চঞ্চল মাহমুদ ফুলর, সিলেট থেকে:
হিল্লা-শরার ফতোয়া মানা না মানাকে কেন্দ্র করে মসজিদ প্রাঙ্গনে মুসল্লিদের দু’পক্ষের তুমুল সংঘর্ষে উভয়পক্ষে ১১ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ৩ জনের অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় তাদেরকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে গত শুক্রবার সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলা জকিগঞ্জের বারোঠাকুরী ইউনিয়নের উত্তরবাগ নোয়াগ্রামে। এ ব্যাপারে জকিগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে পুলিশ এখনো কোন আসামীকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
থানা সুত্র জানা গেছে, উত্তরবাগ নোয়াগ্রামের মাহতাব উদ্দিনের ছেলে মুন্না আহমদ ময়না বিগত ২ বছর পূর্বে সাংসারিক বনিবনা না হওয়ায় উভয়পক্ষের সম্মতিতে তার বিবাহিত স্ত্রীকে তালাক দেন। গত ২২ জুন তালাক দেয়া স্ত্রীকে মুন্না আহমদ আকদ্-এর মাধ্যমে নিজের ঘরে তুলে পুনরায় দাম্পত্য জীবন শুরু করেন। দ্বিতীয়বার আকদ্ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন স্থানীয় জামে মসজিদের ইমাম মোঃ এনামুল হক। কিন্তু বিষয়টি ইসলামী অনুশাসন ও শরীয়ত পরিপন্থী হওয়ায় এলাকায় এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৬ জুন শুক্রবার জুম্মার নামাজ শেষে নোয়াগ্রাম জামে মসজিদের মোতওয়াল্লি মোস্তফা আহমদের উপস্থিতিতে মসজিদ প্রাঙ্গনেই আলোচনা শুরু হয়। হিল্লা-শরা ছাড়া পুনরায় তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীকে ঘরে তুলে নেয়া ‘ইসলামী অনুশাসন বিরোধী এবং শরীয়ত পরিপন্থী’ এ ধরণের কথাবার্তা শুরু হলে মুন্না আহমদের পক্ষের লোকজন উত্তেজিত হয়ে উঠেন। কিন্তু মুসল্লীরা এ বিষয়ে একজন বিজ্ঞ আলেম বা মুফতির নিকট থেকে ফতোয়া গ্রহণের অনুরোধ জানালে পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়ে উঠে। উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের একপর্যায়ে মুন্না আহমদের পিতা মাহতাব উদ্দিনের নির্দেশে মসজিদের গেইট বন্ধ করে মুন্না আহমদের পক্ষের লোকজন নিকটবর্তী বাড়ি থেকে দা, ডেগার, ছুরি-চাকু, লোহার রড, কাঠের রুল, লাঠিসোটা ইত্যাদি দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে মসজিদ প্রাঙ্গনেই মুসল্লিদের উপর হামলা চালান। এতে উভয়পক্ষে সংঘর্ষ শুরু হলে মুসল্লি জমির উদ্দিন, ছায়াদ আহমদ, নাসির উদ্দিন, আব্দুস সালাম, হেলাল আহমদ, তছির উদ্দিনসহ আরো ৩/৪ জন গুরুতর আহত হন। পক্ষান্তরে খালি হাতে মুসল্লিদের পাল্টা হামলায় মুন্না আহমদের পক্ষের মাহতাব উদ্দিন, আকদ্দছ আলী কিছুটা আহত হন। মুসল্লি জমির উদ্দিন, ছায়াদ আহমদ, নাসির উদ্দিনের অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় তাদেরকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অন্য আহতদের জকিগঞ্জ সরকারি হাসপাতালে ভর্তি ও প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়।
এ ব্যাপারে জমির উদ্দিন বাদী হয়ে একই গ্রামের মৃত জুবই মিয়ার ছেলে মাহতাব উদ্দিনকে হুকুমদায়ীসহ শফিকুর রহমান, আকদ্দছ আলী (আখই মিয়া), মাহতাব উদ্দিনের ছেলে সোহেল আহমদ, জুয়েল আহমদ তোতা, মুন্না আহমদ ময়না, সেবুল আহমদ, আখই মিয়ার ছেলে জাফর আহমদ, শাকিল আহমদ, শফিকুর রহমানের ছেলে কামরুল ইসলাম ও আব্দুস সবুরসহ ১১ জনকে আসামী করে জকিগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন (মামলা নং-২৩/১৪৯, তারিখঃ ২৮/০৬/২০২০ খ্রিঃ)। পুলিশী তদন্ত শেষে এজাহার গ্রহণপূর্বক এফআইআর করেছে। পক্ষান্তরে মাহতাব উদ্দিনও থানায় একটি এজাহার দাখিল করেছেন। কিন্তু ঘটনা সম্পর্কে পুলিশী তদন্ত অব্যাহত থাকায় এখনও তা রেকর্ডভ‚ক্ত হয়নি।
এদিকে, এ প্রতিবেদকের সাথে জকিগঞ্জ থানার ওসির আলাপ হলে তিনি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত এবং মামলা গ্রহণের কথা উল্লেখ করেন। আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশ তৎপর রয়েছে বলেও তিনি জানান। মামলার বাদী জমির উদ্দিন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেফতারের জোর দাবি জানিয়ে বলেন, ‘হামলাকারীরা উগ্র মতবাদে বিশ্বাসী এবং ওরা এলাকায় সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত। তাই ওরা আমার মতো নিরীহ মুসল্লীদের উপর ন্যাক্কারজনকভাবে হামলা করতে পেরেছে।’ মসজিদের পবিত্র প্রাঙ্গনে মুসল্লিদের উপর হামলার ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।