শহর এখন সিটি করপোরেশন। দেশের সিটি করপোরেশনগুলোর অন্যতম হচ্ছে সিলেট সিটি করপোরেশন। সিটি করপোরেশন হিসেবে যাত্রার শুরুতে আওয়ামী লীগ নেতা বদরউদ্দিন আহমদ কামরান পরপর দুইবার সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র ছিলেন। এরপর সিলেটের মানুষ বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরীকে মেয়র হিসেবে নির্বাচিত করে। অত্যন্ত জনপ্রিয় মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী পরপর দুইবার সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর ২০২৩ সালের নির্বাচনে তিনি দলীয় সিদ্ধান্তকে প্রাধান্য দিয়ে আর নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেননি। পঞ্চম মেয়র হিসেবে সিলেটের মানুষ আনোয়ারুজ্জান চৌধুরীকে নির্বাচিত করেছেন। সেই ১৮৮৭ খ্রীষ্টিয় সাল থেকে পর্যায়ক্রমে একেকজন জন প্রতিনিধির নেতৃত্বে আজকে সিলেটের এই অবস্থান।
দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় যেমন বিভিন্ন রাজনৈতিক সরকারের ভূমিকা থাকে তেমনি বিভিন্ন স্থানীয় পরিষদের নেতৃত্বের দূরদর্শী পরিকল্পনায় উন্নতির দিকে এগিয়ে যায় একেকটি শহর। এখানে নেতৃত্ব পরিবর্তন হয় কিন্তু উন্নয়নের চাকা নেতৃত্বের আন্তরিকতায় এবং দক্ষতায় সামনের সুন্দরের দিকে এগিয়ে যায়। সিলেটের বহু সমস্যা নিয়ে সাংবাদিক ও কলামিস্টগণ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পত্রিকায় প্রতিবেদন আকারে অথবা উপসম্পাদকীয় কলামে সমস্যা চিন্নিত করার পাশাপাশি সমাধানের পথ উল্লেখ করে লিখেছেন। দেখা গেছে পরবর্তীতে ওইসব সমস্যা সমাধানের জন্যে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছেন। আমরা দেখেছি পত্রিকায় নগরীর কোনো সমস্যা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পরে পরবর্তী আটচল্লিশ ঘন্টায় তা নিয়ে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী (সাবেক) মহোদয় নিজে উদ্যোগ নিয়ে সমাধানের পথে এগিয়েছেন। বিগত দশ বছরে সিলেটের মানুষ অনেক কিছু নতুন ও ঝলমলে দেখেছে। বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সড়কে কোনো বৈদ্যুতিক খুঁটি না-রাখার। পরীক্ষা মূলক ভাবে শহরের প্রাণকেন্দ্রে হজরত শাহজালাল রহঃ মাজারে প্রবেশের প্রধান সড়কে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী (সাবেক) এমন উদ্যোগের সফল বাস্তবায়ন দেখিয়েছেন। সড়কে যানবাহন চলাচলে শৃঙ্খলা আনয়ন করার জন্যে তিনি মধুবন মার্কেট থেকে উত্তর দিকে চৌহাট্টা পয়েন্ট পর্যন্ত রিকশা চলাচল বন্ধ করেছেন। এমন উদ্যোগ খুবই গুরুত্ববহ সিলেটের শৃঙ্খলা আনয়নে। অস্বীকার করার উপায় নাই যে, এই সময়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রসস্থ হয়েছে কোথাও দ্বিগুণ। সিলেটের ফুটপাত হয়েছে দৃষ্টিনন্দন এবং পাশাপাশি নগরবাসী যাতে নির্বিঘ্নে ফুটপাতে হেঁটে চলতে পারে সেজন্যে তিনি ( সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী) সারা বছর সিটি করপোরেশনের লোক লাগিয়ে এমনকি কখনও কখনও মেয়র সাহেব নিজে অভিযান পরিচালনা করেছেন। পাঠানটুলা থেকে আম্বরখানা, সুবিদ বাজার থেকে রিকাবি বাজার হয়ে চৌহাট্টা পয়েন্ট, বন্দর বাজার থেকে এয়ারপোর্ট রোডে সড়কের মধ্যেখানে রোড-ডিভাইডার করে নানান জাতের বাহারি ফুল গাছের ছাড়া লাগিয়ে শহরের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে চমৎকার উদ্যোগ নিয়েছেন। তা এখনও দৃশ্যমান। শহরের বাসা, হোটেল, অফিস ইত্যাদি থেকে পানি নিষ্কাশনের জন্যে ড্রেন প্রসস্থ করেছেন। একটি শহরকে মাত্র দশবছর সময়ে যেটুকু উন্নয়ন কাজ করে এগিয়ে নিয়েছেন তা চোখের সামনে রয়েছে। আরিফুল হক চৌধুরী তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদে শেষ সময়ে এসে সিলেট সিটি করপোরেশনকে আয়তনে আরও বৃদ্ধি করার কাজে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তিনি সিলেটের মানুষের বিনোদনের জন্যে শহরের বিভিন্ন এলাকায় দৃষ্টিনন্দন ওয়াক-ওয়ে করে দিয়েছেন। শহরের প্রাণকেন্দ্রে ধোপা দিঘি যা পরিনত হয়েছিলো অপরিচ্ছন্ন এক ডোবায়, যেখান থেকে মশা ছড়িয়ে পরতো আশেপাশের বিভিন্ন বাসা, হোটেল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে, সেখানে আরিফুল হক চৌধুরী এমন এক কর্মপরিকল্পনা সাজিয়েছেন, এখন দীঘিটি প্রকৃতঅর্থেই নগরবাসীর উপকারী ভূমিকায় ফিরে এসেছে। সিলেটের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য বিগত দশ বছরে সিলেট সিটি করপোরেশনের পক্ষে অনেক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এখানে অল্প পরিসরে সবকিছু বর্ণনা করা যায় না। তারপরও নগরের রয়েছে আরও বহু সমস্যা। এরইমধ্যে আমরা পেয়েছি নতুন মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। আমরা অল্প সময়ে দেখেছি সিলেটে বন্যার সময় বিদ্যুৎ সচল রাখা ও অন্যান্য কাজে তিনি ঝাপিয়ে পড়েছেন। এছাড়াও মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী শেষ পর্যন্ত যে সময় সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র ছিলেন সে সময়ে নতুন মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী অনেক অনুষ্ঠানে একসাথে সুন্দর ভাবে উপস্থিত হয়েছেন। আমরা দেখেছি সিলেটে একটি সুপার সপ উদ্বোধন করতে গেছেন দুই মেয়র একসাথে এবং সেখানে মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী অত্যন্ত বিনয়ের সাথে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে বড়োভাই হিসেবে সম্বোধন করে বক্তব্য রাখছেন। এরপর মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী দায়িত্ব নেয়ার পরে আরিফুল হক চৌধুরীর বাসায় সপরিবারে নিমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন। এখানে একটা চমৎকার সম্প্রীতির বার্তা পাই। আমাদের সমাজে একটি বাজে কথা প্রচলিত আছে, ‘পূর্ববর্তী রাজা একটি গাছের ছাড়া রোপণ করে গেলে পরবর্তী রাজা এসে সেই ছাড়া গাছের যত্ন নেন না। তাই আমাদের উন্নয়ন বারবার পিছিয়ে যায়।’ তবে আরিফুল হক চৌধুরী এবং আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী যে সম্প্রীতির উদাহরণ সিলেটবাসীর সামনে রেখেছেন, আমরা আশাবাদী, এখানে আমাদের সিটি করপোরেশনের উন্নয়ন ধারাবাহিক গতিতে এগুবে। পাঁচ বছরের শেষে আবার নির্বাচন হবে। এভাবেই নতুন সময়ে নতুন করে নতুন মেয়র নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে আসবেন। কিন্তু উন্নয়ন চলবে প্রকৃষ্ট গতিতে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে, এমনটাই সিলেটবাসীর প্রত্যাশা।
সদ্য বিদায়ী মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেছেন, সিলেটের ও সিলেটবাসীর উন্নয়নে তিনি মেয়র না-থাকলেও পাশে থাকবেন। আমরা আশাবাদী, নতুন মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী মহোদয় নিজের গতিশীলতার সাথে সাবেক মেয়রের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের উন্নয়ন ধারাবাহিক ভাবে করে যাবেন যাতে করে সিলেটের মানুষ নতুন মেয়রকে দলমত নির্বিশেষে আপন করে নিবে। পরিশেষে নগরবাসীর কাছে প্রত্যাশা সিলেট সিটি করপোরেশনের সকল উন্নয়ন কাজে মেয়র ও কাউন্সিলরগণের সকল ভালো উদ্যোগে সহযোগিতা করবেন।।
#
লেখক _ কলামিস্ট