বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুসলিমদের কাঁধে মহামারীর দায়




ভারতের রাজধানীতে সঙ্ঘটিত কয়েক দশকের সবচেয়ে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ৫০ জনেরও বেশি নিহত হওয়ার মাত্র কয়েক সপ্তাহ পর আবারো সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বাড়তে শুরু করেছে। মোদি সরকারে বিরুদ্ধে নিজেদের ত্রুটিগুলি ধমাচাপা দিতে ধর্মীয় সঙ্ঘাতের ইন্ধন যোগানোর অভিযোগ রয়েছে বিভিন্ন মহলের। ভারতের সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, নয়াদিল্লির একটি জনবহুল এলাকায় মুসলিম আলেমদের এক সভায় অংশগ্রহণকারীরা সমগ্র ভারতে করোনাভাইরাস ছড়াতে সহায়তা করেছে।

গত মাসে ২শ’ জনেরও বেশি লোকের ধর্মীয় সমাবেশ করার ওপর স্থানীয় সরকারের নিষেধাজ্ঞা সত্তে¡ও ভারতজুড়ে তাবলীগ জামাতের হাজার হাজার অনুসারী নয়াদিল্লির নিজামউদ্দিনে প্রধান সদর দফতরে সমাবেশ করে। ভারতের ২ হাজার নিশ্চিত করোনাভাইরাস সংক্রমণের মধ্যে প্রায় ৩শ’ ৭০ জন মার্চের সেই সমাবেশের সাথে সম্পৃক্ত বলে জানায় ভারতীয় প্রশসন।

ভারতীয় স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমাবেশকারীরা কাশ্মীরের পর্বতমালা থেকে শুরু করে আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ থেকে তামিলনাড়ু পর্যন্ত পুরো ভারতজুড়ে তাদের পরিবার ও সম্প্রদায়ের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। গত সপ্তাহে নয়াদিল্লি পুলিশ জায়গাটি সিল করে এবং তাবলীগের বিশাল আস্তানাগুলোতে আশ্রয় নেয়া প্রায় ১ হাজার ৮শ’ অনুসারী এবং আশেপাশের বাসিন্দাদের হাসপাতালে এবং আলাদা কোয়ারেন্টাইনে নিয়ে যায়।

ইতোমধ্যে মুসলিম সমাবেশের কারণে ভারতের করোনাভাইরাস সঙ্কট আরো প্রকট হওয়ার খবর দেশটির হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ভারতের ধীরগতির অর্থনীতির ব্যর্থতা ঢাকতে নরেন্দ্র মোদির ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি-বিজেপি চরম উস্কানিমূলক সাম্প্রদায়িক বক্তৃতার আশ্রয় নিয়েছে। এভাবে তারা ভারতের মুসলিম সংখ্যালঘুকে বারবার একটি কুখ্যাত অভ্যন্তরীণ হুমকি হিসাবে চিত্রিত করেছে।
এদিকে বিগত মাসগুলিতে সমগ্র এশিয়া জুড়ে ধর্মীয় সংগঠনগুলি বড় ধরনের জমায়েতের বিরুদ্ধে কড়া নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বহু আধ্যাত্মিক নেতাসহ সমাবেশ করে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে এক বিরাট ভূমিকা পালন করেছে। ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ কোরিয়ায় ১০ হাজার সংক্রমণের অর্ধেকেরও বেশি খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের জনসমাবেশ থেকে শুরু হয়েছিল। পরবর্তী বিচ্ছিন্ন সংক্রমণগুলি কোরিয়ার ছোটো গির্জাগুলির সমাবেশ থেকে হয়েছিল। সিঙ্গাপুরের বৃহত্তম দুুটি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবও দেশটির গীর্জাগুলির সাথে সংশ্লিষ্ট।

ভারতের উত্তরের রাজ্য পাঞ্জাবে এক শিখ ধর্মগুরু বেশ কয়েকটি বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নেন এবং করোনাভাইরাস সংক্রমণে মৃত্যুবরণ করেন। তার সংক্রমণ তার পরিবারের ১৯ সদস্য এবং তার সংস্পর্শে আসা হাজার হাজার মানুষকে কোয়ারেন্টাইনের দিকে ঠেলে দিয়েছে।

তারপরেও তাবলীগের বিশাল সমাবেশগুলোই বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসের ব্যাপক বিস্তারের কারবারী হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে। টেলিভিশনের উপস্থাপক অর্ণব গোস্বামী ভারতের অন্যতম সর্বাধিক দেখা নিউজ চ্যানেলে মন্তব্য করেছেন, ‘এগুলো বিপজ্জনক ব্যক্তি। এরা লকডাউন ভেঙেছে। তারা আমাদের সকলের বিষয়ে আপোস করেছে। আমরা যখন জিতছিলাম তখন তারা আমাদের পরাজিত করার জন্য সবকিছু করেছে।’

অশোক বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক আলী খান মাহমুদাবাদ বলেছেন, ‘জাতীয় ঐক্যের মুহূর্ত হিসাবে মহামারীটিকে ব্যবহার করার পরিবর্তে মুসলিমদের আরও দোষী দেখানোর ও আরও বেশি দোষ চাপানোর প্রতিযোগিতা চলছে।’
ভারত ৩ সপ্তাহের লকডাউনের ২য় সপ্তাহ পার করছে যা দেশটির দরিদ্র গোষ্ঠির জন্য বিশেষ সমস্যা সৃষ্টি করছে। এ বিষয়ে বিশ্লেষকরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন যে, বিজেপি সঙ্কট মোকাবেলার ক্ষেত্রে তার সরকারের ব্যর্থতার উপর জনগণের ক্ষোভকে অন্যদিকে ঘোরাতে মুসলিমবিরোধী মনোভাব জোরদার করতে পারে।

সম্পাদক: শাহ সুহেল আহমদ
প্যারিস ফ্রান্স থেকে প্রচারিত

সার্চ/খুঁজুন: