নিজস্ব প্রতিবেদক:
উর্দুভাষী জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন নাগরিক অধিকার ও তাদের মর্যাদাপূর্ণ ও স্থায়ী পুনর্বাসনের দাবিতে গত ১৭ নভেম্বর তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার মিলনায়তনে’ ক্যাম্পের উর্দুভাষী জনগোষ্ঠীর মর্যাদাপূর্ণ ও স্থায়ী পুনর্বাসন: জাতীয়প্রতিনিধি সমাবেশ ও সংলাপ’ শীর্ষক দিনব্যাপী একটি অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়।
অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে রেফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস্রিসার্চ ইউনিট (রামরু)। অনুষ্ঠানে দেশের আদমজী, সৈয়দপুর, রংপুর, বগুড়া, ঈশ্বরদী, রাজবাড়ী, চট্টগ্রাম এবং ঢাকার মিরপুর ও মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন ক্যাম্পে বসবাসরত উর্দুভাষী জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিগণ অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে উর্দুভাষী জনগোষ্ঠীর নবীন ও প্রবীণ সদস্যগণ তাদের ক্যাম্প জীবনের বাস্তবতা, নাগরিক অধিকার প্রাপ্তি থেকে বঞ্চনার কথা তুলে ধরেন। এ সময় আবাসন থেকে উচ্ছেদ হুমকি, স্থায়ী আবাসনের প্রয়োজনীয়তা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, নারী, শিশু ও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন জনগোষ্ঠীর প্রসঙ্গ উঠে আসে। এরকম প্রতিবন্ধকতা স্বত্তেও তাদের জীবনের সাফল্য ও অগ্রগতি এবং সংগ্রামের কথা তুলে ধরেন তারা।
আয়োজক রামরু’র নির্বাহী পরিচালক সি আর আবরার বলেন, উর্দুভাষীদের বাংলাদেশী নাগরিকত্বের স্বীকৃতির ষোলো বছর পরেওতাদের মর্যাদার সাথে স্থায়ী পুনর্বাসনের বিষয়টি আজও সুরাহা হয়নি। রামরু দীর্ঘদিন ধরে তাদের মানবাধিকার ও নাগরিক অধিকার সমুন্নত করার আন্দোলন করে যাচ্ছে।
অনুষ্ঠানে উর্দুভাষী জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি আশরাফুল হক বাবু বলেন, বিগত ৫০ বছর ধরে আমরা ৮/৮ ফুটের একটি ঘরে মানবেতর ভাবেবসবাস করছি। উচ্চ আদালতের রায় সত্ত্বেও আমরা আজও যথাযোগ্য মর্যাদা পাইনি। কেন আমাদের সাথে এই অন্যায়, যোগ করেন তিনি।
অনলাইনে এ সংলাপে যুক্ত হন প্রবাসী উর্দুভাষী বাংলাদেশী অধিকারকর্মী এবং গবেষক হাসান মোহাম্মদ। তিনি বলেন, উর্দুভাষী বাংলাদেশীদের আইডেন্টিটি সংকট জিইয়ে রাখা হচ্ছে। এই সংকট আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব। এর মধ্য দিয়েই আমরা সমাধানের দিকে এগিয়ে যেতে পারব।
ডা. জাহেদ উর রহমান বলেন, ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য বাংলাদেশের একটি সম্পদ। উর্দুভাষী কমিউনিটির তরুণদের সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে হবে।
মানবাধিকারকর্মী শিরিন হক উল্লেখ করেন, উর্দুভাষী নারীরা বিশেষভাবে বৈষম্যের শিকার। তাদের প্রতি সহিংসতা বন্ধ করে মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপনের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
অধ্যাপক এবং নৃবিজ্ঞানী অবন্তী হারুন বলেন, উর্দু ভাষার অস্তিত্ব বাংলা ভাষার জন্য হুমকি নয়। বরং উর্দু এই দেশের বহু ভাষার বৈচিত্র্যেরই একটি অংশ।
প্রেস ইন্সটিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআইবি)’র মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ বলেন, একজনের অধিকারের আওয়াজ উঠলে অন্যের অধিকারের পথ প্রশস্ত হয়। আমরা যদি মুক্তি চাই সবার মুক্তির কথা বলতে হবে।
সি আর আবরার আরো বলেন, ২০০৮ সালের উচ্চ আদালতের রায়ের পরেও উর্দুভাষী জনগোষ্ঠী তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। তাদের মর্যাদাপূর্ণ পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে সবার ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস প্রয়োজন।