মোহাম্মদ আব্দুল হক
বীথি শব্দটি বাংলা ভাষায় মুখে ততোটা স্বাভাবিক উচ্চারিত না হলেও বিশেষ করে সাহিত্যে এর বহুল ব্যবহার লক্ষণীয়। গানে এর ব্যবহার হয়ে আসছে সেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় থেকে। এর অনেক অর্থ থাকলেও আমরা যে অর্থটি সহজে বুঝে যাই, তা হলো দুই পাশে গাছ গাছালি বা বৃক্ষরাজি এবং তার মাঝে দিয়ে চলা পথ। আরেকটি শব্দ আমাদের বাংলাভাষায় আছে ‘তপোবন’।
এই তপোবন শব্দটি মুখে মুখে উচ্চারিত হয়না। তবে কবিতায় এবং নাটকে এর প্রচলন বেশ জোরোশোরেই হয়ে থাকে। এই তপোবন শব্দের অর্থ বুঝে বাক্যে প্রয়োগ ঘটালে অনেক সময় বাক্যটি প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। জানা আছে তপোবন অর্থ হলো, মুনি-ঋষিদের আশ্রম, যে বনে মুনি-ঋষিগণ তপস্যার জন্য বসবাস করেন। স্বাভাবিক কারণেই আমরা জানি আশ্রম শব্দটি বহুল পরিচিত এবং এর অর্থ হলো সংসার ত্যাগী সাধু সন্ন্যাসীদের বাসস্থান, সাধনা বা শাস্ত্রচর্চার জন্য নির্দিষ্ট স্থান; মঠ; আস্তানা; আখড়া বা হুজুরা।
এখন যদি ‘বীথি’ এবং ‘তপোবন’ শব্দ দুটি যুক্ত করে বলি বিথীর তপোবনে, তাহলে উপরোক্ত আলোচনা থেকে পাওয়া অর্থে আমরা বুঝতে পারি দুই পাশে গাছের সারি এবং মাঝের চলা পথে মুনি-ঋষিদের আস্তানা। কথা হলো ঠিক অাস্তানা বা আশ্রম যে অর্থ প্রকাশক অর্থাৎ যা বিশেষ ধ্যানের জায়গা সেটি নিশ্চয় কোলাহল মুক্ত হয় এবং তা কখনো চলাচলের পথে গড়ে উঠেনা। হ্যাঁ নানান রকম গাছের সারি ডিঙিয়ে কোনো নিরব তপোবনে পৌঁছুতে আপত্তি নেই। তাই বলে মানুষের চলাচলের পথেই প্রকৃত মুনি-ঋষিগণ ধ্যানে বসেছেন এমন কথা কখনো শুনা যায়না। আবার যদি পথটুকু পাড়ি দিয়ে তপোবন বা আশ্রমে গিয়ে পৌঁছা বুঝানো হয়, তাহলে নিশ্চয় সেই আশ্রম ধ্যানে মগ্ন থাকার কোলাহল মুক্ত স্থান। সেদিক থেকে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশের দুই দিকে সারি সারি নারকেল গাছ থাকলে এবং সেই গাছের সারিকে ও কলেজকে প্রাধান্য দিয়ে ওই চলাচলের ব্যস্ত পথকে ‘নারকেল বীথির তপোবন’ বলা সমীচীন মনে করিনা। এমনটি কোনো স্মারকগ্রন্থের নামকরণ করলে অনেকেই ব্যাখ্যা না করে মেনে নিয়েছেন বলে যে কেউ-ই নামকরণের যৌক্তিকতা খুঁজবেনা এমনতো নয়।
ভূমিকা আর দীর্ঘ করতে চাইনা। সরাসরি চলে যাচ্ছি একটি প্রকাশনার দিকে। সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের প্রতিষ্ঠার ৭৫ বছর পূর্তি উদযাপন ও প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী পুনর্মিলনী ২০২০ অনুষ্ঠিত হয়েছে দুই দিন ব্যাপী নানান অগোছালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ৭ ও ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ খ্রীষ্টিয় সালে। অনুষ্ঠান মালা নিয়ে এখানে আলোচনা উদ্দেশ্য নয়। আমি এখানে আলোকপাত করছি এ উপলক্ষ্যে প্রকাশিত স্মারকগ্রন্থ বা ম্যাগাজিনের নামকরণ এবং এর ভিতরের লেখা নিয়ে। ম্যাগাজিনটির নাম ‘নারকেল বীথির তপোবনে’ যা সহজে অর্থ বোধগম্য হয়না ; কিন্তু খুঁজলে দেখা যায়, যে প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে এই নাম দেয়া হয়েছে তা কোনো ভাবেই ওই বিদ্যালয়ের চরিত্রের সাথে যায়না। তাই ভূমিকায় আমি পরোক্ষ ভাবে এমন নাম করণের তীব্র বিরোধীতা করেছি।
কারণ, ওই প্রকাশিত ম্যাগাজিনে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যতো স্মৃতিচারণ মূলক রচনা পড়েছি তার কোনোটিতেই প্রবেশ পথ, কলেজের বারান্দা বা প্রাঙণ কিংবা শ্রেণিকক্ষ কোথাও কোলাহল মুক্ত পরিবেশের চেহারা ফুটেনি। প্রায় সকলেই ছাত্র রাজনীতির হৈ চৈ তুলে ধরেছেন। আমি নিজেও ওই কলেজে শিক্ষার্থী ছিলাম, দেখেছি মিছিলে মিছিলে প্রকম্পিত হতো সারা কলেজ ক্যাম্পাস। প্রকাশিত বই বা ম্যাগাজিন বা স্মরণিকা বা স্মারকগ্রন্থ যাই বলি না কেন এটি পড়ে জানতে পেরেছি নামকরণে ভূমিকা রেখেছেন কবি মোহাম্মদ সাদিক। তিনি সুনামগঞ্জের গৌরব-সন্তান এবং আমি তাঁর কাব্য প্রতিভায় মুগ্ধ একজন। হ্যাঁ, ভুল হতে পারে। সকলেরই কিছু সীমাবদ্ধতা থাকে। বড়োবড়ো কবি ও লেখকদের লেখায় ভুল ধরা কষ্টসাধ্য। তারপরও একথা নিশ্চিত করে বলা যাবেনা যে, তাঁরা ভুলের বাইরে। হ্যাঁ, আমরা অনেকেই প্রতিষ্ঠিত লেখকদের প্রেমে এতো বেশি মজে যাই যে তাঁদের ভুলকে ভুল মনে হয়না বা ওইভাবে ভাবতে চাইনা।
আপন প্রেমিকা কালো বর্ণের বা শ্যামলা হলেও প্রেমিকের কাছে সে অতুলনীয়া এবং পরমা সুন্দরী। ঠিক তেমনি আমাদের বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ যখন বলেন, ‘ভেঙে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে।’ কোনো বেরসিক যদি তখন বলে ফেলে যে, তালাবদ্ধ কাউকে মুক্ত করে বের করে নিতে হলেতো তালা ভাঙতে হবে, চাবি ভাঙলে কিভাবে তা সম্ভব? তখন রবীন্দ্র প্রেমিকরা ঠিক বুঝে বা নাবুঝে জনসম্মুখে নানান যুক্তি দাঁড় করিয়ে বুঝাতে চান রবীন্দ্রনাথ যে অর্থে বলেছেন তা আমরা বুঝতে পারিনা বলেই আমাদের কাছে তা ভুল মনে হচ্ছে। আমাদের জাতীয় কবি বিদ্রোহী কবি শত ও হাজার কবিতা ও গান রচনা করে গেছেন। তাঁর অন্ধভক্তের সংখ্যাও হাজার হাজার। এখন যদি আমি বলি তাঁর কোনো একটি গানে তিনি ভুলভাবে একটি শব্দের প্রয়োগ ঘটিয়েছেন এবং আমরা তা না বুঝেই শুনে মুগ্ধ হই, তাহলে নজরুল প্রেমিকরা নিশ্চয় আমাকে সয্য করবেন না। তবু সাহস করে এখানে বলেই ফেলি। কাজী নজরুল ইসলাম একটি গানে বলেছেন, ‘একি অপরূপ রূপে মা তোমায় হেরিনু পল্লী-জননী। / ফুলে ও ফসলে কাদামাটি জলে ঝলমল করে লাবনি।’ এখানে পুরো গানে কবি বাংলার পল্লীর প্রসংশিত রূপে মুগ্ধ হয়েছেন বুঝিয়েছেন। অথচ ‘অপরূপ’ শব্দটি নিশ্চিত নেতিবাচক অর্থ প্রকাশক। বাংলা ভাষায় ‘অপ’ যোগে যতো বহুল প্রচলিত শব্দ পাই, যেমন – অপসংস্কৃতি, অপকৌশল ইত্যাদি শব্দের কোনোটি-ই ইতিবাচক অর্থ প্রকাশক নয়। তেমনি নজরুলের ওই গানে উল্লিখিত ‘অপরূপ’ শব্দটিও ভুলভাবে চলে এসেছে মনেকরি।
এখন সংক্ষেপে বলছি, প্রকাশিত ‘নারকেল বীথির তপোবনে’ নামক স্মরণিকায় সকল রচনা মূলত: স্মৃতিচারণ মূলক। হ্যাঁ, এমন গ্রন্থে প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী স্মৃতিচারণ করবেন ঠিক আছে। তাই বলে পুরো বইটির অধিকাংশ লেখা-ই কেন স্মৃতিচারণ মূলক হবে। যে গ্রন্থটি ছুটবে সারা বাংলাদেশে এবং চলবে হাতে হাতে বহুযুগ ধরে সেই গ্রন্থে নিশ্চয় অধিক লেখা সুনামগঞ্জের গৌরব গাঁথার মতো করে তুলে ধরলে এবং সেই সাথে কলেজ প্রতিষ্ঠার ইতিহাসের পাশাপাশি সুনামগঞ্জের গৌরবময় ঐতিয্য তুলে ধরলে তা হতো যথাযথ এবং সমৃদ্ধ। অনেকেই লিখেছেন এবং সবার লেখা পড়েছি। ‘এক চিরঞ্জীব বিদ্যাপীঠ’ নামে হাসান শাহরিয়ার একটি সরস পূর্ণাঙ্গ লেখা লিখেছেন যা ইতিপূর্বে বাংলাদেশের প্রাচীনতম সাহিত্য পত্রিকা ‘আল ইসলাহ’ তে কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের প্রকাশনার ৮৭ বর্ষের সংখ্যায় ছাপা হয়েছে। এতে ইতিহাস ও ঐতিয্য মোটামুটি ভাবে ফুটেছে। সিনিয়র আইনজীবী ও কলামিস্ট হোসেন তওফিক চৌধুরী ১৯৬১ থেকে ১৯৬৫ খ্রীষ্টিয় সাল পর্যন্ত পড়াকালীন সময়ের স্মৃতিচারণ করার পাশাপাশি কিভাবে কলেজের ভূমি পাওয়া গেল এবং প্রথম দিকে কিভাবে কলেজের জন্য টাকা জোগাড় হলো তার উল্লেখ করেছেন। তাঁর লেখাটি ভালো একটি উপস্থাপনা। সঞ্চিতা চৌধুরী ‘ফেলে আসা দিনগুলি’ তে সূচনা করেছেন চমৎকার। বজলুল মজিদ চৌধুরী (খসরু) সুনামগঞ্জের এক ঐতিয্য সুনামগঞ্জ সরকারি জুবিলী স্কুলের প্রসংগ টেনে বিজ্ঞতার পরিচয় দিয়েছেন। তবে তাঁর রচনার নাম ‘স্মৃতিতে সুনামগঞ্জ কলেজ’ খুব একটা প্রাণ পায়নি, কেমন যেন সাদামাটা হয়েছে। তিনি গবেষক এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা, আমাদের গৌরব। লেখক সুখেন্দু সেনের ‘ঝরা সময়ের কোলাজ’ এ শুরুটা আকর্ষণীয় এবং পুরোটা ভালো লাগার মতো। কবি ও গবেষক মোহাম্মদ সাদিক মঞ্চে সবসময় স্মার্ট এবং এখানে তাঁর রচনা ‘কলেজ স্টুডেন্ট’ অবশ্যই সময়ের স্মার্ট শিরোনাম। বিষয়বস্তু ভালো হলেও উপস্থাপনা ততোটা প্রাঞ্জল হয়নি। তিনি দেশের বরেণ্যজন ব্যস্ত মানুষ, এখানে তাড়াহুড়ো করেছেন কি-না জানিনা। কবি আশরাফ আহমদের ‘আমার সুনামগঞ্জ কলেজ’ পড়ে তাঁর হৃদয়ের কথা জেনে ভালো লেগেছে।
ইমানুজ্জামান মহী দীর্ঘদিন যাবত প্রবাসে থাকলেও খুব সুন্দর করে একটু ভিন্ন স্বাদের লেখা উপহার দিলেন। তাঁর রচনা ‘অঘোষিত স্বাধীনতার ভাবনাহীন সময়’ এ কয়েকটি অনুচ্ছেদ আছে। এরমধ্যে সীতেশ স্যারকে নিয়ে ‘গ্লানি তাড়া করে…’ খুবই মনে রাখার মতো একটি পর্ব। লিখেছেন শহীদুজ্জামান চৌধুরী এবং আলহাজ্ব সৈয়দ সাদেকুজ্জামান। স্মৃতিময় ভালো রচনা। সালেহা বেগমের ‘সারাবেলা, শেষবেলা’ সহজ ভাষায় মনকাড়া এক নিবন্ধ। সে সময়ের অনেক ছাত্রছাত্রিদের নাম এবং সহজ মিলেমিশে থাকার কথা এসেছে তাঁর লেখায়। স্মরণিকার নাম ভূমিকার কাছাকাছি শিরোনাম ‘নারিকেল বীথির তপোবনে’ লিখেছেন জেসমিন আরা বেগম। তিনি সুনামগঞ্জের আরেক গৌরবোজ্জ্বল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি সতিশ চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়কে স্মরণ করে চলে এসেছেন কলেজে এবং ক্লাসরুমে মজার ঘটনা এমনভাবে উপস্থাপন করেছেন কোনো রসিক পাঠক এর মজা না নিয়ে পারেনা। স্বপন কুমার দাস রায় ‘এইতো সেদিন’ এ কলেজ সংশ্লিষ্ট এক টুকরো ইতিহাস ও ঐতিয্যের কথা বলতে চেয়েছেন। ধ্রুব এষ একজন প্রখ্যাত প্রচ্ছদ শিল্পী। তিনি এখানে ‘আমার নীল চাদর’ লিখে প্রমাণ করলেন তিনি একজন সুসাহিত্যিক। মলয় কান্তি চক্রবর্তী রাজু ও কল্লোল তালুকদার চপল লিখেছেন স্মৃতি থেকে। ‘নৈসর্গিক নব্বই’ নামে রচনাটিতে এনাম আহমদ ভালো-ই লিখেছেন। তার লেখায় কলেজের লেডিস কমন রুমকে স্মরণ করে আকর্ষণীয় করেছেন। হিরন্ময় রায় এর ‘স্মৃতির ডায়েরিতে’ রচনাটি পড়েছি। বয়সে এখনো তরুণ, আশাকরি লিখতে থাকলে তাঁর লেখা আরো উন্নত হবে। একশ তম পৃষ্ঠায় শুরু হওয়া লেখাটি শামস শামীমের ‘মুক্তিযুদ্ধে সুনামগঞ্জ কলেজের ছাত্রদের গৌরবগাথা’ একটি ভিন্নধর্মী রচনা এবং গবেষনা মূলক। লেখকদের কথা শেষ করছি প্রথম ও শেষ লেখাটির উল্লেখ করে। প্রথম লেখাটি শিশু সাহিত্যে বাংলা একাডেমী পুরষ্কারপ্রাপ্ত ঝর্ণা দাস পুরকায়স্থের ‘জুঁই করবীর দিন’ একটি গল্প এবং খুবই উপভোগ্য। তবে এ ধরণের প্রকাশনায় সাধারণত গল্প শেষ দিকেই ছাপানো হয়। একেবারে শেষ লেখা ‘Sunamganj College – My First Employer’ লিখেছেন Shahagir Bakth Faruk’. তিনি সুনামগঞ্জ কলেজের একজন সাবেক শিক্ষক এবং সুনামগঞ্জের মেধাবী সন্তান। বর্তমানে প্রবাসী এবং তিনি “Brick Lane” ও “Food Hygiene” নামে দুটি গ্রন্থের লেখক। লেখাটিতে তিনি কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন। আমাদের ওই কলেজে পড়ুয়া শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের বীর সৈনিকদের জন্যে কলেজ গেইটে নাম উল্লেখ করে গেইটকে আধুনিক করার ইঙ্গিত করেছেন। এমন একজন সুপ্রতিষ্ঠিত লেখকের একটি গুরুত্ববহ রচনা একেবারে পিছনে ছাপিয়ে সম্পাদনা পরিষদ যথেষ্ট দুর্বলতার পরিচয় দিলেন। সেই সাথে এ কথাও বলছি, লেখক যদি তাঁর রচনাটি বাংলা ভাষায় লিখতেন তাহলে তা সবার পক্ষে বুঝতে সহজ হতো। আমি নিজেও বুঝার জন্যে অন্য আরেক জনের সহযোগিতা নিয়েছি। আমি একটি লেখা মেইল করেছিলাম একাধিকবার। যার মধ্যে সুনামগঞ্জ কলেজসহ সুনামগঞ্জের নামকরণের ইতিহাস এবং সাহিত্য ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে সুনামগঞ্জের গৌরবময় ঐতিয্যের চিত্র তুলে ধরেছিলাম। কিন্তু তা ছাপা হয়নি। কেন ছাপা হলোনা তার ব্যাখ্যার আর প্রয়োজন নাই। অনেক লেখা ছাপা হলো অথচ সুনামগঞ্জের সুনামধন্য মরমি কবি হাসন রাজা সহ কবি মমিনুল মউজদিন, নাসরিন আবেদিন, মুনমুন চৌধুরী, রোকেস লেইস, মুতাসিম আলী, ইশতিয়াক রুপু, বাবর বখত, সাব্রী সাবেরিন, সহ আরো যারা দেশে বিদেশে সুনামগঞ্জকে তুলে ধরেছেন বিভিন্ন ভাবে এমন কয়েকজনের কবিতা দুটি পাতায় স্থান পেলে স্মরণিকাটি একটি বর্নিল বাগানের মতো হতো। সাহিত্য এবং ঐতিয্য মিলিয়েইতো সুনামগঞ্জের গৌরব, যা তুলে ধরলে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের কাছে সুনামগঞ্জ কলেজের পাশাপাশি পুরো সুনামগঞ্জকেই আকর্ষণীয় করে তুলে ধরা যেতো। সেদিক থেকে দুই বছর ব্যাপী প্রস্তুতির শেষটা সাদামাটা ভাবে উপস্থাপিত হলো। হ্যাঁ, ভুল হয়ে যায়, মন ও মননের সীমাবদ্ধতা সকলেরই থাকে। সম্পাদনা পরিষদ ভুলের উর্ধে নয়।
একেবারে শেষদিকে এসে স্বাভাবিক ভাবেই আমরা স্মরণিকার পুরো শরীরজুড়ে পাই প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীর ছবির অ্যালবাম। আরো আছে উদযাপন পরিষদ এবং বিভিন্ন কাজের জন্যে উৎসব উদযাপন পরিষদ, ঢাকা কমিটি ও সিলেট কমিটি। আছে অল্প কয়েকটি পুরনো দিনের ছবি। বুঝিনা এমন একটি গৌরবের বিদ্যাপীঠে কতো উৎসবতো এই ত্রিশ বছর আগেও হয়েছে যেখানে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর এলেন এবং ডাকসু ভিপি সুলতান মনসুর এলেন। এসবের কোনো পরিস্কার ছবি ছাপলে নিশ্চয় গৌরব বাড়তো। কিন্তু তা হয়নি। আর বাকিটুকু উদযাপন কমিটির বিভিন্ন সময়ের বহু বহু ছবিতে ঠাসা। সবার প্রতি ভালোবাসা।।
মোহাম্মদ আব্দুল হক: কলামিস্ট, কবি ও প্রাবন্ধিক