স্টাফ রিপোর্টার,
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেছেন, জাসদই বঙ্গবন্ধু হত্যার পথ পরিষ্কার করে দিয়েছিল। স্বাধীনতা বিরোধীরা কখনও বঙ্গবন্ধুর ওপর আঘাত হানতে পারত না, যদি গণবাহিনী, জাসদ বঙ্গবন্ধুর বিরোধিতা করে বিভিন্ন জায়গায় ডাকাতি, মানুষ হত্যা করে, এমপি মেরে পরিবেশ সৃষ্টি না করতো। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রাজধানীর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে আয়োজিত এক আলোচনাসভায় তিনি এসব কথা বলেন। সেলিম বলেন, মুক্তিযুদ্ধের নামধারী জাসদ। কী বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র, কী বিপ্লব ঘটাবে তারা? যেহেতু জাসদের কর্মীরা মুজিববাহিনী, মুক্তিবাহিনী, গণবাহিনীতে ছিল, তাই বঙ্গবন্ধুর হত্যার মূল রহস্য বের করতে হবে, কারা কারা জড়িত ছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে তিনি বলেন, এটা তো কোন সেনা অভ্যুত্থান ছিল না। বিপথগামী সেনা ও অবসরপ্রাপ্ত সেনারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল। যখন তারা অস্ত্র নেয়, তখনই তাদের কোর্ট মার্শাল হওয়া উচিত ছিল। তখনকার সেনাপ্রধান কেএম শফিউল্লাহর কঠোর সমালোচনা করে শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, উনি (কে এম শফিউল্লাহ) এগিয়ে আসলেন না। কীসের জন্য তিনি নীরব ছিলেন? শেখ মনি মারা যাওয়ার দেড় থেকে দুই ঘণ্টা পর বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। শফিউল্লাহ এখন মিথ্যাচার করে বেড়াচ্ছেন। বঙ্গবন্ধু সবার কাছে ফোন করেছেন। কর্নেল শাফায়াত ছুটে এসেছিলেন। আর উনি বসে বসে বুড়ো আঙুল চুষেছেন। তিনি বলেন, উনি (কে এম শফিউল্লাহ) বঙ্গবন্ধুকে বাসা থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। কত বড় বেয়াদব! বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান আর্মির ভয়ে বাসা থেকে পালান না, আর তার বানানো আর্মি দেখে উনি পালিয়ে যাবেন! তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু মারা যাবার পরেই শফিউল্লাহ বিপথগামী সৈনিকদের সঙ্গে রেডিও স্টেশনে গেলেন। কেন তিনি আদেশ দিলেন না, যারা ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের হয়ে গেছে, তারা আর ঢুকতে পারবে না। এরা ক্যান্টনমেন্টে ঢুকলে এদের অ্যারেস্ট করা হবে। কিন্তু অ্যারেস্ট করা হলো না। তাঁকে (শফিউল্লাহ) নিয়ে আসল। সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানও বঙ্গবন্ধু হত্যায় জড়িত উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, জিয়াউর রহমান ডেপুটি চিফ ছিলেন। তিনিও হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। জিয়াউর রহমান, শাফায়াত জামিল, খালেদ মোশাররফ তখন কী করেছিলেন এ প্রশ্নের জবাব একদিন দিতে হবে। এ জন্য একটা তদন্ত কমিশন গঠন করা হোক। দেড়শ জন সেনা কর্মকর্তার কাছে কীভাবে দেড় লাখ সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করে? ১৫ই আগস্ট কর্নেল তাহেরের ভূমিকা সম্পর্কে শেখ সেলিম বলেন, বঙ্গবন্ধু যেদিন মারা যান, সেদিন তিনিও রেডিও স্টেশনে যান। তিনি জাসদের গণবাহিনীর প্রধান ছিলেন। একটা সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে তিনি গণবাহিনী করেছিলেন। যাকে বঙ্গবন্ধু সহানুভূতিশীল হয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান বানালেন তিনিও ওই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ক্ষমতার ভাগাভাগিতে তাহেরের কী হয়েছিল তা পরে দেখা গেছে। ধানমন্ডি, কলাবাগান, হাজারীবাগ ও নিউমার্কেট থানা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এই আলোচনাসভায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপস। সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, ধানমন্ডি থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামাল আহমেদ, কলাবাগান থানার সভাপতি নাজমুল করিম, হাজারীবাগ থানার সভাপতি ইলিয়াছুর রহমান, নিউ মার্কেট থানার সভাপতি জসিম উদ্দিন প্রমুখ।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের আলোচনা অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বিতর্কে জড়ান সাবেক সেনাপ্রধান কেএম শফিউল্লাহ ও আওয়ামী লীগ নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিম। ওই অনুষ্ঠানে শফিউল্লাহ বলেন, ‘আমিতো মনে করবো খন্দকার মোশতাকের সঙ্গে শেখ সেলিমের আঁতাত ছিল।’