বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

Sex Cams

ওয়ান টাইম সংস্কৃতি




মামুন সুলতান

সারাবিশ্বে একটা মহাদুর্যোগ যাচ্ছে। দুর্যোগ দুর্বিপাকের গোলকধাঁধায় গুহায় জীবনযাপনের মত গৃহবন্দিত্বের গ্রাসে মানুষ ঘুরছে। দম আটকে নিজেকেই দমন করছে দুর্নিবার মানুষ। বিগত কয়েক শতাব্দীর সহস্রদিনের একদিনও হয়তো মানুষ এমন গোলযোগের মুখোমুখি হয়নি। অনভ্যস্ত অস্বস্তিকর অমন অমানিশায় আর কখনো মানুষকে পড়তে হয়নি। এক যন্ত্রনামুখর অযান্ত্রিক ঘরজীবনে কেবল বেঁচে থাকার আকুতি নিয়েই মানুষের শ্বাস প্রশ্বাস ওঠানামা করছে। অনেককেই বলতে শুনেছি এরচেয়ে মৃত্যুই কাম্য।

মানুষ আজন্ম বিনোদনপ্রিয়। আড্ডায় মেতে থাকা মানুষ আজ আড্ডাহীন। কথা বলা মানুষ আজ নির্বাক। অন্নদা শংকর রায় বলেছেন বাঙালি নিজে বকে আর অন্যকে বকায়। সেই বাকনির্ভর মানুষ আজ অবাক নিশ্চুপ। এই ক্রান্তিকালে আমরা এক মাস রোজা রেখে আনন্দের মহাউৎসব ঈদের আমেজ থেকেও বঞ্চিত। এর দায় কেউ নেবেন না জানি। তবুও কেউ না কেউ এর দায় স্বীকার করে নিতে হবে।

বিনোদন! মানুষের অবসরসঙ্গী। পত্রিকার হকার নেই পত্রিকা পাওয়া এখন দুর্লভ। অবসরে পত্রিকায় মনোযোগ দিয়েও কিছু সময় কাটানো যেতো। গণমাধ্যম বিশেষ করে ইলেকট্রনিক মিডিয়া সরব আছেন এখনও। সতেরো কোটি মানুষের বাস এখানে। বাংলাদেশের মিডিয়াগুলো যেন নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছে। নানান অজুহাতে দায়সারা গোছের কিছু হেলাফেলা অনুষ্ঠান দিয়ে টিভির পর্দায় আলো জ্বালিয়ে রাখছে। এত বড় একটা ঈদ গেলো নেই ঈদের কোন অনুষ্ঠান। যা দেখানো হচ্ছে তা অরুচিকর।

দেশে যখন আকাল আসে প্রাকৃতিক বিপর্যয় নামে মহামারী দেখা দেয় তখন ধর্মীয় আচার নিষ্ঠায় মানুষ মনোনিবেশ করেন। দেশে আকাল নেমেছে। কিন্তু আমাদের সংস্কৃতির মাঝে যেন ধর্ম নেই। ধর্মীয় শিষ্টাচার এখানে একেবারেই বিবর্জিত। আর ইসলাম সে তো এক ফোবিয়া। এই ফোবিয়ায় আক্রান্ত হয়ে আমরা এতই নিচে নেমেছি যে আল্লাহর নাম নিতেও আমাদের কুণ্ঠাবোধ করি। অথচ বাংলাদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ। কিন্তু আমাদের এই ধর্মে যেন কোন সংস্কৃতি নেই। কেন আমাদের এত হীনমন্যতা? পুরো রমজান মাস গেলো। দেশের কোন টিভি চ্যানেলে ধর্মীয় আচার আচরণ নিয়ে অথবা বিপদে আপদে আল্লাহর জিকির করতে হবে এই রকম কোন গুরুত্বপূর্ণ কথায় সাজানো কোন অনুষ্ঠান আমাদের টিভিকর্তারা দেখাতে পারেননি। এযাবৎ দেখেছি শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখার সাথে সাথে বীরকবি কাজী নজরুল ইসলামের সেই বিখ্যাত গান” রমজানের ঐ রোজার শেষে ” গানটি সব চ্যানেলে বাজানো হত। এই গানের সাথে সাথে সারা বাংলাদেশ ঈদের আনন্দে মাতোয়ারা হতো। কিন্তু এবছর এ গানটিও নেই। আর্কাইভ থেকে এ গানটিও উধাও হয়ে গিয়েছে। কলকাতায় ইদ মোবারক ইদ মোবারক গানের সুমিষ্ট সুরে সিনেমার গান হতে পারে আর আমাদের চলচ্চিত্রের কোথাও ঈদের সিনেমাতেও ঈদের আমেজ নেই। তাহলে আমরা কি কেবল নায়ক নায়িকার নির্লজ্জ প্রেমরসায়নের সংস্কৃতিই লালন করি?
অথচ আমাদের এই বন্দিদশায় দেশের মিডিয়াগুলো বিনোদনের এক বিরাট মাধ্যম হতে পারত। আমাদের দেশের পণ্ডিতদের অভাব নেই। এই পণ্ডিতদের রাজনৈতিক কচলাকচলি ছাড়া আমাদের যেন আর কিছুই নেই।
বুঝলাম। এখন করোনাকাল যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের মিডিয়ার ইতিহাস ত খুব সংক্ষিপ্ত নয়। দীর্ঘদিন যাবত আমাদের মিডিয়ার কাজ হচ্ছে। দেশে আর্কাইভ সেল আছে। পুরাতন অনুষ্ঠানগুলো থেকে যেগুলো খুবই জনপ্রিয় ছিল সেগুলো দেখানো যেতো। তাহলে আমাদের ধরে নিতে আমরা ওয়ানটাইম সংস্কৃতির চর্চা করি?

মামুন সুলতানঃ কবি, প্রকাশক।

সম্পাদক: শাহ সুহেল আহমদ
প্যারিস ফ্রান্স থেকে প্রচারিত

সার্চ/খুঁজুন: