মোহাম্মদ আব্দুল হক
শুরুতে বলি মনীষী ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছিলেন, “যে দেশে গুণীর কদর নেই সে দেশে গুণীর জন্ম হয় না।” মোটামুটি প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশুনায় যারা দশ-বারো শ্রেণি পাস করেছেন তারা ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর নাম শুনেছেন বিশ্বাস রাখি। আর যদি শুনে না-থাকেন, তাহলে দুর্ভাগা আপনি নিজে এবং দুর্ভাগা আপনার শিক্ষক। এখানে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহকে আমি পরিচয় করিয়ে দিতে লিখছি না। যারা শিক্ষা ও জ্ঞানকে সম্মানের চোখে অনেক উপরে মূল্য দেন, তাঁরা এই লেখার শুরুতে যে উক্তিটি উল্লেখ করেছি, তা থেকেই উক্ত মনীষী সম্পর্কে একটা ধারণা পেয়ে যান এবং তাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে এক শ্রদ্ধাভাজন জ্ঞানী মানুষের ছবি। তিনি আমাদের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। তাঁর কথার গুরুত্বের ধারে কাছে আমরা আজও পৌঁছুেতে পারিনি। তাই আজকে যেখানে শহর কিংবা গ্রামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছড়াছড়ি এবং বছর বছর এতো এতো পাশ দিচ্ছেন আমাদের দেশের সন্তানেরা, সেখানে আমরা প্রতিদিন খবর পাই, দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করে অধিক পাশ করা লোক কিংবা কম পাশ করা লোক প্রায় সকলকেই চুরিতে, ঘুষ খাওয়াতে , দুর্নীতিতে এবং প্রভৃতি অমানবিক ও অনৈতিক কাজের সাথে জড়িত। আমরা চারপাশে গাড়ি ওয়ালা, বাড়ি ওয়ালা, ক্ষমতা ওয়ালা দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ী ও নেতাদেরকে দেখি এবং এদের সাথেই নমাজ-সমাজ ও মেকি সখ্যতা গড়ে চলি। আর এভাবে চলতে চলতে আমাদের সুন্দর স্বপ্নময় সত্য চেতনা যেনো মরতে বসেছে। এতোসব অসুন্দরের মাঝ থেকে কোনো সুন্দর সম্ভাবনা যদি মাথা তুলে উঁকি দেয়, তাই তখন আমরা মৃতপ্রায় সত্যচেতন নিয়ে বিশ্বাসী চোখে তাকাতে পারি না, আশার আলো দেখে মুখ ফুটে বাহবা জানাতে পারি না। আমরা যেনো ভুলেই গেছি যে, ‘আমরাও পারি’। মুনীর চৌধুরীর নাম শুনেছেন নিশ্চয়। তিনি আমাদের গৌরব সন্তান। তাঁর একটি বিশেষ কীর্তি বাংলা টাইপ রাইটারের কি-বোর্ড (১৯৬৫) উদ্ভাবন, যা ‘মুনীর অপটিমা’ নামে পরিচিত। আমাদের অধিক জনসংখ্যার এই দেশে খাদ্য ঘাটতি নেই বললেই চলে। আমাদের গবেষকরা গবেষণা করে ধানের নতুন নতুন বহু জাত উদ্ভাবন করেছেন। আমরা মনে রাখি না, কেবল বিদেশিদের সফলতায় বাহবা দিই। তাই আমাদের সম্ভাবনা আতুর ঘরেই মারা যায়।
আজকাল আমাদের জ্ঞানী-গুণীদের কথা বেশিক্ষণ পড়তে বা শুনতে ইচ্ছে করে না। অধিক ক্ষেত্রে লক্ষ করা গেছে কয়েক শ্রেণি পাশ করা ছেলে-মেয়েরা আপন জন্মদাতা পিতা-মাতাকেই সম্মান দিতে চায় না, তাঁদেরকে গুরুত্ব দিতে চায় না। এভাবে চলতে চলতে তারা একসময় পরিবারের প্রতি মনোযোগী না হয়ে, পরজন নেতার কথায় অধিক আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। দিনে দিনে পরিবারের মায়া ও সম্মান ভুলে যায়। একসময় তারা নেতা যেমনে চালায় তেমনি চলতে গিয়ে শিকড়হীন হয়ে দিগ্বিদিক ছুটে। এমন যখন অবস্তা, সে ক্ষেত্রে দেশের জ্ঞানীদের নিয়ে দীর্ঘ লেখায় এদের মনোযোগ ধরে রাখা কষ্টসাধ্য। বরং জ্ঞান ও জ্ঞানী, গুণ ও গুণী এসব কথা তাদের কাছে হয়ে ওঠে সন্দেহের ও অবিশ্বাসের। তবে আশার কথা, এরই মাঝে আমাদের কিছু সংখ্যক তরুণ-তরুণী ও মা-বাবা আছেন যারা আলো দেখতে চান, সত্যের বিকাশ দেখেতে চান। নিজেকে ও নিজের দেশকে মর্যাদার আসনে দেখতে চান। এজন্যেই মহামারি করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ভ্যাকসিন আবিষ্কারের খবর পেয়ে আমরা উল্লসিত হয়েছি। গ্লোব বায়োটেকের এই প্রাথমিক সফলতা দেশজুড়ে প্রশংসা কুড়িয়েছে। কিন্তু চারপাশে অবিশ্বাসের বীজ বোনা। তাই অল্প আলোটুকুও অনেকের সয্য হয় না।
সম্প্রতি আবিস্কৃত ভ্যাকসিন নিয়ে আশাবাদী ড. আসিফ মাহমুদ বলেছেন, বড় কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতার শিকার না হলে ট্রায়াল শেষে আগামী ডিসেম্বরেই এই ভ্যাকসিন বাজারে আনতে পারবেন। ড. আসিফ মাহমুদ আমাদের দেশের সন্তান। তাঁর শিক্ষা জীবনের সংক্ষিপ্ত দেখুন – নাম: ড. আসিফ মাহমুদ, শিক্ষাগত যোগ্যতা: SSC: আইডিয়াল স্কুল থেকে বোর্ডে ৭ম স্ট্যান্ড, HSC: নটরডেম কলেজ, BSc: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাইক্রোবায়োলজিতে প্রথম শ্রেণীতে তৃতীয়, MSc: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম। এবং
Dr. Asif Mahmud also has a PhD from Gifu University, Japan. দেখা গেল তিনি শিক্ষা জীবনে মেধার চিহ্ন রেখেছেন। তাঁর এই উদ্ভাবনের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আমরা জানি না। তবে বৈজ্ঞানিক সফলতা ধাপে ধাপে আসে। তাই উৎসাহ যোগাতে হয়।
প্রিয় পাঠক, বেশি লিখলেই যে সবসময় তা সত্য হবে, আর কম লিখলে তা তেমন সত্য নয়; এমনটি নয়। হয়তো এখনই আমরা ভ্যাকসিনে সফলতা পাবো না; কিন্তু রাত পোহালে সফলতা আসবে এই বিশ্বাস রাখি। আমরা পারি, এই বিশ্বাস দৃঢ় করতে দেশের জ্ঞানী, গুণী ও সফল মানুষের কথা জানি। আমাদের সফলতার ইতিহাস আছে। আসুন খোঁজ নিই এবং সফল মানুষদের ঘিরে থাকি। অল্প একটু সফলতার আলোক, সত্যালোক দেখতে পেলে, আসুন আমরা হিংসা বা নিন্দা না করে, হালকা মেজাজে না দেখে; বরং অভিনন্দন জানাই। আমরা পারি, বাংলাদেশ পারে। আমরা যেনো ভুলে না যাই।।
লেখক- কলামিস্ট, কবি ও প্রাবন্ধিক