শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

Sex Cams

মনু মিয়ার চোখে জল : নগর জোড়ে চাকুরী হারানোর আতঙ্ক !




মিজান মোহাম্মদ :

মনু মিয়া। ডিগ্রি পাশ। বয়স ৪২বছর। দীর্ঘ ১২বছর ধরে হিসাবরক্ষক পদে চাকুরি করছেন নগরীর একটি প্রতিষ্টানে। গতকাল ম্যানেজার হাতে একটি খাম ধরিয়ে দিয়ে বলেন-‘ মার্চ মাস থেকে এ পর্যন্ত যে কয়দিন ডিউটি করেছো সে কয়দিনের বেতন দেওয়া আছে। কাল থেকে আর অফিসে আসতে হবেনা। দেশের পরিস্থিতি ভালো হলে মালিকপক্ষ চাইলে আবার চাকুরির জন্য ডাকা হতে পারে!’

অপ্রস্তুত ভাবেও কথাগুলো শোনতে হয়েছে মনুকে। এরই মধ্যে দু’চোখের কোনে জমে গেছে অনেক জল। একসময় জলগুলো দু’গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়লো মাঠিতে। দু’চোখে কেবল ভাসছে-অগামী দিনগুলোর করুণ আর্তি ! কিভাবে চলবে তাঁর ! চাকুরী থাকবে তো ? পরিস্থিতি ঠিক হয়ে যাবে তো ? না হলে বাকিদনগুলোতে খাবো কি ? প্রশ্নগুলোর উত্তর জানা নেই মনু মিয়ার। এই উত্তর জানা না থাকলেও এরকম মনু মিয়ার সংখ্যা বাড়ছে প্রতিদিন।

হু হু করে বেড়েই চলেছে করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা, তাল মিলিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। দেখতে দেখতে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় সাড়ে বাইশ লাখ, মৃত্যু ছাড়িয়েছে দেড় লক্ষ! করোনা আতংকে দিন কাটাচ্ছেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় শক্তিধর থেকে অসহায় ব্যক্তিও।

২৬ মার্চ থেকে ২৫ এপ্রিল পযর্ন্ত সাধারণ ছুটি। চলছে লকডাউনও। করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার দিন দিন বেড়েই চলছে। এমতাবস্থায় কবে যে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হবে তা অনিশ্চিত। অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে সিলেটে চাকুরিরতদের। করোনা আতংকের সাথে মরার উপর খাড়ার গাঁ এর মত চাকুরি হারানো বা হারানোর ভয়।

অভিযোগ আছে যে, নগরীতে মেডিনোভা মেডিকেল সার্ভিসেসের দুইটি শাখা ছিল। এর মধ্যে কাজলশাহ চালু থাকলেও সুবিধবাজার এক্সেল টাওয়ারের শাখা আপাতত বন্ধ। ছাঁটাই করা হয়েছে ঐ শাখার কর্মরতদের। বেশ কিছু কর্মী ছাঁটাইয়ের অভিযোগ আছে নগরীর ল্যাব-এইড ডায়াগনস্টিক এর বিরুদ্ধেও।

নগরীতে এমন অনেক মনু মিয়া আছে যারা শুধু চাকুরির খাতিরে শহরে বাস করছেন। আজ চাকরি নেই। শহরে থাকার উপায়ও নেই স্বল্প বেতনের কর্মরতদের। নেই হাতে জমানো টাকাও। কিছু যা ছিল এর মধ্যেই হয়তো শেষ হয়ে গেছে। এখন কি করবে কি খাবে এমন অনিশ্চয়তায় অনেক পরিবার!

যখন একটি প্রতিষ্ঠান তার কর্মরতদের পাশে দাঁড়ানো উচিত ঠিক তখনই অনেক প্রতিষ্ঠান বিরূপ আচরণ করছে। অনিশ্চয়তা ফেলে দিচ্ছে জীবন ও জীবিকা! মনু মিয়ার মতো এমন অনেকেই আছেন যারা এই মধ্য বয়সে অন্য কোথাও চাকুরি জুটাতে পারবেন না।

জানাগেছে, সিলেটের ৯৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে স্থায়ী কর্মীদের মাসিক বেতন বাহিরে প্রফিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুয়িটির মতো কোন সুবিধা নেই। তার উপর বিনা নোটিশে বা শর্ট নোটিশে চাকুরি থেকে বহিষ্কারের অভিযোগও রয়েছে। এ অবস্থায় এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে সরকার ও ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

সম্পাদক: শাহ সুহেল আহমদ
প্যারিস ফ্রান্স থেকে প্রচারিত

সার্চ/খুঁজুন: