মোহাম্মদ আব্দুল হক
সাংবাদিক ও কলামিস্ট মাসুদা ভাট্টি ‘বাংলা ট্রিবিউন’ এ ১৭ মে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান সম্পর্কে ‘আনিসুজ্জামান: একটি বাঙালিবৃক্ষের বিদায় ও সামনের অতিকায় অন্ধকার’ নামে এক প্রবন্ধ লিখেছেন। এতে তিনি আমাদের দেশের একজন সুনামধন্য মানুষের নানান কীর্তি সংক্ষেপে তুলে ধরেছেন। আমাদের দেশ ও সামাজিক অবস্থা ‘ সামনের অতিকায় অন্ধকার’ এ তলিয়ে যাবে তিনি ভাবছেন। আমি পড়েছি। তবে আমি মনেকরি না যে একজন আনিসুজ্জামান সাহেব চলে গেছেন বলেই আমরা বাতিহীন হয়ে গেছি। যাই হোক দুটি শব্দের প্রতি আমি মনোযোগী পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। অত্যন্ত সম্মানিত মাসুদা ভাট্টি বিভিন্নভাবে বুঝাতে চেয়ে প্রীত হয়েছেন যে, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান একজন ‘অসাম্প্রদায়িক’ মানুষ ও ‘বুদ্ধিমান’ মানুষ ছিলেন। আমি তাঁর কথা সরাসরি মেনে নিচ্ছি না।
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান আল্লাহর হুকুমে ১৪ মে ২০২০ খ্রীষ্টিয় সালে তিরাশিবছরের ইহকালীন জীবন পার করে মৃত্যুবরণ করেছেন। তিনি কি স্বঘোষিত নাস্তিক ছিলেন? আমি জানিনা। আমি একজন সু-সাম্প্রদায়িক মুসলিম হিসেবে না-জেনে অপ-প্রচার করতে বা কারো-লজ্জা প্রকাশ করতে আগ্রহী নই। তবে এ-কথা সত্য তিনি মাতৃভাষা বাংলাভাষার মর্যাদা রক্ষার্থে এবং দেশমাতৃকাকে ভালোবেসে অনেক বড়ো অবদান রেখেছেন। যদিও অনেকেই আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় কেবল জীবন, সম্পদ ও জায়গার দলিল নিয়ে আত্মরক্ষা করেছেন। হ্যাঁ, তারপরও তারাও ভালো করেছেন ; অন্তত রাজাকার, আলবদর, আলসামস্ হননি।
বলছিলাম আনিসুজ্জামান সাহেব তাঁর জীবদ্দশায় বহু জ্ঞানার্জন করেছেন এবং দেশ-বিদেশে সম্মানিত হয়েছেন, বাংলাদেশকে তুলে ধরেছেন। তাই এদেশে ও বিদেশে অনেকে তাঁকে ‘বুদ্ধিমান’ বলেন। কিন্তু দেখুন, প্রত্যেকের একেকটি ধর্ম-বিশ্বাস আছে। সেখান থেকে প্রত্যেকে চিন্তা করে কথা বলবে। একজন হিন্দু ধর্মের মানুষ তার ধর্ম মেনে-ই মুসলিমের সাথে উঠা-বসা করেন। তেমনি একজন মুসলিম নিজ ধর্ম-বিশ্বাস নিয়ে সময়ে অর্জিত জ্ঞান দ্বারা অপরাপর ধর্মের মানুষের সাথে সামাজিক, রাষ্ট্রিক ও বৈশ্বিক কাজ চালিয়ে নেন। আমি একসময় ‘অসাম্প্রদায়িক’ শব্দটিকে অনেকের মতো-ই ইতিবাচক বুঝে মেনেছিলাম। পরে আমি আমার প্রাপ্ত জ্ঞান দ্বারা বুঝেছি, প্রত্যেক সম্প্রদায়ের মানুষ নিজ নিজ বিশ্বাসে ‘সাম্প্রদায়িক’ এবং এতে দোষের কিছু নেই। আমি আরো বুঝেছি ‘অসাম্প্রদায়িক’ শব্দটি ‘অসামাজিক’ শব্দের ন্যায় সম্পূর্ণ নেতিবাচক। পরে আমি আরো চিন্তা করে দেখেছি প্রত্যেক ধর্মের মানুষকে মিলে চলতে হবে, তাই তাদেরকে নিজ ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা রাখার পাশাপাশি অপর ধর্মকে কোনোভাবেই সরাসরি বা ইঙ্গিতে তিরষ্কার করা যাবেনা। আর এই গুণাবলী অর্জন যে করবে তারজন্যে ইতিবাচক বিশেষণ হবে ‘সু-সাম্প্রদায়িক’ শব্দটি। আমি আমার সময়ে প্রাপ্ত জ্ঞান থেকে নিজেকে একজন ‘সু-সাম্প্রদায়িক’ মনে করি। সেখান থেকে আমি আনিসুজ্জামান সাহেবকে কটাক্ষ করতে পারি না। তবে আমি তাঁকে সরাসরি এক-কথায় একজন ‘বুদ্ধিমান’ বলতে পারি না। কেন? আমি একজন মুসলিম এবং সু-সাম্প্রদায়িক মুসলিম। আমি ইতিপূর্বে একটি নিবন্ধ ‘আমার মনগড়া কথা নয়’ লিখেছি, যেখানে বলেছি – “অর্থ-বিত্তশালী এবং বহু লেখাপড়া জানা সকলেই কিন্তু বুদ্ধিমান নয়। পবিত্র কোরআনের ভাষায় বুদ্ধিমান হলো সে-জন, যে আল্লাহ্ এবং মহানবী সাঃ কে অনুসরণ করে সত্য পথ ধরে ও পরকালে বিশ্বাস করে। এখানে বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় যে, মহানবী সাঃ কে অনুসরণ করার অর্থই হলো আল্লাহকে মেনে সৎ ও বিনয়ী জীবন যাপন করা। এ আমার কথা নয়, এ হলো ধর্ম বিষয়ক পড়া থেকে পাওয়া।” এখানে আনিসুজ্জামান প্রসংগে লেখায় পাঠকের বুঝার জন্যে উক্ত কথাটি তুলে ধরলাম। যারা এর পাঠক তাদেরকে ধন্যবাদ। মাসুদা ভাট্টি আপনাকেও ধন্যবাদ।
আশাকরি, বুঝতে পেরেছেন।।
মোহাম্মদ আব্দুল হকঃ কলামিস্ট কবি ও প্রাবন্ধিক।