করোনাভাইরাস মহামারী চীনের ‘জ্ঞাতসারেই’ ঘটেছে এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া গেলে দেশটিকে পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে বলে সতর্ক করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প।
শনিবার হোয়াইট হাউসের দৈনিক ব্রিফিংয়ে প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে বেইজিংয়ের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করে তিনি এ মন্তব্য করেন বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে।
ট্রাম্প বলেন, “শুরু হওয়ার আগে চীনেই এটি থামানো যেতো, তা হয়নি আর এখন পুরো বিশ্ব এর কারণে ভুগছে।”
করোনাভাইরাসের এই সঙ্কটকালে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ দুটির মধ্যে যখন নজিরবিহীন সহযোগিতা দরকার, তখন দুই পক্ষের এই কথার লড়াই উল্টো বেইজিং-ওয়াশিংটন সম্পর্ককে ক্রমাগত ক্ষতিগ্রস্ত করে চলছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
“যদি এটা ভুল হয়ে থাকে, ভুল ভুলই। কিন্তু তারা যদি জ্ঞানত দায়ী থাকে, হ্যাঁ, আমি বলছি, তখন অবশ্যই ফল ভোগ করতে হবে,” বলেন ট্রাম্প।
তবে ওই রকম পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র কী ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি তিনি।
গত বছরের শেষ দিকে চীনের উহান শহরে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর চীন এ বিষয়ে স্পষ্ট তথ্য দেয়নি বলে বেশ কিছুদিন ধরেই ট্রাম্প ও তার শীর্ষ সহযোগীরা অভিযোগ করে আসছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে ‘চীন ঘেঁষা’ অ্যাখ্যা দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট গত সপ্তাহে সংস্থাটির তহবিলও স্থগিত করেছেন।
ভাইরাসটিকে ঘিরে ওয়াশিংটন ও বেইজিং এখন প্রকাশ্যেই তর্কযুদ্ধে লিপ্ত হচ্ছে। প্রথমদিকে প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে ভূমিকার জন্য চীন ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের উচ্চ প্রশংসা করেছিলেন ট্রাম্প। তবে তিনি ও যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তখনও ভাইরাসটিকে ‘চীনা ভাইরাস’ বলে উল্লেখ করেছিলেন; আর এখন দেশটির বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে কথা বলছেন।
ট্রাম্পের স্বদেশি সমালোচকরা বলছেন, প্রাদুর্ভাব শুরুর সময় চীন মানসম্পন্ন ভূমিকা পালন করতে পারেনি এবং কী ঘটেছে তা এখনও স্পষ্ট করেনি।
প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় নিজের ভুলক্রুটি ঢাকতে ট্রাম্প এখন বেইজিংকে ব্যবহার করতে চাইছেন এবং ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে কিছু ভোটারের মধ্যে বাড়তে থাকা চীনবিরোধী মনোভাবের সুযোগ নেওয়ারও চেষ্টা করছেন, বলছেন তারা।
রয়টার্স লিখেছে, একই সময় দুই পক্ষের উত্তেজনা অতি চরম পর্যায়ে চলে গেলে সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার বিষয়েও সজাগ আছেন হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা।
মার্কিন স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য অতি প্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত সুরক্ষা উপকরণের (পিপিই) জন্য যুক্তরাষ্ট্র এখন চীনের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল; ট্রাম্প বেইজিংয়ের সঙ্গে চান কষ্টার্জিত বাণিজ্য চুক্তিটি টিকিয়ে রাখতেও আগ্রহী।
কিছুদিন আগেও যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সম্পর্ক ভালো ছিল মন্তব্য করেছেন ট্রাম্প।
“কিন্তু তারপর হঠাৎ করেই আপনি এগুলো শুনছেন। ভুল করে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ ছাড়া হয়ে গেছে, না জেনেশুনে এটি করা হয়েছে? এই দুটির মধ্যে বড় ধরনের পার্থক্য আছে,” বলেছেন তিনি।