সোমবার, ৭ অক্টোবর ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ২২ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

উইন্ডোজ ১০-এর সেরা ১০ ফিচার





সপ্তাহ তিনেক হলো আনুষ্ঠানিকভাবে অবমুক্ত হয়েছে মাইক্রোসফটের জনপ্রিয় উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের সর্বশেষ সংস্করণ উইন্ডোজ ১০। এর মধ্যেই নতুন এই অপারেটিং সিস্টেমের বিভিন্ন ফিচার এর ব্যবহারকারীদের কাছে জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করেছে। ব্যবহারকারী আর প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের বিভিন্ন মতামতের ওপর ভিত্তি করে উইন্ডোজ ১০-এর সেরা ও আলোচিত ১০ ফিচারের কথা এই লেখায় তুলে ধরছেন সানজিদা সুলতানা

স্টার্ট মেন্যু

উইন্ডোজ ৭-এর পর থেকে উইন্ডোজ ৮ বাজারে আসার পর সবচেয়ে বেশি সমালোচনা হয়েছিল স্টার্ট মেন্যুর না থাকা নিয়ে। উইন্ডোজ ৮.১-এ স্টার্ট মেন্যু ফিরিয়ে নিয়ে আসা হলেও তা করা হয়েছিল উইন্ডোজ ৮-এর মেট্রো স্টাইলে। ফলে সেটিও উইন্ডোজের চিরচেনা স্টার্ট মেন্যুর স্বাদ দিতে ব্যর্থ হয়। উইন্ডোজ ১০-এ এসে সেই চিরচেনা স্টার্ট মেন্যুর আদলটি ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। এতে আগের স্টার্ট মেন্যুর পাশাপাশি মেট্রো স্টাইলে অ্যাপগুলোর থাম্বনেইলও যোগ করা হয়েছে। একে ফুলস্ক্রিন মোডে প্রদর্শন করার সুবিধাও রয়েছে।

উইন্ডোজ স্টোর অ্যাপস

উইন্ডোজের অ্যাপ স্টোরকেও উইন্ডোজ ৮ বা উইন্ডোজ ৮.১-এর তুলনায় নতুন করে ডিজাইন করা হয়েছে। আগে এটি ফুলস্ক্রিন অ্যাপ হিসেবে হাজির হলেও উইন্ডোজ ১০-এ এসে এটি এক্সপ্লোরার উইন্ডোর মতো পৃথক একটি উইন্ডোজ হিসেবে হাজির হবে। মাউসের মাধ্যমে সহজে ব্যবহারের উপযোগী টুলবারও রয়েছে। এই উইন্ডোকেও ছোট-বড় করার সুযোগ রয়েছে। ফলে উইন্ডোজ স্টোর অ্যাপস যথেষ্টই স্মার্ট হয়ে উঠেছে উইন্ডোজ ১০-এ এসে।

কর্টানা

পার্সোনাল ভয়েজ অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে অ্যাপলের সিরি এবং গুগলের গুগল নাউয়ের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতেই মাইক্রোসফট তৈরি করেছে কর্টানা। এতদিন পর্যন্ত এটি মোবাইল ডিভাইসে ব্যবহারের জন্য সীমাবদ্ধ থাকলেও উইন্ডোজ ১০-এ এসে একে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে ডেস্কটপ বা ল্যাপটপের জন্যও। কর্টানা কোনো ডিভাইস থেকে ওই ডিভাইসের ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত সকল তথ্য সংগ্রহ করে এবং মাইক্রোসফটের বিং সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে পরিচালিত স্মার্ট সার্চের সাথে সমন্বয় করে। ভয়েজ অ্যাসিস্ট্যান্ট সেবা হিসেবে এটি সরাসরি মানুষের ভাষায় যোগাযোগ করতে সক্ষম। ডিভাইসে সেট করা রিমাইন্ডার বলে দেওয়া, কথা বলে পিসির মধ্যে বা অনলাইনে কোনোকিছু সার্চ করা, ক্লাউড স্টোরেজ বা নেটওয়ার্কের মধ্যেও নানা ধরনের কাজ করার সুযোগ করে দেয়। ইমেইল পড়ে দেওয়া, মিউজিক প্লেয়ারে গান চালানো বা বদলানো, নির্দিষ্ট দিনের কোনো ফাইল খুঁজে বের করার মতো কাজগুলোও কর্টানা করে দিতে পারবে।

নতুন ব্রাউজার এজ

গুগল ক্রোম বা মজিলা ফায়ারফক্সের কাছে মাইক্রোসফটের চিরচেনা ওয়েব ব্রাউজার ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার গত কয়েক বছরে ব্যাপকভাবে বাজার হারিয়েছে। ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার বলতে গেলে পুরোনো দিনের ব্রাউজারে পরিণত হয়েছে। সে কারণেই ওয়েব ব্রাউজার নিয়ে সম্পূর্ণ নতুন করে চিন্তা করতে হয়েছে মাইক্রোসফটকে। উইন্ডোজ ১০ বাজারে নিয়ে আসাকে লক্ষ্য করে মাইক্রোসফট প্রজেক্ট স্পার্টান নামে নতুন ব্রাউজার নিয়ে কাজ শুরু করে। এরই ফল হিসেবে উইন্ডোজ ১০-এ এসে মাইক্রোসফটের যুক্ত হয়েছে নতুন ওয়েব ব্রাউজার এজ। নতুন রেন্ডারিং ইঞ্জিন, কর্টানার সংযুক্তি, ডিজিটাল ইংকিং টুলসের সংযোজন, বিশেষ রিডিং ভিউ প্রভৃতি ফিচারে এজ ওয়েব ব্রাউজারে মাইক্রোসফটের অবস্থানকে খানিকটা শক্তিশালী করে তুলবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

ভার্চুয়াল ডেস্কটপ

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে উইন্ডোজ ১০-এ এসে যুক্ত হলো ভার্চুয়াল ডেস্কটপ। ফলে এবারে উইন্ডোজে ব্যবহারকারী তার প্রয়োজনমতো একাধিক ডেস্কটপ তৈরি করে নিতে পারবেন। যারা উইন্ডোজে মাল্টিটাস্কিংয়ের কাজ করে থাকেন, তাদের জন্য এই ভার্চুয়াল ডেস্কটপ ফিচারটি বেশ কাজের।

অ্যাকশন সেন্টার

ইন্টারনেটনির্ভর এই সময়ে এসে সকলেই নানা ধরনের অনলাইন সেবায় যুক্ত থাকতে পছন্দ করেন। কাজের সময়েও সামাজিক যোগাযোগের কোনো সাইটের কিংবা ইমেইলের নোটিফিকেশন পেতে পছন্দ করেন অনেকেই। নোটিফিকেশন প্রদান করতে উইন্ডোজ ৮-এ এসে তাই প্রথমবারের মতো উইন্ডোজে যুক্ত হয় অ্যাকশন সেন্টার। কিন্তু তাতে কোনো নোটিফিকেশন একবার প্রদর্শন করেই চলে যেত। উইন্ডোজ ১০-এর অ্যাকশন সেন্টারটি এখন সব নোটিফিকেশন আর্কাইভ আকারে প্রদর্শন করে। ফলে আপনি পিসির সামনে না থাকলেও ফিরে এসে অ্যাকশন সেন্টার ওপেন করলেই মাঝের সময়ের সব নোটিফিকেশন এক নজরে দেখে নিতে পারবেন।

নতুন রূপে প্রধান প্রধান অ্যাপ

উইন্ডোজ ৮-এর মেইল, ফটো, ক্যালেন্ডারের মতো প্রয়োজনীয় দৈনন্দিন অ্যাপগুলোর ইন্টারফেস গ্রাহকরা পছন্দ করেনি। উইন্ডোজ ১০-এ এসে তাই এসব প্রধান প্রধান অ্যাপগুলোকে নতুন করে ডিজাইন করা হয়েছে। এগুলো একদিকে যেমন সহজে ব্যবহারযোগ্য হয়েছে, অন্যদিকে তেমনই পেয়েছে গতিশীলতা। যেকোনো আকারের ডিভাইসেও এই অ্যাপগুলো সহজেই এঁটে যায়।

এক্সবক্স অ্যাপ

উইন্ডোজ ১০-এ এসে এক্সবক্স অ্যাপকেও নতুন করে ডিজাইন করা হয়েছে। এক্সবক্স ওয়ানের ব্যবহারকারীরা এর ইন্টারফেসের সাথে অনেকটাই পরিচিত থাকবেন। এই অ্যাপের মাধ্যমে এক্সবক্সের বন্ধুদের সাথে লাইভ চ্যাট, ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং, কোলাবরেশন, গেম ক্লিপস বিনিময়ের মতো কাজগুলো সহজেই করা যাবে। তাছাড়া এক্সবক্সের প্রোফাইল ব্যবস্থাপনার সব কাজও এই অ্যাপ থেকেই করা যাবে। আর উইন্ডোজ ১০ পিসিতে এক্সবক্সের গেমগুলো স্ট্রিমিং করার সুবিধা তো রয়েছেই।

কনটিনাম

ভিন্ন ভিন্ন ধরনের ডিভাইসে উইন্ডোজ ১০-এর ব্যবহার স্বাচ্ছন্দ্যে করার জন্য কনটিনাম ফিচারটি চালু করেছে মাইক্রোসফট। এখনকার সময়ে নোটবুক ও ট্যাবলেট পিসির হাইব্রিড ডিভাইস বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তাছাড়া টাচস্ক্রিন মনিটরের ব্যবহারও বেড়েছে। টাচস্ক্রিন ডিভাইসে যাতে উইন্ডোজ ১০ সহজে ব্যবহার করা যায় সেই সুবিধা রয়েছে এতে। হাইব্রিড ডিভাইসগুলোতে উইন্ডোজ ১০ স্বয়ংক্রিয়ভাবেই ডিভাইস ব্যবহারের ধরন অনুযায়ী পরিচালিত হবে। যেমন—কোনো হাইব্রিড ডিভাইস ল্যাপটপ বা নোটবুক মোড থেকে ট্যাবলেট মোডে চলে গেলে উইন্ডোজ ১০-ও টাচস্ক্রিন মোডে চলে যাবে। আবার ট্যাবলেট পিসিতে কিবোর্ড যুক্ত করা হলে এটি পিসি মোডে চলে যাবে।

ইউনিফিল্ড সেটিংস

উইন্ডোজ ৮-এ এসে প্রথাগত কন্ট্রোল প্যানেল এবং মেট্রো স্টাইলের পিসি সেটিংস আলাদা আলাদা লোকেশন থেকে অ্যাকসেস করতে হতো। ফলে একেক ধরনের সেটিংস বদলানোর জন্য আলাদা আলাদা জায়গায় যাওয়ার দরকার হতো। উইন্ডোজ ১০-এ এসে সব ধরনের সেটিংসকে একই জায়গায় স্থান দেওয়া হয়েছে। ফলে সেটিংস বদলানোর জন্য এখন সেটিংস অ্যাপে গেলেই চলবে।

সম্পাদক: শাহ সুহেল আহমদ
প্যারিস ফ্রান্স থেকে প্রচারিত

সার্চ/খুঁজুন: