শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

Sex Cams

চীন-ভারতের  সীমান্ত উত্তেজনা এবং বাংলাদেশের অবস্থান




তানভীর আহমদ তোহা 

কিছু দিন আগে চীন-ভারত সীমান্তে বিগত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রেকর্ডসংখ্যাক ভারতীয় সেনারা নিহত হয়;অপরদিকে চীনা পক্ষের কতোজন সেনা হতাহত হয় সে সম্পর্কে এখন প্রর্যন্ত কোন নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায় নি  । ভারতের বিতর্কিত গালওয়ান উপত্যাকায় দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের অস্ত্রহীন সীমান্ত যুদ্ধের উত্তেজনা  শুধুমাত্র চীন-ভারতের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে এখন পুরো দক্ষিন এশিয়ার আঞ্চলিক রাজনীতিতে তীব্রভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। চীন-ভারতের সীমান্ত সংঘর্ষ পরবর্তী পরিস্থিতিতে দক্ষিন এশিয়ার দেশগুলোকে নিজের পক্ষে টানতে চীন এবং ভারত সর্বাত্মক তৎপরতা শুরু করছে। তবে বাংলাদেশ বাদে  ভারতের বেশীরভাগ প্রতিবেশী রাষ্ট্রই এখন চীনের দিকে ঝুকে পড়ছে। বর্তমান সরকার অতিমাত্রায় ভারতের দিকে ঝুকে থাকলেও চীন বিভিন্ন কৌশলে প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছে বাংলাদেশকে নিজেদের বলয়ে নিতে। তবে বাংলাদেশ  ভৌগোলিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে থাকায় চীন-ভারতের বর্তমান উত্তেজনায়  উভয় দেশ থেকে বাংলাদেশ নিজেদের দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত  ইস্যুগুলো সমাধান করে নিতে পারে।  কিন্তু, এক্ষেত্রে ভারতের সীমাহীন তাবেদারী করা বর্তমান হাসিনা সরকার বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ কতোটুকু আদায় করে নিতে পারে তা নিয়ে যথেষ্ট  সংশয় রয়েছে বাংলাদেশপন্থী মানুষদের মনে।
বাংলাদেশের সাথে চীনের সম্পর্ক মূলত রাজনীতির চেয়ে অর্থনৈতিক প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে সুসংহত হয়েছে। অবশ্য বর্হিবিশ্বে চীন এখন তার প্রভাব বৃদ্ধি করার জন্য ব্যাপক অর্থনৈতিক কর্মসূচী  নিয়ে হাটছে । যেখানে পরাশক্তি আমেরিকা প্রধানত সামরিক কর্মসূচীকে সামনে রেখেই অন্য দেশের উপর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে সেখানে চীন ব্যাবসা-বাণিজ্যকে হাতিয়ার বানিয়ে বিভিন্ন রাষ্ট্রগুলোর উপর নিজেদের প্রভাব বজায় রাখার চেষ্টা করছে।
 ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়া চীন এখন বাংলাদেশের প্রধান উন্নয়ন সহযোগী রাষ্ট্র। চীনের দীর্ঘসময়কার মিত্র পাকিস্তানকে বাদ দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির সাথে চীনের অর্থনৈতিক সম্পর্ক গত দুই দশক যাবত এরাবিয়ান হর্সের গতিতে চলছে। এই দুই দশকের ভেতরেই  চীন বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় বাণিজ্য অংশীদার হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। ২০১৫ সালে চীন বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় বাণিজ্য অংশীদার হয়ে ওঠে।  ভারত যে অবস্থান বিগত ৪০ বছর যাবত ধরেছিল তা এখন চীনের দখলে। বর্তমানে বাংলাদেশের মোট আমদানির এখন ৩৪ শতাংশ আসে চীন থেকে।
চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের সদস্য হওয়ার পর থেকেই মূলত বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে চীনা বিনিয়োগের প্রবাহ সবচেয়ে বেশী বেড়েছে।  ২০১৬  সালে চীনা রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং বাংলাদেশ  সফরকালে ২৪ বিলিয়ন বা দুই হাজার চারশো কোটি ডলারের সাহায্য দেয়ার কথা ঘোষণা করেন।২০১৬ সালের চীনা রাষ্ট্রপতির এই সফরের পর থেকে মূলত বাংলাদেশ ও চীনের সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হয়। চীনের সাথে বাংলাদেশে শুধুমাত্র বাণিজ্যিক সম্পর্কই বাড়ছে তা নয়, সামরিক ঘনিষ্ঠতাও বেড়েছে অতীতের যেকোন সময়ের চেয়ে।
পাকিস্তানের পরই বাংলাদেশ এখন চীনের অস্রবিক্রির দ্বিতীয়  উৎস।  চীনের সমস্ত অস্ত্র বিক্রির ২০ শতাংশই বাংলাদেশেই এখন ক্রয় করে থাকে। ইতিমধ্যেই  বেইজিং ঢাকাকে পাঁচটি সামুদ্রিক টহল জাহাজ, দুটি সাবমেরিন, ১৬ টি যুদ্ধবিমান এবং ৪৪ টি ট্যাঙ্ক, পাশাপাশি অ্যান্টি-শিপ এবং ভূপৃষ্ঠ থেকে বায়ু ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করেছে।  সম্প্রতি, ২০১৭ সালে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ন্যূনতম দামে দুটি চীনা সাবমেরিন সরবরাহ করেছিল।ঢাকা  বেইজিং থেকে সাবমেরিনগুলো ক্রয় করার ফলে নয়া দিল্লি তখন দারুন অসন্তুষ্ট হয়েছিল বাংলাদেশের উপর। (তথ্যসূত্র; দ্যা ডিপ্লোমেট; ১২জুলাই ২০১৯)
চীন-ভারত কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বিতা যত তীব্র হবে  উভয় দেশই ভূরাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে  অবস্থিত বাংলাদেশকে তাদের নিজস্ব কক্ষপথে নিয়ে আসার চেষ্টা ততো দ্বিগুণ করবে।  চীন, ক্রমবর্ধমান বিনিয়োগের সাথে সাথে  বাংলাদেশ থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলার আমদানিও বাড়াতে  পারে, যা বাংলাদেশকে রফতানিকে বৈচিত্র্যময় করতে ব্যাপকভাবে সহায়তা করবে এবং এর ফলে সামনের দিনগুলোতে  বাংলাদেশের  অর্থনৈতিক ভিত্তি কিছুটা মজবুত হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন  ।
এদিকে ভারতের পক্ষ থেকে,  বাংলাদেশের সাথে কূটনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ককে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। ভারত চীনের মতো বাংলাদেশকে বড় বিনিয়োগ এবং ব্যানিজ্য সুবিধা দেওয়ার সক্ষমতা কিংবা ইচ্ছা না থাকলেও বাংলাদেশের ভেতরে  চলমান ” অসৎ” রাজনৈতিক তৎপরতা আরও বৃদ্বি করে তারা নিজেদের  ফায়দা হাসিলের চেষ্টা  করতে পারে। বর্তমানে ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক এখন অনেকটাই একতরফা হয়ে গেছে বলে অনেকে মনে করেন। বিশেষজ্ঞরা  মনে করছেন যে, বাংলাদেশ ভারতের স্বার্থকে যতটা প্রাধান্য দিচ্ছে, ভারত বাংলাদেশের স্বার্থকে ততখানি মূল্যায়ন করেনি৷অথচ দুই রাষ্ট্রের সম্পর্ককে টেকসই করতে হলে অবশ্যই একটা মর্যাদাপূর্ন সম্পর্ক জরুরি।দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সেই সম্পর্ক স্থাপন করতে ভারত কখনই আন্তরিক ছিলো না! স্বাধীনতার পর থেকে প্রতিবেশী দেশ হিসাবে ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কের পরিক্রমা যত বাড়ছে,   ভারতের নিকট বাংলাদেশের নায্য হিস্যার পরিমাণ ঠিক ততো পরিমানেও বাড়ছে। বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর থেকে ভারতকে শুধু দিয়েই যাচ্ছে।অন্যদিকে, ভারত বাংলাদেশকে শুধুমাত্র মুখে বড় বড় বুলি আওড়িয়ে এবং বাংলাদেশের মধ্যে বিভক্তি টেনে তার স্বার্থ হাসিল করার চেষ্টায়  আছে।  এখন প্রর্যন্ত ভারত বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে  তিস্তার পানি চুক্তি করা থেকে নিজেকে সরিয়ে রেখেছে এবং শুষ্ক মওসুমে  চুক্তি মোতাবেক গঙ্গা নদীর  পানির নায্য হিস্যা থেকে বাংলাদেশকে প্রতিনিয়ত বঞ্চিত করে চলছে ভারত। তাছাড়া দুই দেশের মধ্যে রয়েছে  বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি।কিছুদিন আগে বানিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশী জাতীয় সংসদে বলেছেন,বিগত ২০১৭-২০১৮ বছরে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য  ঘাটতির পরিমাণ ৭ হাজার ৭৪৮.২ মিলিয়ন ডলার। ( তথ্যসুত্র : দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন ;১৭ জুলাই ২০২০)
সিপিডির সম্মানিত ফেলো মুস্তাফিজুর রহমান ভারত -বাংলাদেশের বানিজ্য ঘাটতি সম্পর্কে বলেন,  “ভারতের বর্ধমান আমদানি বাজারের সুবিধা ঠিকমতো নিতে পারছে না বাংলাদেশ। ২০১৮ সালে ভারতের মোট আমদানি ছিল ৪০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি। ভারত বিশ্ববাজার থেকে অনেক পণ্য কিনছে, কিন্তু বাংলাদেশ থেকে নয়। একই জাতের পণ্য বিশ্ববাজারে পাঠাচ্ছে বাংলাদেশ, কিন্তু ভারতে নয়। নীতিনির্ধারকদের যথাযথ নীতির মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়ানোর পথে বাধা অবশ্যই দূর করার ব্যবস্থা করতে হবে”। (  তথ্য সূত্রঃ দৈনিক কালের কন্ঠ;২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯)
এভাবেই ভারত বাংলাদেশের জনগণকে প্রতিনিয়ত তাদের ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত করে চলছে। এছাড়াও,  ভারত প্রায় প্রতিদিনই নজিরবিহীনভাবে সীমান্তে বাংলাদেশী বেসামরিক মানুষকে গুলি করে হত্যা করছে।ভারত যেভাবে প্রতিনিয়ত সীমান্তে নিরীহ বাংলাদেশীকে গুলি করে হত্যা করছে তা প্রতিবেশীসুলভ  আচরন তো নয়ই, বরং দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করলেও সীমান্তে ধারাবাহিক এমন হত্যাকান্ড ঘটা অস্বাভাবিক । সীমান্ত হত্যা নিয়ে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯ সালের পুরো সময়টায় ভারতের সীমান্তরক্ষা বাহিনী বা বিএসএফ’র হাতে প্রাণ হারিয়েছিলেন ৪৩ জন বাংলাদেশি – যাদের মধ্যে ৩৭ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন গুলিতে, আর বাকি ৬ জনকে নির্যাতন করে মারা হয়।( তথ্যসুত্র :বিবিসি বাংলা; ১ জুলাই ২০২০)
মোটাদাগে,উপরের উল্লেখিত ইস্যুছাড়াও প্রতিনিয়ত ভারত বাংলাদেশের উপর  তাদের আরও অনেক অনায্য চাওয়া চাপিয়ে দিচ্ছে। যেমনঃ সুন্দরবনের নিকটে পরিবেশ বিধ্বংসী  রামপাল বিদুৎ প্রকল্প স্থাপন, বিনা সুল্কে ট্রানজিট নেওয়া এবং ক্যাপাসিটি না থাকা সত্বেও চট্রগ্রাম সমুদ্র বন্দর ব্যবহার করা ইত্যাদি। বাংলাদেশের সাথে ভারতের বর্তমানে যে শুধুমাত্র “নেওয়ার ” সম্পর্ক তৈরী হয়েছে তা সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র বাংলাদেশ  ভোটারদের সমর্থন ছাড়া একটি সরকার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ঠিকে  থাকার কারনে ।ভারত বাংলাদেশের জনগনের সাথে সম্পর্ক না করে শুধুমাত্র একটি বিশেষ দলের সাথে সম্পর্ক করে নিজেদের স্বার্থ খুবই নগ্নভাবে আদায় করে নিচ্ছে। এতে বাংলাদেশের জনগন কি ভাবছে কিংবা তাদের কি ক্ষতি হচ্ছে তা ভারত প্রতিবেশী দেশ হিসাবে মোটেই তোয়াক্কা করছে না।
বাংলদেশে বর্তমান শেখ হাসিনা সরকারও নিজেদের ক্ষমতায় ঠিকে থাকার জন্য ভারতের সকল অনৈতিক এবং অন্যায্য চাওয়াই পুরন করে চলছে।কারন,  বাংলাদেশের উপর ভারতের প্রভাব এবং গোয়েন্দা তৎপরতা এখন অতীতের যেকোন সময়ের চেয়ে বেশী। খোলামেলাভাবে বললে বলতে হয়  , বাংলাদেশের ক্ষমতায় কে আসবে কিংবা যাবে তার অন্যতম নির্ধারক এখন নয়াদিল্লি হয়ে উঠেছে; বাংলাদেশের সাধারণ  জনগনের ভূমিকা এখানে  গৌন হয়ে উঠেছে ।
তাই বর্তমান হাসিনা সরকার সর্বক্ষেত্রেই  কঠোর “ভারত তুষ্টি ” নীতি বজায় রেখে চলছে । তাছাড়া,আমেরিকাসহ পশ্চিমা পরাশক্তিগুলোও এখন  নিজস্ব স্বার্থের কারনে বাংলাদেশকে তারা এখন ভারতের চোখ দিয়েই দেখছে। পাশ্চিমা শক্তিগুলো বাংলাদেশে গনতন্ত্রের অনুপস্থিতি এবং ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলোকে আনুষ্টানিকভাবে নিন্দা করলেও দৃশ্যমান কঠোর কোন সিদ্ধান্তে যাচ্ছে না তাদের মিত্র ভারতের কারনে। এশিয়া  অঞ্চলে  চীনকে মোকাবেলা করার জন্য  পশ্চিমা পরাশক্তিগুলোর ভারতকে খুবই প্রয়োজন। তাই ভারতকে চঠিয়ে বাংলাদেশের ব্যাপারে পশ্চিমা দেশগুলো কোন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে চায় না। বিশ্ব রাজনীতির এই মেরুকরণের সুযোগে শেখ হাসিনা সরকার ভারতকে সন্তুষ্ট করার বিনিময়ে নিজের সকল অগণতান্ত্রিক কাজ খুব  ঝুঁকিহীনভাবে করে যাচ্ছেন । ভারতও বাংলাদেশ সরকারের  বৈধতা সংকটকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের স্বার্থ শতভাগ তুলে নিচ্ছে।
কিন্তু, বিগত কয়েকবছর যাবত বাংলাদেশের মেগা প্রজেক্টগুলোতে সবচেয়ে বেশী বিনিয়োগ  আসছে চীন থেকে। এতে মারাত্মকভাবে অস্বস্তিতে পড়েছে ভারত সরকার। কিছুদিন আগে বির্তকিত গালওয়ান উপত্যকায় ভারত-চীনের সীমান্ত বিরোধের জের ধরে  দক্ষিন এশিয়ার দেশগুলোকে  উভয় দেশই নিজেদের কক্ষ পথে নিতে নতুন এক প্রতিযোগীতা শুরু হয়েছে। চীনের তৎপরতার কারনে বিভিন্ন ইস্যুতে ইতিমধ্যেই নেপাল এবং ভূটান ভারতের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। শ্রিলংকার সাথেও ভারতের কূটনৈতিক  সম্পর্ক একেবারে তলানিতে। আর পাকিস্তানের সাথে তো আজন্ম শত্রুতা চলছেই।উদ্ভুত এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে চীন এবং ভারত উভয় দেশই নিজেদের পক্ষে বাংলাদেশের অবস্থান স্পষ্ট দেখতে চাচ্ছে।এর ফলে দারুণ অস্বস্তিতে পড়েছে বর্তমান শেখ হাসিনা সরকার।
বাংলাদেশকে নিজেদের পক্ষে টানার জন্য উভয় দেশই আপন আপন কৌশল প্রয়োগ করে চলছে।ভারত শুধুমাত্র শেখ হাসিনা সরকারকে ক্ষমতায় রাখার ঠিকাদারি নিয়ে বাংলাদেশকে নিজেদের পক্ষে অবস্থান স্পষ্ট করাতে চাচ্ছে। আর,অন্যদিকে চীন বিভিন্ন অর্থনৈতিক প্যাকেজ নিয়ে বাংলাদেশকে ভারতের বিরুদ্ধে নিজেদের পাশে চাইছে।এই রকম বিশেষ  পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে এখন একটি দেশপ্রেমিক সরকার থাকলে; চীন এবং ভারতের কাছে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ  কৌশলগত অবস্থানের কারনে নিজেদের অমীমাংসিত ইস্যুগুলো বিবদমান  দুই দেশ থেকেই আদায় করে নিতে পারতো।বিশেষ করে, রোহিঙ্গা শরনার্থীদের  স্বদেশে প্রত্যাবর্তন এবং দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতিসহ ইত্যাদি বিষয়গুলো সমাধান করতে পারতো।কিন্তু, বর্তমানে বাংলাদেশ  সরকার চীন  -ভারত ইস্যুতে “শ্যাম রাখি না কুল রাখি” অবস্থায় গিয়ে পৌছেছে। বৈধতা সংকটে থাকা বর্তমান শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় ঠিকে থাকবার জন্য একনিষ্ঠভাবে যেমন ভারতের সমর্থন দরকার ঠিক তেমনি দেশে উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য দরকার ব্যাপক চীনা বিনিয়োগ এবং তাদের  কারিগরি সহযোগিতা। তাছাড়া, বর্তমানে বাংলাদেশে যে দূর্নীতির মহাযজ্ঞ চলছে ; সেই দূনীর্তিবাজদের পেটের খোরাক মিটানোর জন্য বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প দরকার তাদের “বিগ দূর্নীতির” অর্থ সংস্থানের জন্য। সংগত কারনেই প্রশাসন এবং আ’লীগের ভিতরে থাকা দূর্নীতির গডফাদারদের জন্য “চীনা মাখন” অপরিহার্য। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতকে খুশি করার জন্য ইচ্ছা করলেও চীনা বিনিয়োগকে দূরে সরিয়ে দিতে পারবেন না। এই পরিস্থিতিতে  বাংলাদেশে শেখ হাসিনা  নেতৃত্বাধীন সরকার  চীন-ভারতের উত্তেজনার মধ্যে  উভয় দেশ থেকে বাংলাদেশের স্বার্থ  উদ্ধার করতে পারবেন নাকি  অন্য সময়ের মতোই শেখ হাসিনার সরকার শুধুমাত্র নিজেদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ঠিকে থাকার প্রশ্নকে সামনে রেখে সিদ্ধান্ত নিবেন সামনের দিনগুলোতে   তা এখন দেখার বিষয়।
লেখক: কলামিস্ট ও কূটনৈতিক রিপোর্টার- বাংলা টেলিগ্রাম। 

সম্পাদক: শাহ সুহেল আহমদ
প্যারিস ফ্রান্স থেকে প্রচারিত

সার্চ/খুঁজুন: