সোমবার, ২৯ মে ২০২৩ খ্রীষ্টাব্দ | ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

দুদিন ধরে ভারত সীমান্তে পড়ে আছে গুলিবিদ্ধ ২ বাংলাদেশির মরদেহ




সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার ডোনা সীমান্তের নোম্যান্সল্যান্ডে এখনো পড়ে আছে দুই বাংলাদেশির গুলিবিদ্ধ মরদেহ। বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) পর্যন্ত মরদেহ দুটি নোম্যান্সল্যান্ডে পড়ে থাকতে দেখা গেছে বলে সীমান্ত সূত্রে জানা গেছে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে ডোনা সীমান্ত এলাকায় পাহারা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি ও বিএসএফ। সূত্র মতে, বিজিবি-বিএসএফ‘র মধ্যকার  আলোচনা ফলপ্রসূ না হওয়ায় মরদেহ উদ্ধার সম্ভব হয়নি।

গত দুই দিনেও মরদেহ উদ্ধার না হওয়ায় বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন সীমান্ত এলাকার গ্রামগুলোর মানুষ। দুটি বাজারে বিকেলে ও সন্ধ্যায় দুই দফা বিক্ষোভ করে এলাকাবাসী দ্রুত মরদেহ উদ্ধারের আহ্বান জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে যে কোনো মূল্যে লাশ উদ্ধারের দাবি জানিয়েছেন নিহতদের স্বজনরা।

এর আগে গত বুধবার সকাল থেকে দুই জনের গুলিবিদ্ধ মরদেহ ডোনা সীমান্তের ১৩৩১ নম্বর মেইন পিলারের কাছে পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয়রা। সূত্র জানায়, মরদেহ দুটি উদ্ধারের জন্য বিজিবির পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার বিএসএফর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। একই সঙ্গে সীমান্তে হত্যার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানায় বিজিবি। এ নিয়ে বিজিবি ও বিএসএফ‘র মধ্যে বৃহস্পতিবার কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক হয়। সীমান্তে মরদেহ পড়ে থাকলেও বৈঠকে বিএসএফ হত্যাকাণ্ডের দায় নিতে রাজি হয়নি। ভারতীয় কারো হাতে ওই দুই বাংলাদেশি নিহত হয়েছে- এমনটাও মানতে রাজি নয় বিএসএফ।

আর বিজিবি‘র দাবি, গুলিবিদ্ধ মরদেহ দুটি যেহেতু ভারতীয় সীমান্তে পাওয়া গেছে, তাই এর দায় বিএসএফ বা ভারতীয় খাসিয়াদেরই নিতে হবে। এ নিয়ে পরে উভয় দেশের সীমান্তরক্ষীরা তাদের উচ্চ পর্যায়ে বিষয়টি অবগত করেছেন। একটি সূত্র জানায়, সীমান্ত আইন অনুযায়ী, ভারতের অভ্যন্তরে নিহত দুই বাংলাদেশির লাশের ময়নাতদন্ত সেখানকার হাসপাতালে হবে। এরপর পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে মরদেহ হস্তান্তরের কথা।

নিহত কানাইঘাট উপজেলার এড়ালিগুল গ্রামের আব্দুল লতিফের ছেলে আসকর আলী ও একই গ্রামের আব্দুল হান্নানের পুত্র আরিফ হোসেনের স্বজনদের দাবি, মঙ্গলবার বিকেলে দুই জন বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন। এরপর তারা আর বাড়ি ফেরেননি। স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে তারা জানতে পেরেছেন, মঙ্গলবার রাতে ডোনা সীমান্ত দিয়ে দুই জন ভারতের মেঘালয় রাজ্যের উখিয়াং এলাকায় অনুপ্রবেশ করে। এ সময় বিএসএফ’র গুলিতে তারা নিহত হন। পরে তাদের মরদেহ নোম্যান্সল্যান্ডে এনে ফেলে রাখা হয়।

এ বিষয়ে ডোনা সীমান্ত এলাকায় অবস্থানরত ১৯ বিজিবির অধিনায়কসহ দায়িত্বশীল কেউ সংবাদমাধ্যমের কাছে কিছু বলছেন না। তবে স্থানীয় ক্যাম্প সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত প্রথম দফায় পতাকা বৈঠক হয়। এরপর দুপুরে বিরতি দিয়ে আবারও বৈঠক চলে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত। বৈঠকে বিএসএফ হত্যার দায় অস্বীকার করে, মরদেহ দুটো বাংলাদেশের অভ্যন্তরে রয়েছে বলে জানায়। এ জন্য পতাকা বৈঠক অমীমাংসিত অবস্থায় শেষ হয়েছে।

লক্ষ্মীপ্রসাদ ইউপির চেয়ারম্যান ফয়াজ উদ্দিন জানান, দুটো লাশ পড়ে থাকার দৃশ্য অমানবিক। সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ। তারা চেষ্টা করছেন সার্বিক পরিস্থিতি শান্ত রাখতে।

এদিকে সূত্র জানায়, শুক্রবার সকালে বিএসএফকে আবার পতাকা বৈঠকের আহ্বান করা হতে পারে। বিজিবির একজন কর্মকর্তা বলেন, বৈঠকে মরদেহ দুটি যে স্থানে পড়ে আছে, সেই স্থান কোন দেশে পড়েছে তা চিহ্নিত করার সিদ্ধান্ত হয়। মরদেহ ভারতের অভ্যন্তরে থাকলে সে দেশে ময়নাতদন্ত হবে। এরপর আরেক দফা পতাকা বৈঠক হবে। এতে মরদেহ উদ্ধার ও হস্তান্তরে আরও কিছুদিন সময় লাগতে পারে।

এ বিষয়ে কানাইঘাট থানার ওসি মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, মরদেহ দুটি উদ্ধার হলে মানুষের ক্ষোভ কমবে।

সম্পাদক: শাহ সুহেল আহমদ
প্যারিস ফ্রান্স থেকে প্রচারিত

সার্চ/খুঁজুন: