ঢাকা অফিস:
পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি হচ্ছে বলে নিশ্চিত জানতেন আসপিয়া ইসলাম। শারীরিক, লিখিত, মৌখিক ও স্বাস্থ্য- সাত ধাপের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন তিনি। কিন্তু স্থায়ী ঠিকানা না থাকার কারণে পুলিশ ভেরিফিকেশনে আটকে যাওয়ায় তার চাকরি হচ্ছে না। এমন খবরে ভেঙে পড়েছেন তিনি।
এ নিয়ে বরিশাল পুলিশ লাইন্সে বুধবার দীর্ঘক্ষণ ধরনা দিয়ে বাড়িতে ফিরে যান আসপিয়া। পুলিশ লাইন্সের গেট প্রত্যয়ের সামনে অপেক্ষারত তার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইতোমধ্যে ভাইরাল হয়েছে।
তবে চাকরি না হওয়ার বিষয়টিকে পুলিশ আবেদনকারীর সরলতা ও সঠিকভাবে খেয়াল না করে আবেদন করাকে দায়ী করেছে।
তরুণী আসপিয়া ইসলাম জানান, সরকারি হিজলা ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০২০ সালে এইচএসসি পাশ করেছেন তিনি। বরিশাল জেলায় পুলিশ কনস্টেবল পদে অনলাইনে আবেদন করলে গত ১৪, ১৫ ও ১৬ নভেম্বর জেলা পুলিশ লাইন্সে শারীরিক যোগ্যতা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৭ নভেম্বর লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। মৌখিক পরীক্ষার ফলাফলে মেধা তালিকায় পঞ্চম হন।
২৬ নভেম্বর জেলা পুলিশ লাইনে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হন আসপিয়া। সর্বশেষ ২৯ নভেম্বর ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইন সেন্ট্রাল হাসপাতালে চূড়ান্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়। সেখানেও উত্তীর্ণ হন এই তরুণী।
এদিকে চূড়ান্ত নিয়োগের আগে পুলিশ ভেরিফিকেশনে আসপিয়া ও তার পরিবারকে ভূমিহীন উল্লেখ করা হয়। বুধবার জেলা পুলিশ সুপার বরাবর প্রতিবেদন জমা দেন হিজলা থানার উপ-পরিদর্শক মো. আব্বাস উদ্দিন। স্থায়ী ঠিকানা না থাকায় আসপিয়ার চাকরি হবে না বলে জানিয়েও দেওয়া হয়।
তবে আসপিয়া বলেন, সাত ধাপে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে চূড়ান্ত নিয়োগের অপেক্ষায় ছিলেন তিনি। এমন সময় পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, চাকরি পেতে হলে নিজেদের জমিসহ ঘর দেখাতে হবে। কিন্তু তাদের কোনো জমি নেই। একজনের জমিতে বছরের পর বছর ধরে ভাড়াটে হিসাবে বসবাস করছেন। কিন্তু তার ভোটার আইডি, জন্মনিবন্ধন হিজলার বড়জালিয়া ইউপিতেই।
আসপিয়া কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, জমি নেই এজন্য চাকরি হবে না, এটা কোনোভাবেই বিশ্বাস হচ্ছে না। যে কারণে বুধবার রেঞ্জ ডিআইজির সঙ্গে বরিশাল পুলিশ লাইন্সে দেখা করে মৌখিকভাবে আবেদন জানিয়েছেন। কিন্তু ডিআইজি তাকে আশ্বস্ত করতে পারেননি বলে হতাশ আসপিয়া।
জানা গেছে, আসপিয়ার বাবা শফিকুল ইসলাম প্রায় তিন দশক আগে কাজের সন্ধানে বরিশালের হিজলা উপজেলায় আসেন। তবে তার দাদা বাড়ি ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায়। হিজলায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন শফিকুল পরিবার।
হিজলা উপজেলায় জন্ম হয় আসপিয়া ইসলামসহ তিন মেয়ে এবং এক ছেলের। ২০১৯ সালে শফিকুল ইসলামের মৃত্যু হয়। তার পরিবারের সদস্যরা হিজলা উপজেলার খুন্না-গোবিন্দপুর এলাকার মেজবাহ উদ্দিন অপু চৌধুরীর বাড়িতে ভাড়া থাকেন।
পুলিশ ভেরিফিকেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত হিজলা থানার এসআই (উপ-পরির্দশক) আব্বাস উদ্দিন বলেন, আসপিয়া ও তার পরিবারের সদস্যরা হিজলার স্থায়ী বাসিন্দা নন। তাদের দাদার বাড়ি ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায়। তিনি যেভাবে পেয়েছেন সেভাবে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন।
তবে হিজলার বাসিন্দা আব্দুল হামিদ জানান, আসপিয়া তার দুঃসম্পর্কের ভাতিজি। হিজলায় আসপিয়া জন্মেছে। এই পরিবারের দীর্ঘ বছর এখানে বসবাস করেন।
বরিশাল জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) ইকবাল হোছাইন বলেন, চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী যে জেলা থেকে নিয়োগ পরীক্ষা দেবেন সে জেলার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে। আসপিয়ার ক্ষেত্রে স্থায়ী ঠিকানা সঠিক পাওয়া যায়নি।
বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, বিষয়টি তারা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন।
বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি এসএম আক্তারুজ্জামান বলেন, আসপিয়া বরিশালের স্থায়ী ঠিকানা প্রমাণ করতে পারছেন না। বিধি মোতাবেক পুলিশ কাজ করবে। মেয়েটির প্রতি কষ্টবোধ থেকেই যায়।