বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

Sex Cams

যেখানে মুমূর্ষু রোগীকেও পাড়ি দিতে হয় ১২০ কিমি পথ!




সমির মল্লিক, খাগড়াছড়ি:

আট লাখ মানুষের জেলা খাগড়াছড়িতে নেই কোনো নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউ। আইসিইউ সংকটে করোনা আক্রান্ত কোনো মুমূর্ষু রোগীকে জীবন বাঁচাতে পাড়ি দিতে ১২০ কিলোমিটারের দূরের চট্টগ্রামে।

সেখানেও সংকট থাকায় আইসিইউ মেলার কোনো নিশ্চয়তা নেই। আইসিইউ-এর অভাবে মারা যাচ্ছে রোগীরা। করোনা মোকাবেলায় জেলা পর্যায়ে দ্রুত নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) স্থাপনের দাবি জানিয়েছে জেলাবাসী। একই অবস্থা খাগড়াছড়ি, রাঙামাটিসহ তিন পার্বত্য এলাকার।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় দিন দিন বাড়ছে করোনার রোগী। করোনা আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে। তবে করোনা আক্রান্ত মুমূর্ষু রোগীদের চিকিৎসাসেবার জন্য কোনো আইসিইউ সুবিধা নেই। এতে করোনা আক্রান্তদের মাঝে উদ্বেগ বেড়েছে। এতে আক্রান্ত রোগীরা মানসিক শক্তি হারিয়ে ফেলে। করোনা আতংকে থাকা মানুষের মাঝে আইসিইউ সংকট আস্থাহীনতা তৈরি করেছে।

করোনা আক্রান্ত রোগীর অবনতি হলে বিভাগীয় শহর চট্টগ্রামে রেফার করা হয়। এতে পাড়ি দিতে হবে ১২০ কিলোমিটারের পাহাড়ি পথ। দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে আইসিইউ পর্যন্ত যাওয়ায় আগেই রোগীর প্রাণ হারানোর আশঙ্কা রয়েছে। তবে দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে আইসিইউ পাওয়ার কোনো নিশ্চয়তা নেই।

খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার বাসিন্দা জীবন চৌধুরী জানান, ‘এখানে এত মানুষের বসবাস। দিন দিন করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু এখানে ন্যূনতম সুবিধা নেই। আইসিইউ না থাকায় রোগীর প্রাণহানির শঙ্কা রয়েছে। দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে জেলা সদরে আসাও অনেকের জন্য কষ্টসাধ্য। সেখানে চট্টগ্রামে গিয়ে চিকিৎসা নেয়া সম্ভব নয়।

আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংগঠনের কর্মী জনপ্রিয় চাকমা জানান, এখানে দুর্গম এলাকার মানুষ অনেক পথ পাড়ি দিয়ে জেলা সদরে আসেন। এ সব প্রান্তিক মানুষের পক্ষে চট্টগ্রাম বা ঢাকায় গিয়ে চিকিৎসা নেয়া সম্ভব নয়। তাই জেলা সদর হাসপাতালে আইসিইউ স্থাপন করতে হবে।

জেলা রেড ক্রিসেন্টের ভাইস-প্রেসিডেন্ট জসীম উদ্দিন মজুমদার জানান, ‘জেলায় আইসিইউ না থাকায় স্থানীয় বাসিন্দারা প্রাণ হারানোর শঙ্কা রয়েছে। চট্টগ্রামে গিয়ে চিকিৎসা পাওয়া সম্ভব নয়। যেতে যেতে পথে রোগী মারা যাবে। চট্টগ্রাম যেতে সময় লাগে ৩-৪ ঘণ্টা।’

খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক পূর্ণ বিকাশ চাকমা, আইসিইউ না থাকায় করোনা আক্রান্ত রোগীকে বাঁচাতে পারেনি। কিছুদিন আগে শ্বাসকষ্ট নিয়ে একজন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। পরদিন তিনি মারা গেছেন। এ সময়ে মুমূর্ষু রোগীদের অন্য জেলায় রেফার করেও কোনো লাভ হয় না। রোগীর মারা যাওয়ার শঙ্কা বেশি। এখান থেকে চট্টগ্রামে রেফার করা হয় কিন্তু রোগী এই লম্বা পথ পাড়ি দিতে দিতে মারা যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়ে চট্টগ্রামেও প্রচুর রোগী সেখানে গিয়েও আইসিইউ পাওয়ার আশা নেই। তার দাবি এখানে আইসিইউ থাকলে রোগীদের সেবা দেয়া যেত।

জেলায় আইসিইউ স্থাপন জরুরি বলে মনে করেছে জেলা সিভিল সার্জন নূপুর কান্তি দাশ। তিনি জানান, ‘জেলায় যারা করোনায় মুমূর্ষু অবস্থা তাদের চিকিৎসাসেবা দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। আইসিইউ, ভেন্টিলেটর না থাকায় রোগীরা চিকিৎসা পাচ্ছে না। করোনার প্রকোপ যেভাবে বাড়ছে সেটি মোকাবেলায় জেলা সদর হাসপাতালে আইসিইউ স্থাপন অত্যন্ত জরুরি।’

সম্পাদক: শাহ সুহেল আহমদ
প্যারিস ফ্রান্স থেকে প্রচারিত

সার্চ/খুঁজুন: