সোমবার, ৭ অক্টোবর ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ২২ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কামরানঃ অনেক স্মৃতি, অনেক কথা




বামে বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ও ডানে লেখক

এমদাদ চৌধুরী দীপু

কামরান। একটি নাম। অনেক দীর্ঘ পরিচিতি।সিলেটের সাবেক মেয়র এই পরিচয় বিশ্বজুড়ে। তবে যারা সিলেটের তাদের কাছে বড় পরিচয় একজন আপনজন হিসেবে। জনতার কামরান,জনমানুষের কামরান। পরিচয়ের দীর্ঘ যে তালিকা মরহুম কামরানের তার একটি হচ্ছে মিডিয়াবান্ধব কামরান।সে কারনে তাকে নিয়ে অনেক স্মৃতি,অনেক কথা।
আমার স্মৃতি যদি আমার সাথে প্রতারনা না করে তা হলে ২০০২ সালে ঈদুল ফিতরের পরে কামরান ভাইর বাসায় ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করতে গেছি। তখন আমি আমারসিলেট নামে একটি ম্যাগাজিনের সম্পাদক। ঐ ম্যাগাজিনে রাজনৈতিক নেতা এবং জনপ্রতিনিধিদের ঈদ পালন নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। মেয়র কামরান ঈদের দিন ঈদের নামাজের পর তার মা বাবার কবর জিয়ারত করেন এমন তথ্য সংযুক্ত হয়েছে। এটি পড়ে কামরান ভাই বললেন ভাই দীপু আমার মা এখনো জীবিত,আমি আমার বাবার কবর জিয়ারতে যাই। আমি খুব লজ্জাবোধ করলাম। তবে একজন নেতার প্রতিকৃতি কামরান ভাই সেটি উদ্দেশ্যমূলক নয়,এবং অনিচ্ছাকৃত ভুল হিসেবে মেনে নিলেন ।আমরা কুশল বিনিময় করলাম,এবং চলে এলাম । এর পর এই কামরান ভাই যখন জেল থেকে নির্বাচন করলেন তার সেই মা নির্বাচনী প্রচারনায় ছেলের জন্য ভোট চাইতে দেখলাম। কামরান ভাইর মার প্রসঙ্গ যখন আসতো তখনই আমার সেই প্রতিবেদনের কথা মনে হতো। এক এগারোর সময় কামরান ভাই জেলে থেকে মায়ের মৃত্যু সংবাদ পান,প্যারোলে মুক্তি পেয়ে অংশ নেন মায়ের জানাজায়,আবারো আমার মনে পড়ে সেই মায়ের কথা। এই অনুভুতি যখন লিখছি তখন কামরান ভাই সিলেটের মানিকপীর (রহঃ) গোরস্তানে তার মায়ের পাশেই সমাহিত। কামরান ভাই চির বিদায় নিয়েছেন ।স্মৃতির ভান্ডার রেখে গেছেন তার দীর্ঘ জীবনে লাখো মানুষের হৃদয়ে।
২০০২ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ক্ষমতায়। আমারসিলেট ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ প্রতিবেদন সাবেক অর্থমন্ত্রী মরহম এম সাইফুর রহমানের ছবি দিয়ে। ম্যাগাজিনের উদ্বোধনী সংখ্যা। মোড়ক উম্মোচন করবেন মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। কামরান ভাই আসলেন,শুধু এইটুকু বললেন যে আমি আওয়ামীলীগের নেতা আর সাইফুর রহমানকে নিয়ে প্রচ্ছদ করা ম্যাগাজিনের উদ্বোধন,আমার জন্য বিষয়টি কিছুটা বিব্রত হওয়ার,তবে তিনি সেটি করলেন। জনতার কামরান ছিলেন অসম্ভব জনপ্রিয় আর সেটি প্রমানিত হলো সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার ইতিহাস সৃস্টির মাধ্যমে। আমারসিলেট ম্যাগাজিন কামরানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে কার্পন্য করেনি,ম্যাগাজিনের দ্বিতীয় সংখ্যায় ছিল মেয়র কারানকে নিয়ে প্রচ্ছদ প্রতিবেদন। সেই প্রতিবেদনে কামারন বলেছিলেন তিনি মানুষের মনে স্থান করে নিতে চান,এবং তার যখন মৃত্যু হবে তখন যেন প্রচুর মানুষ তার জানাজায় অংশ নেয়,সেটিই তার শেষ ইচ্ছা। করোনার কারনে আমি জানিনা কামরান ভাইর অন্তিম ইচ্ছা কতটুকু পূরন হয়েছে। তবে এই মহামারীতে পুরো সিলেট কামরানের জন্য কাদছে এইটুকু দাবী করে বলতে পারি, লক্ষপ্রানের মাঝে কামরান স্থান করে নিয়েছেন সেটি বলতে পারি।
সিলেটের রাজনৈতিক অঙ্গনে শান্তি,সমপ্রীতি,সৌহার্দ্য প্রতিষ্টার প্রতীক ছিলেন কামরান।বর্তমান মেয়র নয় অথচ তার মৃত্যুতে মানুষের প্রতিক্রিয়া বর্তমানের মেয়রের মতই। ২০১৩ সালে বর্তমান মেয়র আরিফুল হকের সাথে পরাজয়ের পরও সাবেক মেয়র কামরান জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন না। এছাড়া মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কামরান জনগনের সাথেই ছিলেন। জনপ্রতিনিধির চেয়ারে না থাকলেও জনগনের সাথেই থাকতে হয় সেটি শিখিয়ে গেছেন কামরান।
প্রবাস ফেরত সাধারন একজন কামরানের অসাধারন হয়ে উঠা,জনতার নেতা হয়ে উঠা,সাধারন ওয়ার্ড কমিশনার থেকে মেয়র,এবং ঐতিহ্যবাহী শীর্ষ রাজনৈতিক দল আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতা হয়ে উঠা রাজনীতি যারা করেন এবং ভবিষ্যতে করবেন তাদের জন্য অধ্যয়নের বিষয় হবে,তার জীবনী হবে রাজনীতি ” র্চ্চার পাঠ।
চারদলীয়জোট সরকারের শেষ সময়ে মেয়র কামরানকে আমরা দেেেখছি পুলিশ বেস্টনীর মাঝখানে মিছিল করতে। তখন কামরানের আগে, পিছনে পুলিশ থাকতো,মাঝে মাঝে মিছিল থেকে পুলিশ ুদুৃএকজনকে ধরে নিয়ে যেত,তবে মাঠ থেকে সরে যেতেন না কামরান। এক এগারোর সময় কুমিল্লা কারারগার থেকে সিলেটের আদালতে নিয়ে আসা হতো কামারনকে। কুমিল্লা কারাগারে নামাজের ইমামতি করতেন কামরান,তার পিছনে নামাজ পড়তেন সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের ছেলে নাসের রহমান।বাবা সাইফুর রহমানের কাছে কামরানের অনেক প্রশংসা করতেন নাসের রহমান, এও বলতেন কামরানের মত নেতা বিএনপিতে প্রয়োজন। আর সেই গল্প আমাদের শুনিয়েছিলেন এম সাইফুর রহমান। সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি দৈনিক জালালাবাদ সম্পাদক মুকতাবিস উন নুরের সাথে এক এগারোর সময় কয়েকজন সাংবাদিক সাইফুর রহমানের ঢাকার বাসায় গিয়েছিলাম দেখা করতে। সে সময় নানা আলাপচারিতার ফাকে মরহুম বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের প্রশংসা শুনেছি মরহুম সাইফুর রহমানের মুখে।
একজন মানুষ কামরান, মানুষকে ভালোবাসা দিতে এসেছিলেন,ভালোবাসার জালে আবদ্ব করেছেন সবাইকে। মানুষের ভালোবাসার মাঝেই তার মৃত্যু হয়েছে। তাকে ঘিরে অনেক স্মৃতি অনেক কথা মানুষ শুনবে। আর শুন্যতা অনুভব করবে। তার কর্মময় জীবন এবং মানুষের সাথে সু-সম্পর্কের ঈর্ষনীয় যোগ্যতা তাকে স্মরনীয় করে রাখবে অনন্তকাল। কামরানের ভালো কাজগুলোকে স্মরন করে একটি বিদ্বেষহীন, বিভাজনহীন সমাজ গঠনে আমরা ভুমিকা রাখবো এই প্রত্যাশা সবার প্রতি। সিলেটের সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের বিদেহী আতœার মাগফেরাত কামনা করছি। তার জীবনের সকল গুনাহ মাফ করে আল্লাহ তাকে জান্নাতবাসী করুন সেই দোয়া করছি।

লেখকঃ বিশিষ্ট সাংবাদিক,

সাবেক নির্বাহী সম্পাদক, দৈনিক সিলেট সুরমা।

সম্পাদক: শাহ সুহেল আহমদ
প্যারিস ফ্রান্স থেকে প্রচারিত

সার্চ/খুঁজুন: