নিজস্ব প্রতিবেদক
মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুর প্রকোপ এ বছর আর্থিকভাবে কতটা ক্ষতির কারণ হয়েছে সে বিষয়ে সরকারি কোনো হিসেব এখনও আসেনি; তবে এর পরিমাণ সাড়ে তিনশ কোটি টাকার কম নয় বলে মনে করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক।
পাশাপাশি রোগীদের সঙ্গে হাসপাতালে অবস্থানকারীদের পেছনে খরচ ও তাদের কর্মঘণ্টার হিসাবে আরও প্রায় ৮১ কোটি টাকার ক্ষতি ধরা হয়েছে এই সমীক্ষায়। যারা মারা গেছেন তাদের (ইয়ার অব লাইফ লস) অর্থনৈতিক ক্ষতি ধরা হয়েছে প্রায় ৪০ কোটি টাকা।
তাদের হিসাবে, সব মিলিয়ে এবার ডেঙ্গুতে এরইমধ্যে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ৩৪৬ কোটি টাকা। তবে যারা হাসপাতালের বহিঃবিভাগে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরে গেছেন তাদের খরচ এখানে অন্তর্ভুক্ত হয়নি।এ বছর জানুয়ারি থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকারি হিসাবে প্রায় ৭৭ হাজার ডেঙ্গু রোগী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে ৬০ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
ডেঙ্গুতে মৃত্যু ‘সবচেয়ে কম’ বাংলাদেশেই: স্বাস্থ্য ডিজি
সরকারি তথ্যের উপর ভিত্তি করে এ সমীক্ষা করে আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করা হয়েছে বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ জানিয়েছেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা ইনস্টিটিউট থেকে স্বউদ্যোগে এ আর্থিক ক্ষতির বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। মধ্য অক্টোবর নাগাদ পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দেব। প্রাথমিকভাবে আমরা পেয়েছি, এ বছর ডেঙ্গুতে শুধু হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের পেছনে প্রায় ৩৪৬ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।”তিনি বলেন, যারা মারা গেছেন তাদের জীবনের মূল্য তো আর্থিকভাবে হিসাব করা যাবে না। কিন্তু মাথাপিছু আয় বিবেচনা করে তাদের গড় বয়সের হিসাবে আর্থিক ক্ষতিটা তুলে ধরা হয়েছে।
গবেষণা তথ্য
হাসপাতাল | স্থানীয় সরকারি হাসপাতাল | রেফার্ড গর্ভ হাসপাতাল | এ ক্যাটাগরি- বেসরকারি হাসপাতাল | বি ক্যাটাগরি- বেসরকারি হাসপাতাল | মোট |
স্যাম্পল সাইজ | ৪৬ | ৩৬ | ৩ | ৮১ | ১৭০ |
গড় খরচ | ১০৯৫২ | ২০৪৯৩ | ২০১৭১৪ | ৪১৩১৯ | |
রোগীর সংখ্যা | ৩৩১৮৩ | ২৫৯৬৯ | ৩৮৫৮ | ১৪২২০ | ৭৭২৩০ |
সরাসরি ব্যয় | ৩৬,৩৪,২৪,১১৭ | ৫৩,২১,৯৪,৮৭২ | ৭৭,৮২,১৩,৭১৪ | ৫৮,৭৫,৬৩,৩৭৮ | ২২৬,১৩,৯৬,০৮১ |
পরোক্ষ ব্যয় | ৩৪,৬১,৮৬,৫২২ | ২৭,০৯,২৮,৫৮৩ | ৪,০২,৪৯,৩৫৯ | ১৪,৮৩,৫৩,০০২ | ৮০,৫৭,১৭,৪৬৬ |
ইকনমিক ভ্যাল্যু অব ইয়ার অব লাইফ লস (৬০ জন) | ৩৯,৬১,৫৫,৫৭৬ | ||||
সর্বমোট অর্থনৈতিক ক্ষতি | ৩৪৬,৩২,৬৯,১২৩ |
সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাসপাতালে ভর্তি ফি, শয্যা ভাড়া, পরীক্ষার ফি, ডাক্তার ফি, ওষুধ ও খাবার খরচ মিলিয়ে স্থানীয় সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী প্রতি ব্যয় হয়েছে প্রায় ১০ হাজার ৯৫২ টাকা। এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে পাঠানো রোগীর খরচ হয়েছে ২০ হাজার ৪৯৩ টাকা।
বেসরকারি নামি-দামি হাসপাতালে দুই লাখ ১৭ হাজার ১৪ টাকা এবং সাধারণ হাসপাতালে ৪১ হাজার ৩১৯ হাজার টাকার ব্যয়ের তথ্যও রয়েছে।
গড় বয়স ৩০ বছর বিবেচনায় বৈজ্ঞানিকভাবে হিসাব করে মৃত ৬০ জনের জন্য আর্থিক ক্ষতি ধরা হয়েছে সাড়ে ৩৯ কোটি টাকা।অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল হামিদ জানান, জানুয়ারি থেকে রোগী আসছে। তারা কাজ শুরু করেন জুলাই-সেপ্টেম্বরে। ঢাকা শহরের অন্তত ১২টি হাসপাতালের কয়েকশ রোগীর ওপর এ সমীক্ষা চালানো হয়। ঢাকার ভেতরে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে রোগীরা চিকিৎসা নিয়েছেন। ঢাকার বাইরে যাদের অবস্থা খারাপ তাদের ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। অধিকাংশই সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
“আমাদের শিক্ষার্থীরা সমীক্ষার জন্যে নামি-দামি হাসপাতাল ও সাধারণ মানের হাসপাতালের রোগী ও তাদের পরিজনের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা মানে তাকে থাকতে হয়েছে। এখানে সরাসরি একটা খরচ। এর বাইরে রোগীর সঙ্গে অন্তত দুইজন এটেনডেন্ট থাকতে হয়েছে। এদের কর্মঘণ্টার ক্ষতি হয়েছে। এ তিন জনের অর্থনৈতিক মূল্য আমরা বের করেছি।“দ্বিতীয়ত যারা মারা গেছেন। গড় হিসাবে তাদের অধিকাংশই অন্তত ৩৫ বছর কন্ট্রিবিউট করতে পারত। বর্তমান মাথা পিছু আয় বিবেচনা করে তাদের অনুমিত কন্ট্রিবিউশনের অর্থনৈতিক ক্ষতিটা তুলে ধরেছি। সব মিলিয়ে প্রায় ৩৪৬ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে আমরা তুলে ধরেছি।”
বাসার রোগী ও মশার সরঞ্জামের খরচ বাইরে
অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল হামিদ জানান, হাসপাতালে ভর্তি ছাড়া ডেঙ্গু আক্রান্তদের চিকিৎসা খরচের পাশাপাশি এই রোগ থেকে বাঁচতে মশা প্রতিরোধে স্প্রে, কয়েল, মশারিসহ বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম কেনার খরচ গবেষণার বাইরে রাখা হয়েছে। এসব খরচের মধ্যে এলে ব্যয় আরও ১০০ কোটি টাকা বাড়বে বলে মনে করছেন তিনি।
তিনি বলেন, “আমরা যেটা করতে পারিনি আউট প্যাশেন্টের খরচ। টেস্টে কারও পজিটিভি, কারও নেগেটিভ এসেছে। ধরা পড়লেও আর্লি স্টেজ হওয়ায় ডাক্তার তাদের বাসায় পাঠিয়েছে, হাসপাতালে সিট না থাকায় ভর্তি হতে পারেনি। সব মিলিয়ে এ খরচ আরও ১০০ কোটি যোগ হতে পারত বলে ধারণা করছি।”
সমীক্ষার কাজ চলমান রয়েছে জানিয়ে এই অধ্যাপক বলেন, সারা বছরের তথ্য যোগাড় না করা গেলেও আগামী ১৫ অক্টোবর নাগাদ কাজ শেষে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দিতে পারবেন বলে আশা করছেন তারা।